ডিএ মামলায় এবার নোটিস ধরানো হল রাজ্যের মুখ্য সচিব এবং অর্থ সচিবকে। আর এই নোটিস ধরালো মূল মামলাকারী কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্মেন্ট এমপ্লয়িজ। ২৫ শতাংশ বকেয়া দেওয়ার নির্দেশ কার্যকর হয়নি। একইসঙ্গে মানা হয়নি সুপ্রিম কোর্টের ডেডলাইন। তাই নোটিস পাঠানো হল মূল মামলাকারীদের তরফ থেকে।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ মে ২৫ শতাংশ ডিএ মেটাতে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় কারলের বেঞ্চ। রাজ্যের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি–কে বকেয়া ডিএ ৫০ শতাংশ মিটিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেয় আদালত। সিংভি সমস্যার কথা বলে মামলা পিছোতে চাইলেও সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট নির্দেশ দেয় ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ মেটানোর।
এদিকে রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে বকেয়া এই ডিএ নিয়ে যে পরিসংখ্যান পেশ করে, তাতে ২৫ শতাংশ মানে প্রায় ১০৪০০ কোটি টাকার প্রয়োজন রাজ্যের। এদিকে ডিএ না মেটানোয় মূল মামলাকারীদের তরফে মলয় মুখোপাধ্যায় তাঁর আইনজীবী ফিরদৌস সামিম মারফত ইমেইল করে নোটিস পাঠালেন মুখ্যসচিব ও অর্থসচিবকে। তাঁদের যুক্তি, আদালত অবমাননাকর কাজ করছে রাজ্য। তাই নোটিশ।
প্রসঙ্গত, এই ডিএ মামলা পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারিদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই মামলার রায়ের ওপর তাদের আর্থিক ভবিষ্যৎ অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই, সুপ্রিম কোর্টের প্রতিটি পদক্ষেপ এবং প্রতিটি শুনানি তাদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। সুপ্রিম কোর্ট প্রথমে আদালত রাজ্যকে বলে, ৫০ শতাংশ বকেয়া মহার্ঘভাতা দিতে। কিন্তু তারপর রাজ্যের অনুনয়েই সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, বকেয়া মহার্ঘভাতার ২৫ শতাংশ এখনই দিতে হবে। আর তা মেটাতে হবে ৪ সপ্তাহের মধ্যে, এমনই নির্দেশ ছিল শীর্ষ আদালতের। এই নির্দেশ ছিল রাজ্য সরকারী কর্মিদের জন্য নিঃসন্দেহে এক স্বস্তির ব্যাপার। কারণ, এক্ষেত্রে, ২০০৯–এর পয়লা জুলাই থেকে বকেয়া মহার্ঘভাতা পাওয়া যাবে। তবে এই সময়সীমা পেরিয়ে যেতেই এবার মুখ্যসচিব ও অর্থ সচিবকে নোটিস দিল মূল মামলাকারীরা।
প্রসঙ্গত, ২০১৭–র ৭ সেপ্টেম্বর রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের জন্য ১৫ শতাংশ ডিএ ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর ডিএ মামলায়, ২০১৮ সালের ৩১ অগাস্ট কলকাতা হাইকোর্ট রায় দেয়, ডিএ সরকারি কর্মীদের অধিকার। কীভাবে তা দেওয়া হবে, ২ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করুক স্যাট।২০১৯–এর ২৬ জুলাই, স্যাট–এর তৎকালীন বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগ ও সুরেশ কুমার দাস নির্দেশ দেন, ১ বছরের মধ্যে সরকারি কর্মীদের ডিএ মেটাতে হবে। কিন্তু রাজ্য সরকার তা না দেওয়ায় কর্মচারী সংগঠন আদালত অবমাননার মামলা করে ফের স্যাট–এর দ্বারস্থ হয়।২০১৯–এর অক্টোবরে স্যাট–এ রিভিউ পিটিশন দাখিল করে রাজ্য সরকার। তবে ২০২০–র ৮ জুলাই, রাজ্য সরকারের পিটিশন খারিজ করে স্যাট। এরপর রাজ্য সরকার আবেদন জানায় হাইকোর্টে। এই মামলায় রাজ্য সরকারের আবেদন খারিজ করে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দিতে হবে রাজ্যকে। এরপর, সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার।সেখানেও আপাতত ২৫ শতাংশ ডিএ মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশই দেওয়া হয়।