কসবায় আইন কলেজে ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি। মূল অভিযুক্ত মনোজিত মিশ্র তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত থাকায় চরম অস্বস্তিতে বাংলার শাসক দল। মূল অভিযুক্ত মনোজিত মিশ্রের ফেসবুক প্রোফাইলে লেখা রয়েছে ‘সাংগঠনিক সম্পাদক, দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ’। এছাড়াও একসময় কলেজের টিএমসিপি ইউনিটের ‘প্রেসিডেন্ট’-এর পদেও ছিল সে। তার প্রোফাইল জুড়ে রয়েছে বহু টিএমসি নেতা, বিভিন্ন দলীয় অনুষ্ঠান, সমাজসেবার ছবি।
তবে এই ঘটনার সময় কলেজের নিরাপত্তা রক্ষীরা কোথায় ছিলেন, সেই নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এবার এই ঘটনা নিয়ে মুখ খুললেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনার তীব্র নিন্দা করার পাশাপাশি তিনি এও জানিয়ে দিলেন যে, ‘কলেজে কলেজে পুলিশ বসানো সম্ভব নয়।‘ পুরুষদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘নারীদের রক্ষা করার দায়িত্ব পুরুষ সহকর্মীদেরই। কলেজে কলেজে পুলিশ বসানো যায় না। কিছু বিকৃত মনের লোক এই ধরনের অপরাধ করে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।‘ তিনি আরও বলেন, ‘মেয়েদেরও উচিত এই ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো।‘ তবে এও বলেন যে, ‘তাঁরা কাদের সঙ্গে ঘুরছেন, সেই বিষয়েও সতর্ক থাকা উচিত।‘ এরই পাশাাপশি এই ঘটনায় খুঁটিয়ে তদন্তের দাবি জানান কল্যাণ। সঙ্গে এও বলেন, ‘সরকারি কলেজ হলেও, কর্তৃপক্ষের দিক থেকে কোনও গাফিলতি থাকলে সেটাও খতিয়ে দেখা উচিত।‘
সূত্র অনুযায়ী, বুধবার সন্ধ্যায় কসবার আইন কলেজে নির্যাতিতা ছাত্রী প্রথমে ইউনিয়ন রুমের পাশে থাকা একটি টয়লেটে যান। সেখানেই প্রথম হামলা চালানো হয় তাঁর উপর। পরে তাঁকে পাশের ঘরে টেনে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা। মনোজিত ছাড়াও অভিযুক্তদের মধ্যে বাকি দু’জন হলেন জায়েব আহমেদ ও প্রমিত মুখোপাধ্যায়। মনোজিত এই কলেজের প্রাক্তনী। তবে সে নিয়মিত কলেজে যাতায়াত করত। কলেজ পরিচালন কমিটির সুপারিশে তাঁকে অস্থায়ী কর্মী হিসাবেও নিয়োগ করা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। ফলে সব মিলিযে কলেজে অত্যন্ত পরিচিত মুখ এই মনোজিত। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে কসবা থানার পুলিশ। তালবাগান ক্রসিং থেকে দু’জনকে এবং একজনকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।তিনজনের মোবাইল ফোনও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
এদিকে এই ঘটনায় তদন্তে নেমেছে ফরেন্সিক টিমও। ঘটনাস্থল কর্ডন করে দেওয়া হয়েছে। সংগ্রহ করা হয় নমুনা। খতিয়ে দেখা হচ্ছে সিসিটিভি ফুটেজও। জানা গিয়েছে, অভিযুক্তদের মোবাইলের লোকেশন ডেটা ও কল রেকর্ড বিশ্লেষণ করা হবে। ঘটনার সময় কলেজে কারা ছিলেন, নিরাপত্তার দায়িত্বে কারা ছিলেন— এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ। কসবা থানার তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, প্রয়োজনে কলেজ কর্তৃপক্ষকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।