সাউথ ক্যালকাটা ল‘কলেজের প্রাক্তনী তথা বর্তমান চুক্তিভিত্তিক কর্মী মনোজিত মিশ্র। আর এই মনোজিত কলেজে বেশ প্রভাবশালী হিসেবেই পরিচিত ছিল। কেবলমাত্র এই কাণ্ড নয়, এর আগেও একাধিকবার যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠে মনোজিতের বিরুদ্ধে।
সাউথ ক্যালকাটা ল‘কলেজে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে, বিভিন্ন দেওয়ালে নীল–সাদা রঙে লেখা ‘টিম এমএম‘। কোথাও আবার চোখে পড়বে ‘মনোজিৎ দাদা তুমি আমাদের হৃদয়ে আছ‘। সব জায়গাতেই লেখা, ‘দক্ষিণ কলকাতা তৃণমূল কংগ্রেস‘। খুব কাছের মানুষের কাছে এই মনোজিৎ পরিচিত ‘ম্যাঙ্গো‘ নামে। এ ছাড়াও কলেজ পড়ুয়ারা এও জানান, ভর্তি থেকে শুরু করে কলেজ ইউনিয়নের কে কোন পদে বসবেন, সবই চলত মনোজিতের ইচ্ছের উপর। এমনকী, অনেক সময়েই কোন শিক্ষক কখন–কোন ক্লাস নেবে, তা–ও অনেক সময়ে ঠিক করে দিত এই ম্যাঙ্গোই। কলেজের কর্মী থেকে অধ্যক্ষ, সবাই নাকি থাকত তার হাতের মুঠোয়। কোন শিক্ষককে ঘেরাও করা হবে, কার গাড়ি ভাঙচুর করা হবে, তা–ও হত ম্যাঙ্গোর ইশারাতেই। এমনটাই জানা গিয়েছে কলেজ পড়ুয়াদের সূত্রে।
শুধু তাই নয়, কালীঘাট মন্দির চত্বরে বাড়ি মনোজিৎ মিশ্রর। তার দাপটে নাকি পাড়ার লোকও সিঁটিয়ে থাকেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালে প্রথমবার কলেজে ভর্তি হয়েছিল সে। এক বছরের মধ্যে কলেজে ছুরি মারার অভিযোগে থানায় অভিযোগ দায়ের হয় তার নামে। তারপর দীর্ঘ কয়েক বছর কলেজ যায়নি সে। এরপর ২০১৪ সালে তাকে ডিসকলেজিয়েট করে দেওয়া হয়। এদিকে এও জানা যাচ্ছে, প্রথম থেকেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদ করতো এই মনোজিৎ। ছিল ইউনিট প্রেসিডেন্টও। তারপর ২০১৭ সালে ফের সাউথ ক্যালকাটা ল‘কলেজে ভর্তি হয় ম্যাঙ্গো। সে বছরই সিসিটিভি ভাঙচুরের ঘটনায় নাম জড়ায় তার। একাধিকবার সাসপেন্ডও করা হয় মনোজিৎকে। সূত্রের খবর, ওই কলেজের প্রয়াত প্রিন্সিপাল দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তারও করা হয় তাকে। ২০২১ সালে পাশ করলেও কলেজ ছেড়ে যায়নি। একাধিক ঝামেলা–গোলমালে নাম জড়িয়েছে তার। এই কলেজে একচ্ছত্র ক্ষমতা দখল করে বসেছিল সে। তৃণমূলের প্রথম সারির নেতাদের সঙ্গে তার ছবির জেরে চমকে রাখত জুনিয়রদের। কলেজ এবং বাইরের একাধিক তরুণীকে হেনস্থা ও উত্যক্ত করার অভিযোগও রয়েছে এই মনোজিতে নামে। এহেন দাপুটে ছাত্রনেতা সম্পর্কে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেন, ‘২০১৯ সালে দক্ষিণ কলকাতা জেলার সবচেয়ে নিম্ন যে পদ, যে সংগঠন থেকে ছাত্রনেতারা উঠে আসেন, মনোজিতকে সেই সংগঠনের সম্পাদক করা হয়েছিল। আমাদের ব্যর্থতা যে আমরা জ্যোতিষবিদ্যা জানি না। তাই ২০২৫ সালে তিনি কিছু করবেন কি না, সত্যিই যদি তিনি কিছু করে থাকেন, তা আমাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব হয়নি।‘ শশী পাঁজা বলেন, ‘কোনও বাঁদরামি সহ্য করা হবে না‘। কুণাল ঘোষ বলেন, ‘মেরে পিঠের চামড়া গুটিয়ে নেওয়া উচিত‘। আর এখানেই বিরোধী শিবিরের প্রশ্ন, ২০১২–১৩ সাল থেকে মনোজিতের ‘বাঁদরামোগুলি‘ কি জানতো না তৃণমূল ছাত্র পরিষদ, নাকি জেনেও না জানার ভান করে বসেছিল!