পুলিশের জেরায় মনোজিতের দুই শাগরেদ প্রমিত ও জায়েব বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি দিয়েছে। স্বীকারোক্তিতে তারা জানিয়েছে, পরিকল্পনা করেই ছাত্রীর উপর যৌন নির্যাতন। ঘটনার দিন দুয়েক আগেই পরিকল্পনা করে মনোজিৎ। পাশাপাশি ওই ছাত্রীর সঙ্গে যে সে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়, সেকথা দুদিন আগে নিজের দুই শাগরেদকে জানায় মনোজিৎ।ছাত্রী রাজি না হলে যে সে জোর করেই তা করবে, সেটাও প্ল্যান করে রেখেছিল মনোজিৎ। ইতিমধ্যে তার বিভিন্ন বিকৃত কামের উদাহরণও সামনে এসেছে। এই স্বীকারোক্তি নিঃসন্দেহে এই তদন্তের ক্ষেত্রে সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।পাশাাপশি পুলিশের তরফ থেকে এও জানানো হয় যে, একা মনোজিতের মোবাইল নয়, দক্ষিণ কলকাতা আইন কলেজে ছাত্রীর নির্যাতনের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছিল দু–দু’টিমোবাইলে।কসবা ল কলেজে ছাত্রী নির্যাতন কাণ্ডে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য এবার হাতে পেল কলকাতা পুলিশ।
এদিকে সোমবার কসবা কাণ্ডের জেরে কলেজের অস্থায়ী কর্মীর পদ থেকে বরখাস্ত করা হল মনোজিৎ মিশ্রকে। অভিযুক্ত দুই ছাত্রকেও বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষাদপ্তর। ইতিমধ্যে তিনজনই গ্রেপ্তার হয়েছে।
এদিকে তদন্তের অগ্রগতির সঙ্গে এও জানা গেছে, কসবার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র কলেজে নির্যাতিতা তরুণীকে প্রথম দিন থেকেই টার্গেট করেছিল। ঘটনাটি নিছক আকস্মিক নয়, বরং এটি ছিল সম্পূর্ণরূপে পূর্বপরিকল্পিত একটি ষড়যন্ত্র, এমনটাই জানা গেল তদন্ত একটু এগোতেই। পাশাপাশি তদন্তকারীরা এও জানান, , মনোজিতের সঙ্গে অন্য অভিযুক্ত প্রতীম মুখোপাধ্যায় আর জায়েবেরও কলেজে ছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে হয়রানির দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। আর এই ঘটনায় ষড়যন্ত্রে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিল কলেজের এক নিরাপত্তারক্ষীও।
এর পাশাপাশি কসবা কাণ্ডে আপাতত তদন্তকারীদের নজর তিন অভিযুক্তের ফোন কলের নথিতে। কারণ, বুধবার সন্ধেয় বা তার আগে–পরে এই তিন জনের ফোন থেকে কাদেরকে ফোন করা হয়েছিল বা কতক্ষণ কথা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে চাইছেন তাঁরা। এ ব্যাপারে আপাতত সংশ্লিষ্ট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার কাছে ফোন কলের বিস্তারিত নথি চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। এই নথি হাতে এলে কসবাকাণ্ডের তদন্ত অনেকটা এগিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
এর পাশাাপাশি কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল‘ কলেজের নির্যাতিতার দ্বিতীয় মেডিকোলজিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্টও ভয়ংকর। কারণ, বিতর্ক এড়াতে এবার কলকাতা মেডিকেল কলেজের ফরেন্সিক মেডিসিন এবং স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞকে দিয়ে মেডিকোলজিজ্যাল টেস্ট করা হয়। সেখানে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে বায়োকেমিক্যাল টেস্টের জন্য ফের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। নির্যাতিতার নখ এবং মাথার বিভিন্ন জায়গারও পরীক্ষা করা হয়।এই দ্বিতীয় মেডিকোলজিক্যাল পরীক্ষাতেও যৌনাঙ্গের ভিতরের অংশে ক্ষত পাওয়া গিয়েছে। বুক ও ঘাড়ের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত রয়েছে। সর্বোপরি যৌন নির্যাতনের যথেষ্ট প্রমাণ মিলেছে নির্যাতিতার শরীর থেকে। এমনটাই খবর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সূত্রে। এর পাশাপাশি, হকি স্টিক, পোশাক সহ বিভিন্ন বাজেয়াপ্ত জিনিস এদিন পাঠানো হয় ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য।