মনোজিতের কর্মকাণ্ড শুধু বুধবারের সন্ধেয় ধর্ষণ নয়, এর আগেও বহু কুকীর্তি করেছে সে। যার শুরু সেই ২০১২–১৩ সাল নাগাদ। তখন কসবা কলেজেই ল পড়তে ভর্তি হয়েছিল৷ কিন্তু, এর মাঝেই একদিন রাতে চেতলা এলাকায় মদ খেয়ে ক্যাটারিংয়ের একটি ছেলের পেটে নাকি ছুরি বসিয়েছিল মনোজিৎ মিশ্র। এরপর থেকে বেশ কয়েক বছর ফেরার ছিল এই মনোজিৎ। সেবার তার বাবার দৌড়াদৌড়িতে পুলিশের খাতায় নামটা নাকি ওঠেনি। কিন্তু, ২০১৭–এ কলকাতায় ফিরে ক্রাইম করার সেই ট্র্যাডিশন ধরে রাখে সে। ৷
২০১৭ সালে রি অ্যাডমিশন নিয়েছিল মনোজিৎ এই কসবা ল কলেজেই।
২০১৭, এপ্রিল, এক ব্যক্তিকে মারধর, কলেজ ক্যাম্পাসে ভাঙচুর
২০১৮ সালে একটি মেয়ের সাথে অভ্যব আচারণ করে সে। ঘটনাচক্রে সেই মেয়েটিই এখন তার গার্লফ্রেন্ড।
২০১৯ এর জুলাই সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজেই এক ছাত্রীর জামা ছিঁড়ে দেওয়ায় অভিযোগ দায়ের
২০১৯ এর ডিসেম্বরে এক বন্ধুর বাড়ি থেকে মিউজিক সিস্টেম,পারফিউম, চশমা চুরি
২০২২ এর মার্চে এক মহিলার শ্লীলতাহানি। ২০২২ সালের এই ঘটনায় এফ আই আর হয় গড়িয়াহাট থানায়। তখনই একবার গ্রেপ্তার হয়েছিল গুণধর।
২০২৪ সালের মে মাসে কলেজের নিরাপত্তারক্ষীকে মারধর, কলেজের সম্পত্তি ধ্বংস
একের পর এক অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কখনও থানা কসবা তো কখনও আনন্দপুর। আবার কখনও টালিগঞ্জ, কখনও কালীঘাট, কখনও হরিদেবপুর৷ থানা আলাদা হলেও অভিযুক্তের নাম এক, মনোজিৎ মিশ্র।
কলেজের ছাত্রছাত্রীদের একাংশ জানিয়েছে, এই ম্যাঙ্গো দা’র ভয়ে নাকি কলেজেও আসতে চাইত না তারা৷ কলেজ ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে পিকনিক, সব জায়গায় মেয়েদের, বিশেষ করে জুনিয়র মেয়েদের টার্গেট করত৷ মুখে বোন–বোন করলেও তার ফেভারিট পিক আপ লাইন হয়ে যেত, ‘আমায় বিয়ে করবি?’ গত ২৫ জুন বিকেলের দিকে নির্যাতিতাকেও এই একই প্রশ্ন করেছিল মনোজিৎ৷কলেজের ছাত্ররা জানিয়েছে যে মনোজিৎ ছাত্রীদের ছবি তুলত, তারপর সেগুলো বিকৃত করে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ছড়িয়ে দিত। ছাত্রীদের যখন তখন কটূক্তি, বডি শেম করা ছিল তার অভ্যেস৷ কলেজের নিরাপত্তারক্ষীরাও তাকে ভয় পেত৷ বেশি কিছু বললেই মনোজিৎ নাকি বলত, উঁচু তলার নেতাদের সঙ্গে তার ওঠাবসা।
মনোজিৎ মিশ্রের ব্যাচমেট তিতাস মান্না তাঁর সতীর্থ সম্পর্কে দিয়েছেন বেশ কিছু বিস্ফোরক তথ্য। তিতাস জানান, ‘একবার নিজের মাথা নিজে ফাটিয়ে মনোজিৎ মিশ্র তার জুনিয়রদের ওপর সেই দোষ চাপিয়ে দেয়। কলেজ ফেস্টের ঘটনা। প্রতিবারই তার আমলে কলেজ ফেস্টে মারামারি হয়েছে। এটাই এম এম–এর স্বভাব।’ কলেজে কান পাতলে সে কথা শোনাও যায়। সেই দুজনকে এখনও হাজিরা দিতে হচ্ছে আদালতে। চলছে কেস। তিতাসের দাবি, ‘‘মনোজিৎ আসলে কলেজে স্ব–ঘোষিত নেতা। পেশি শক্তি দেখিয়ে সবার দাদা হয়েছে সে।’
এদিকে পুলিশ সূত্রে খবর, গত ২৫ জুন ধর্ষণ করার অভিযোগ সে অস্বীকার করেছে৷ সে জানিয়েছে, যা হয়েছিল, উভয়পক্ষের সম্মতিতেই হয়েছিল। এতো কিছুর কোনওটাই নাকি জানতো তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মাথারা বা জানতো না তৃণমূল কংগ্রেসের হাইকম্যান্ডও!