কসবার আইন কলেজে ছাত্রীর গণধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া দুই ছাত্রকে বহিষ্কার করল কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজের অস্থায়ী কর্মী ও তৃণমূলের ছাত্রনেতা ঘটনার মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্রকেও বহিষ্কার করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। জেব আহমেদ ও প্রমিত মুখোপাধ্যায় আর কোনওদিন আর ওই কলেজে পড়তে পারবে না।
কলেজের ভেতরে ছাত্রীর ধর্ষণের ঘটনায় স্পষ্ট হয়েছে ক্যাম্পাসের ভিতর ছাত্র–ছাত্রীদেরনিরাপত্তানিয়েপ্রশ্ন।শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের প্রাক্তন নেতা কি ভাবে তার আধিপত্য বজায় রাখতে পারে তা নিয়েও এদিনের বৈঠকে আলোচনা হয়।
এদিকে সূত্রে খবর, মঙ্গলবার কসবার ওই ল কলেজের পরিচালন কমিটির বেঠক হয়। বৈঠকে ৯ সদস্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ৬ জন। ছিলেন গভর্নিং বডির সভাপতি অশোক দেব। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কসবার ল’কলেজ থেকে বরখাস্ত মনোজিৎ। কলেজ থেকে বহিষ্কার প্রমিত–জায়েবকে। চাকরি থেকে বরখাস্ত মনোজিৎ মিশ্র।সঙ্গে এও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এরপর থেকে দুপুর ২টোর পর কলেজে কেউ ঢুকতে পারবেন না।আর প্রবেশেের সময় ই-কার্ড দেখিয়ে ঢুকতে হবে কলেজে।নিরাপত্তা এজেন্সিকেও শোকজ করা হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে মঙ্গলবার অশোক দেব বলেন, ‘নতুন কোনও নিরাপত্তা সংস্থাকে আমরা নিযুক্ত করব। কলেজ চত্বরের ভিতরে এবং বাইরে সিসিটিভি বসানো হবে। পাশাপাশি, মহিলা সুরক্ষা কর্মীও নিয়োগ করা হবে’। তিনি আরও জানান, বর্তমানে ‘সানফ্লাওয়ার এজেন্সি’ নামে যে সংস্থা কলেজের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। গণধর্ষণের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্রের বার কাউন্সিল রেজিস্ট্রেশন বাতিলের সম্ভাবনাও এর আগে আলোচনা করা হয়েছে। কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি জানান, ‘এই বিষয়ে গভর্নিং বডির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। আমরা সেটাও বিবেচনা করে দেখছি’। দক্ষিণ কলকাতার কলেজে ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলেজের নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এবার গোটা ব্যবস্থায় রদবদলের সিদ্ধান্ত নিল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ঘটনার পর থেকে কাদের ফোন করেন মনোজিৎ বা গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ঘটনা সম্পর্কে কাউকে কিছু মনোজিৎ জানিয়েছিলেন কি না তা জানতে চায় কলকাতা পুলিশ। নম্বর চিহ্নিত করে তাদের পরিচয় জানতে মরিয়া পুলিশ। তদন্তের প্রয়োজনে তাদের কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।আর সেই কারণেই তিন অভিযুক্তর সিডিআর অর্থাৎ কল ডিটেলস রেকর্ডে নজর পুলিশের। আর এই কল ডিটেলস দেখতে গিয়ে তদন্তকারীদের নজরে আসে ঘটনার পরদিন অর্থাৎ ২৬ জুন ভাইস প্রিন্সিপালের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল মনোজিতের কথা। আর এবার পুলিশ মরিয়া ঘটনার রাত থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে পর্যন্ত আর কার কার সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। এরপর সোমবার প্রিন্সিপাল ছাড়া আরও ৬ পড়ুয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। মঙ্গলবারও বেশ কয়েকজনকে তলব করা হয়। তবে এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্রের উত্থান নিয়েও উঠছে একাধিক প্রশ্ন। তৃণমূলের নেতাদের ছত্রছায়াতেই উত্থান হয়েছিল এই মনোজিতের তা একেবারে স্পষ্ট।
অন্যদিকে কসবাকাণ্ডে বিতর্কিত মন্তব্যের ঘটনায় ‘দলের ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য দুঃখিত‘, ক্ষমা চাইলেন মদন মিত্র। পাশাপাশি এও জানা গেছে, চিঠিতে কামারহাটির বিধায়ক লিখেছেন, ‘দলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আজীবন অনুগত থাকব। দলের একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবেই সারা জীবন কাজ করে যাব। আমার কোনও মন্তব্যে দল অস্বস্তিতে পড়ে থাকলে তার জন্য আমি দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। তবে সম্পূর্ণ ভিডিওটি বা আন এডিটেড আমার বক্তব্যটি দল যেন একবার দেখে নেয়।’ প্রসঙ্গত, কসবাকাণ্ডে যখন তোলপাড়া গোটা রাজ্য, তখন দলেই অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মদন। তাঁর মতে, ‘ওই মেয়েটি যদি ওখানে না যেত, এই ঘটনা তো ঘটত না। যাওয়ার সময়ে যদি কাউকে বলে যেত, দু‘জন বান্ধবীকে নিয়ে যেত, বাবা–মাকে নিয়ে যেত, তা হলে এটা ঘটত না। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে অভিযুক্তেরা‘। এরপর তাঁকে মদনকে শোকজ করে তৃণমূল।