হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে কোভিড ভ্যাকসিনের সম্পর্ক নেই, জানাল এইমস ও আইসিএমআর

দেশে হঠাৎ করেই বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা ৷ আর এই ট্রেন্ড বড় আকার নিয়েছে কর্ণাটকের হাসান জেলায়। গত ৪০ দিনে কর্ণাটকের হাসান জেলায় ২১জন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন।আর এই আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেই কম বয়সের বলেও জানা গিয়েছে। কর্ণাটকের হাসান জেলায় একদিনে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ৩জনের। এর মধ্যে লেপাক্ষী বলে একজন হঠাৎ ক্লান্ত লাগছে বলতে বলতেই হঠাৎ সংজ্ঞা হারান। অপর এক অধ্যাপক চা খেতে খেতে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হন। পরিসংখ্যান বলছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতের ২১ জনের মধ্যে ৫ জন ১৯২৫ বছর বয়সি, ৮ জন ২৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সের মধ্যে। মৃতদের মধ্যে প্রায় দুইতৃতীয়াংশের বয়স ৪৫ বছরের কম।

এই ঘটনার পরে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘এটা অস্বীকার করা যায় না যে কোভিড ভ্যাকসিনের তাড়াহুড়ো অনুমোদন এবং বিতরণও এই মৃত্যুর একটা কারণ হতে পারে, যেমনটা সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী বেশ কয়েকটা গবেষণায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে৷তারপর থেকেই জল্পনা ছড়ায়, কোভিড১৯ টিকা নেওয়ার পর থেকে হঠাৎ করেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কম বয়সিদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বেড়েছে। তরুণদের মধ্যে এই ক্রমবর্ধমান আকস্মিক মৃত্যুর সঙ্গে করোনা ভ্যাকসিনের কোনও যোগসূত্র আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল বিভিন্ন মহলে। প্রশ্ন চিহ্ন তৈরি হয়, তরুণদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কত বা হার্ট অ্যাটাক এবং করোনা টিকার কোনও যোগসূত্র আছে কিনা তা নিয়ে। সবথেকে বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়, করোনা ভ্যাকসিন হার্ট অ্যাটাকের জন্য দায়ী কিনা সে ব্যাপারেও।

এই সমস্ত প্রশ্নের এবার উত্তর দিয়েছে আইসিএমআর এবং এইমস। জানা গিয়েছে, এই মৃত্যুর কারণ জানতে, আইসিএমআর এবং এনসিডিস (জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র) দুটি পৃথক গবেষণা পরিচালনা করেছে। একটি গবেষণা পুরনো তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে এবং দ্বিতীয় গবেষণাটি বর্তমানে চলছে। আইসিএমআর অর্থাৎ ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ এবং এইমস অর্থাৎ অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস এই বিষয়ে গবেষণা চালানোর পরে দাবি করেছে, তরুণদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকে আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনা এবং কোভিড ১৯ টিকার মধ্যে সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই৷

আইসিএমআরএর ন্যাশানাল ইনস্টিটিটিউট অফ এপিডেমোলজি ২০২৩ সালের মে থেকে অগাস্টের পরিসংখ্যান নিয়ে এই গবেষণা করেছে। এতে ১৯টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৪৭টি বড় হাসপাতাল থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছিল। এতে ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সি ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, যাঁরা আগে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন, কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের মার্চের মধ্যে হঠাৎ মারা গিয়েছেন। এই গবেষণার ফলাফলে স্পষ্ট হয়, কোভিড১৯ টিকা গ্রহণ করলে হঠাৎ মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে না।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে জারি করা বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘দেশের বেশ কয়েকটি সংস্থার মাধ্যমে আকস্মিক মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করা হয়েছে। এই গবেষণাগুলি চূড়ান্তভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে যে কোভিড ১৯ টিকাকরণ এবং দেশে আকস্মিক মৃত্যুর রিপোর্টের মধ্যে সরাসরি কোনও যোগসূত্র নেই৷ ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ এবং ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এর গবেষণায় নিশ্চিত করা হয়েছে যে ভারতে কোভিড১৯ টিকা নিরাপদ এবং কার্যকর, গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঘটনা অত্যন্ত বিরল। হঠাৎ হৃদরোগে মৃত্যু বিভিন্ন কারণের কারণে হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে জেনেটিক্স, জীবনধারা, পূর্ববিদ্যমান অবস্থা এবং কোভিডপরবর্তী জটিলতা একইসঙ্গে স্পষ্ট ভাবে এও জানানো হয়েছে, হঠাৎ মৃত্যু এবং কোভিড ভ্যাকসিনের মধ্যে কোনও বৈজ্ঞানিক বা চিকিৎসাগত যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ হল জীবনধারা যেমন, খাদ্য, মানসিক চাপ, অ্যালকোহলসিগারেট, জিনগত কারণ এবং আগে থেকে থাকা কোনও রোগ। কোভিড ভ্যাকসিন সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং জীবনদায়ী বলে দাবি করা হয়েছে ওই গবেষণার রিপোর্টে। এর পাশাপাশি বিজ্ঞানী এবং সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, কোনও প্রমাণ ছাড়া ভ্যাকসিন নিয়ে প্রশ্ন তোলা বিপজ্জনক। এর ফলে মানুষের মধ্যে ভয় ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং তারা ভ্যাকসিন নিতে দ্বিধা করতে পারেন, যা দেশের জন্য ভাল নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 − 15 =