এজবাস্টনে ভারতীয় বোলারদের দারুণ প্রত্যাবর্তন। ছয় উইকেট তুলে নিয়ে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস ৪০৭ রানে শেষ করে দিল মহম্মদ সিরাজের এক স্বপ্নের স্পেল। জেমি স্মিথ এবং হ্যারি ব্রুকের অনবদ্য লড়াই সত্ত্বেও তৃতীয় দিনের শেষে, ২৪৪ রানে এগিয়ে ভারত। হাতে ৯ উইকেট। ফলে ব্যাটিং লাইন আপ যদি উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে না আসে তাহলে বড় রানে লিড নেওয়ার সুযোগ রয়েছে টিম ইন্ডিয়ার সামনে। এজবাস্টনে কোনও টেস্ট জেতেনি ভারত। সাতটি হেরেছে, একটি ড্র হয়েছে। এবার এই মিথ ভাঙার সামনে দাঁড়িয়ে টিম ইন্ডিয়া।
ইংল্যান্ডকে ৪০৭ রানে আউট করার পর মেঘাচ্ছন্ন আকাশে ১৩ ওভারে মাত্র ১উইকেট হারায় ভারত। শুরুটা ভাল করেন যশস্বী। কিন্তু ২৮ রানে টাংয়ের বলে এলবিডব্লু হন।বাকি সময়টা ইংল্যান্ডের জোরে বোলারদের চ্যালেঞ্জের মুখে সফল রাহুল ও নায়ার। তৃতীয় দিনের শেষে ভারতের রান ৬৪। ২৮ রানে অপরাজিত রাহুল, ৭ রানে ব্যাট করছেন করুণ নায়ার। তবে তৃতীয় দিনের শুরু থেকেই একই ইংল্যান্ডের ব্যাটারদের ওপর আধিপত্য দেখাতে থাকেন মহম্মদ সিরাজ। ওভারে পরপর দুই বলে যথাক্রমে জো রুট ও বেন স্টোকসকে ফেরান তিনি। লেগ সাইডের দিকে ফ্লিক করতে গিয়ে রুট আউট হন। পরের বলেই পন্থের হাতে ক্যাচ তুলে ফেরেন অধিনায়ক বেন স্টোকস। এর পর অবশ্য ইংল্যান্ডের তারকা ব্যাটসম্যান হ্যারি ব্রুক এবং উইকেটরক্ষক–ব্যাটসম্যান জেমি স্মিথ দলের হাল ধরেন। দু’জনেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে ভারতীয় বোলারদের পাল্টা চাপে ফেলে দেন। এই সময়ে শুভমান স্পিনার ব্যবহার করে ম্যাচের গতি বদলানোর চেষ্টা করেন। তবে এতে কোনও লাভ হয়নি। এরপর হ্যারি ব্রুক এবং জেমি স্মিথের ৩০৩ রানের পার্টনারশিপ ভাঙেন আকাশ দীপ। ১৫৮ রানে বোল্ড হন ব্রুক। এটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। ২০ রানে শেষ ৪ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। শূন্যতে আউট হয় ইংল্যান্ডের শেষ তিন ব্যাটার। একদিক আঁকড়ে পড়ে থাকেন স্মিথ। কিন্তু অন্য প্রান্তে পার্টনারের অভাবে দ্বিশতরান থেকে বঞ্চিত হন। ২০৭ বলে ১৮৪ রানে অপরাজিত থাকেন ইংল্যান্ডের উইকেটকিপার ব্যাটার। ভারতীয় পেসের কাছে দ্বিতীয় আর তৃতীয় দিনে নতি স্বীকার করতে হয় ইংল্যান্ডকে। প্রথমজন নেন ৬ উইকেট। বাংলার পেসারের সংগ্রহ ৪। টেস্ট ম্যাচের তৃতীয় দিনে ফিল্ডিংয়ে কোনও গাফিলতি নজরে আসেনি। তবে দ্বিতীয় টেস্টে জশপ্রীত বুমরাহকে বিশ্রাম দেওয়ায় টিম ইন্ডিয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা কম হয়নি। ভারতীয় থিংক ট্যাঙ্ক আদৌ সঠিক সিদ্ধান্ত নিল কিনা সেই প্রশ্নটা বারবার উঠছিল।কারণ বুমরাহ বিহীন বোলিং লাইন আপ নিয়ে ইংল্যান্ডের ২০ টা উইকেট তোলা যাবে কিনা সেটাই ছিল বড় প্রশ্ন।কিন্তু সেই আশঙ্কাকে দূরে ঠেলে দিয়েছেন আকাশদীপ আর মহম্মদ সিরাজ।প্রথম দিনে আকাশ দীপের দাপটের পর দ্বিতীয় দিনে দাপট দেখালেন মহম্মদ সিরাজ।
এদিকে ম্যাচের তৃতীয় দিন ভারত অধিনায়ক খুব অল্পের জন্য বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচলেন। রবীন্দ্র জাদেজা ইংল্যান্ডের ইনিংসের ৩৭তম ওভারে বল করার সময় ওভারের দ্বিতীয় বলে ব্রুক একটি শক্তিশালী কাট শট খেলেন। তবে ঠিকমতো ব্যাটে–বলে হয়নি। যার ফলে, বলটি ব্যাটের কানায় লেগে স্লিপে ফিল্ডিং করা শুভমান গিলের দিকে চলে যায়। কিন্তু শটটি এত জোরে ছিল যে, বলটি খুব দ্রুত গতিতে গিলের মাথায় এসে লাগে। ভারত অধিনায়ক প্রথমে ঠিকমতো বুঝেই উতে পারেননি। পরে তিনি যখন বুঝতে পারেন, তখন বলটি ধরার চেষ্টাও করেছিলেন। ক্যাচ ধরা তো দূর অস্ত, রানও থামানো যায়নি, উল্টে বেশ জোরেই আঘাত পান শুভমান। তবে স্বস্তির বিষয় হলো, শুভমানের চোখ বেঁচে গেছে। কারণ বলটি তাঁর বাঁ– চোখের মাত্র এক বা দেড় ইঞ্চি দূরে এসে লেগেছিল। যদি এই বলটি গিলের চোখে লাগত, তাহলে দুর্ঘটনাটি আরও বড় হতে পারত এবং তাঁর ক্যারিয়ারের জন্যও বিপজ্জনক হতে পারত। গিল আহত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই টিম ইন্ডিয়ার ফিজিও তৎক্ষণাৎ মাঠে আসেন এবং তাঁর চোট পরীক্ষা করে দেখেন। তবে স্বস্তির কথা ভারত অধিনায়ক একেবারে ফিট রয়েছেন।