বঙ্গ বিজেপির কাছে পাখির চোখ এখন ২০২৬–এর বিধানসভা নির্বাচন। কারণ, গত কয়েকটি নির্বাচনে তারা বঙ্গ বিজয়ের ডাক দিয়ে এলেও তা স্বপ্নই থেকে গেছে। এমনকী শেষ বিধানসভা নির্বাচনে তাঁরা বঙ্গ জয় করতে চলেছেন বলে যে দাবি করছিলেন তাও ধুলোয় মিশেছে নির্বাচনী ফল প্রকাশের পর। বঙ্গ তখনত তো দূর–অস্ত, তিন অঙ্কের সংখ্যাও পের হয়নি বিজেপির আসন সংখ্যা।
এমনই এক প্রেক্ষিতে ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে বিজেপির রাজ্য সভাপতি পদে এসেছেন শমীক ভট্টাচার্য। এরপরই ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ধর্ম, রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে এক জোট হয়ে পতাকা ছাড়া শাসক বিরোধী ভোট পর্বে যোগদানের ডাক দিতে দেখা গেল তাঁকে। প্রয়াত জ্যোতি বসুকে সম্মান জানিয়েও তিনি মুসলিম মৌলবাদ নিয়ে কড়া বার্তা দিলেন, যা রাজনৈতিক মহলে এক আলোড়ন ফেলেছে।কাণ, শমীক ভট্টাচার্য তাঁর বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্পষ্ট জানান, ‘পশ্চিমবঙ্গসহ সারা দেশেই মুসলিম মৌলবাদ চলছে।’ একইসঙ্গে এও বলেন, ‘মুসলিম মৌলবাদ সারা বিশ্বে অভিশাপ।’ আর এখানেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারনা, এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি সরাসরি একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে ‘মৌলবাদের’ সঙ্গে যুক্ত করে এক বিভাজনমূলক রাজনীতির ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন। শুধু তাই নয়, এই ‘মৌলবাদ’ থেকে মুক্তির জন্য সব বিরোধী রাজনৈতিক দলকে একজোট হওয়ার আহ্বানও জানান। এই প্রসঙ্গে এও বলেন, ‘কোনও একটি রাজনৈতিক দল মৌলবাদ থেকে মুক্তি দিতে পারবে না। মৌলবাদ থেকে মুক্তি পেতে সব দলকে এগিয়ে আসতে হবে।’ যে কট্টর হিন্দুত্ববাদের কথা বিজেপির সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে প্রথম থেকে, তাকে দূরে সরিয়ে বর্তমান রাজ্য সভাপতি সবার আগে স্থান দিয়েছেন মনুষ্য ধর্মকে। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কিংবা বিধানচন্দ্র রায়ের রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন -‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কিংবা বিধানচন্দ্র রায়কে ভোট চাইতে বা রাজনীতি করতে গেরুয়া বসন পড়ে তিলক ধারণ করতে হয়নি। কিংবা হিজাব পড়তে হয়নি।’ তাঁর এই আহ্বান বিরোধী ঐক্যের এক নতুন সূত্রপাত করতে পারে, তবে তার শর্ত হিসেবে ‘মুসলিম মৌলবাদ’ থেকে মুক্তির বিষয়টিকে সামনে রাখা হয়েছে।
সুতরাং আগামী নির্বাচনের আগে বিজেপি তার এজেন্ডা যেমন স্পষ্ট করছে ঠিক তেমনি বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে একজোট করে বিজেপির ভোটকে শক্তিশালী করতে চাইছে তা বিজেপির নয়া নির্বাচিত রাজ্য সভাপতির বক্তব্য থেকে স্পষ্ট। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, শমীক ভট্টাচার্য এই মন্তব্যের মাধ্যমে একদিকে যেমন বিজেপির মূল ভোটব্যাঙ্ককে চাঙ্গা করতে চাইছেন, তেমনি অন্যদিকে রাজ্যের বিরোধী দলগুলির উপর চাপ সৃষ্টি করছেন যাতে তারা ‘মৌলবাদ’-এর প্রশ্নে বিজেপির সঙ্গে একসুরে কথা বলতে বাধ্য হয়।
তবে বামেদের তরফে শমীক ভট্টাচার্যের এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করা হয়। ফলে আগামী নির্বাচনের আগে নয়া সভাপতির একজোট হয়ে কাজের বার্তা ভোটবাক্সে কতখানি কাজে দেবে তার উত্তর দেবে সময়।