স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনে নিজের দিদা শাশুড়ির চিকিৎসা করাতে গিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসককে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল অভিনেতা এবং উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিকের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার পর বিপাকে তৃণমূল বিধায়ক। কারণ, সূত্রে খবর মিলছে, স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধিকর্তা শুভাশিস কমল গুহ কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মাকে এই প্রসঙ্গে একটি চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠিতে গত বুধবার কাঞ্চন মল্লিকের উপস্থিতিতে কী ঘটেছিল, তা সবিস্তারে জানিয়েছেন৷ শুধু তাই নয়, বিধায়কের আচরণের নিন্দা করে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফ্রন্টের পক্ষ থেকে রাজ্যের মুখ্যসচিবকেও একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
সূত্রের খবর, তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ পেয়েই সেই চিঠি তিনি ডিসি সেন্ট্রালকে পাঠিয়েছেন৷ ডিসি সেন্ট্রাল সেই চিঠি বউবাজার থানাকে পাঠিয়ে ঘটনার অনুসন্ধান শুরু করার নির্দেশও দিয়েছেন। পুলিশ সূত্রে খবর, অনুসন্ধান করার পর যদি দেখা যায় যে ধর্তব্যযোগ্য কোনও অপরাধ ঘটেছে, সেক্ষেত্রে এফআইআর দায়ের করা হবে পুলিশের তরফ থেকে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার সকালে নিজের স্ত্রী শ্রীময়ী চট্টরাজের দিদিমাকে নিয়ে স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনে যান কাঞ্চন মল্লিক। আসানসোলের বাসিন্দা ৮৬ বছর বয়সি ওই বৃদ্ধার ত্বকের সমস্যায় ভুগছেন৷। আউটডোর না থাকলেও ত্বক বিশেষজ্ঞ একজন চিকিৎসক ওই বৃদ্ধাকে মেডিসিনের চিকিৎসকের কাছে দেখানোর পরামর্শ দেন।
কাঞ্চন এবং তাঁর স্ত্রী যখন ওই বৃদ্ধাকে নিয়ে মেডিসিনের চিকিৎসকের কাছে যান, তখন সেখানে আগে থেকেই অন্যান্য রোগীদের যথেষ্ট ভিড় ছিল। তার মধ্যেই তৃণমূল বিধায়কের পরিচয়ের সূত্রেই তাঁর সঙ্গে থাকা রোগিণীকে আগে দেখে দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক মেহবুবার রহমান। তিনি স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধানও। তবে মেডিসিনের চিকিৎসকও ওই বৃদ্ধাকে পরীক্ষা করে বিশেষ উদ্বেগজনক কিছু পাননি। অভিযোগ, সেই সময় অন্যান্য রোগীর চাপ থাকলেও কাঞ্চন এবং তাঁর স্ত্রী বার বার চিকিৎসককে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকেন। ওই বৃদ্ধার রক্তচাপ মেপে দেখার জন্য জোরাজুরিও করেন।বৃদ্ধাকে কোন ওষুধ খাওয়ানো প্রয়োজন না প্রয়োজন তা নিয়েও চিকিৎসককে বার বার প্রশ্ন করতে থাকেন তাঁরা। ভিড়ের মধ্যে ক্রমাগত তৃণমূল বিধায়ক এবং তাঁর স্ত্রী একের পর এক প্রশ্ন করায় কর্তব্যরত ওই চিকিৎসক একসময় মেজাজও হারান।
এদিকে সূত্রের খবর, কাঞ্চন এবং তাঁর স্ত্রীকে ওই চিকিৎসক কটাক্ষ করে প্রশ্ন করেন, তাঁরা এমবিবিএস পাশ করা চিকিৎসক কি না। অভিযোগ, এর পরই কাঞ্চন মল্লিক এবং তাঁর স্ত্রী মিলে কর্তব্যরত ওই চিকিৎসককে রেজিস্ট্রেশন বাতিলের হুমকি দেন। তৃণমূল বিধায়ককে বলতে শোনা যায়, ‘আপনার রেজিস্ট্রেশন নম্বর বলুন, বাতিল করে দেবো।’ এই হুমকি দিতে শুনেই উপস্থিত অন্যান্য রোগীরা তখন সমবেত ভাবে তৃণমূল বিধায়কের আচরণের প্রতিবাদ করেন। এর পরই হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান কাঞ্চন মল্লিক এবং তাঁর স্ত্রী৷।