লর্ডস টেস্টে দ্বিতীয় দিনের শেষে ২৪২ রানে পিছিয়ে ভারত। ৩ উইকেট হারিয়ে টিম ইন্ডিয়ার রান ১৪৫। প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের ৩৮৭ রান তাড়া করতে নেমে মোটেই ভাল শুরু হয়নি ভারতের। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল, প্যাভিলিয়নে ফিরে গিয়েছেন শুভমন গিল। প্রথম দুই টেস্টে একটি দ্বিশত এবং একটি শতরান রয়েছে গিলের। পরিসংখ্যানের দিক থেকে নির্ভরযোগ্য ব্যাটার তিনি। কিন্তু শুক্রবার লর্ডসে আদৌ সুবিধা করতে পারলেন না। ওকসের বলে স্মিথের হাতে ধরা পড়েন গিল। রান পাননি ওপেনার যশস্বী জয়েসওয়ালও। তিনটে চার মেরে শুরু করলেও দ্রুত প্যাভিলিয়নে ফেরেন। চার বছর পর লাল বলের ক্রিকেটে ফিরেই প্রথম উইকেট তুলে নেন আর্চার। যশস্বীর নামের পাশে তখন মাত্র ১৩। তিন নম্বরে নেমে শুরুটা ভালই করেন করুণ নায়ার। কিন্তু লম্বা ইনিংস খেলতে ব্যর্থ। ৬২ বলে ৪০ রান করে আউট হন নায়ার। তবে স্বস্তি একটাই, ক্রিজে রয়েছেন কেএল রাহুল এবং ঋষভ পন্থ। প্রথম টেস্টের মতোই শুরু থেকে একটা দিক ধরে আছেন রাহুল। ইতিমধ্যেই অর্ধশতরান সম্পূর্ণ। ১১৩ বলে ৫৩ রানে ব্যাট করছেন। সঙ্গে আছেন ঋষভ পন্থ।
তবে ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে প্রথম থেকেই সবার আলোচনায় ছিলেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার। কারণ, প্রথম দিনই চোট পেতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরুর আগেও পন্থের চোটের কথা জানানো হয়। যার ফলে একটা দীর্ঘ সময় উইকেটের পেছনে তাঁকে দেখা যায়নি। কিপিং করেন ধ্রুব জুরেল। এরপর মাঠও ছাড়েন। ফলে এদিন পন্থের ব্যাট করতে আসাটা টিম ইন্ডিয়ার জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তির তো বটেই। কিন্তু ব্যাট হাতে ফেরায় স্বস্তি ভারতীয় শিবিরে। তবে ব্যাট করার সময় আঙুলের চোট ভোগায়। দিনের শেষে ১৯ রানে অপরাজিত পন্থ। দ্বিতীয় দিন ৬ উইকেটের বিনিময়ে ১৩৬ রান যোগ করে ইংল্যান্ড। প্রথম দিনের শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ২৫১ রান ছিল বেন স্টোকসদের। ৯৯ রানে অপরাজিত ছিলেন জো রুট। ৩৯ রানে ব্যাট করছিলেন স্টোকস। রানের পাহাড় গড়তে এই দু‘জনের দিকেই তাকিয়ে ছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু এই রানের পাহাড় গড়ার ক্ষেত্রে সবথেকে বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ান বুমরা। লর্ডসে ফিরেই ফের স্বমহিমায় যশপ্রীত। ৭৪ রানে নিলেন ৫ উইকেট। হেডিংলির পর লর্ডস। মাঝে এজবাস্টন টেস্ট খেলেননি। কিন্তু দলে ফিরেই আবারও নজির গড়লেন বিশ্বের একনম্বর পেসার। বুমরার শিকার জো রুট, হ্যারি ব্রুক, বেন স্টোকস, ক্রিস ওকস এবং জোফ্রা আর্চার। আর এটা নিঃসন্দেহে বলাই যায় বুমরার কাঁধে ভর করে ৩৮৭ রানে ইংল্যান্ডের ইনিংস গুটিয়ে দিতে সক্ষম হন শুভমনরা। ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ রান রুটের। ১০৪ রান করে বুমরার বলে বোল্ড হন। প্রথমদিনের শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ব্রিটিশদের রান ছিল ২৫১। ৯৯ রানে ব্যাট করছিলেন রুট। ৩৯ রানে ছিলেন স্টোকস। দ্বিতীয় দিনের শুরুতে সুবিধা করতে পারেনি দুই ব্যাটারই। দুই সেট ব্যাটারকে ফিরিয়ে দেন বুমরা। দু‘জনেই এদিন ৫ রান যোগ করে। ১০৪ রানে রুটের স্ট্যাম্প ছিটকে দেন তারকা পেসার। তার আগেই অবশ্য ফেরেন বেন স্টোকস। অর্ধশতরান হয়নি। ৪৪ রানে আউট হন। পরপর দুই ওভারে দু‘জনকে ফেরত পাঠান বুমরা।
দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই প্যাভিলিয়নে ফিরে যাওয়ায় চাপে পড়ে যায় দল। অল্প রানে আউট হন স্টোকসও। অর্ধশতরান পাননি। কিন্তু জ্যামি স্মিথ এবং ব্রাইডন কার্সের পার্টনারশিপে ঘুরে দাঁড়ায় থ্রি লায়ন্সরা। বিপজ্জনক জুটি ভাঙেন মহম্মদ সিরাজ। দু‘জনকেই ফেরত পাঠান তিনি।৫১ করে আউট হন আগের টেস্টের সেঞ্চুরি করা স্মিথ। ৫৬ করেন কার্স।বুমরার পাশাপাশি জোড়া উইকেট মহম্মদ সিরাজ এবং নীতিশ কুমার রেড্ডির।এজবাস্টনে ১০ উইকেট নেওয়া আকাশদীপ লর্ডসে প্রথম ইনিংসে উইকেট প্রাপ্তি শূন্য।
তবে এদিন বল নিয়ে ভারতীয় প্লেয়ারদের সঙ্গে ফের বিতর্কে জড়াতে দেখা গেল আম্পায়ারকে। গত ম্যাচগুলোতে একাধিকবার আম্পায়ারের সঙ্গে বল বদল নিয়ে মতের মিল না হওয়ায় বিতর্ক হয়েছে। ঋষভ পন্থকে দেখা গিয়েছে রেগে গিয়ে বল মাটিতে ফেলে দিতে। এ বার বল বদল নিয়ে আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কে জড়ালেন টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ক শুবমান গিল ও পেসার মহম্মদ সিরাজ। ম্যাচের দ্বিতীয় দিনের শুরুতে এই ঘটনা ঘটে। যার পর ফের প্রশ্নের মুখে বল বদল নিয়ে আম্পায়ারের ভূমিকা।
লর্ডস টেস্টের দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনের ৯১ নম্বর ওভারে ঘটনাটি ঘটে। সেই সময়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে গিয়েছেন বেন স্টোকস, জো রুট ও ক্রিস ওকস। ৯১ তম ওভারের কয়েক বল খেলা হওয়ার পর গিল আম্পায়ারের কাছে অভিযোগ করেন বলের আকার নিয়ে। যেই বলটা নিয়ে অভিযোগ জানান, সেই বলটা খেলা হয়েছিল ১০.৪ ওভার এবং সেটা ছিল ম্যাচে দ্বিতীয় বল। এরপর গিলের থেকে অভিযোগ পেয়ে আম্পায়ার পল রেইফেল বলের আকার মাপার রিং বের করেন এবং সেই পরীক্ষায় বল পাস করেনি। চতুর্থ আম্পায়ার বল বক্স নিয়ে আসেন, নতুন বলের জন্য। আম্পায়ার একটা বল বেছে নেন, কিন্তু শুবমান গিল সেই বলেও মোটেই খুশি হননি। এরপর চতুর্থ আম্পায়ার বাংলাদেশের শরিফুল্লা চৌধুরীকে গিল জানান তিনি নতুন বলটি নিয়ে অখুশি। এটা নিয়ে আম্পায়ার ও গিলের মধ্যে তর্ক হয়। আম্পায়ার গিলের কথা না শুনে তাঁকে ফিল্ডিং করার নির্দেশ দেন। এরপর গিল চলে গেলে মহম্মদ সিরাজ আম্পায়ারের কাছে যান এবং বলটা দেখান ও আম্পায়ারকে প্রশ্ন করেন, ‘এটা কি ১০ ওভারের পুরনো বল? সত্যি?’ আদতে ডিউক বল নিয়ে প্রথম থেকেই হচ্ছে সমস্যা। বল ৩০–৩৫ ওভার খেলা হওয়ার পর নরম হয়ে যাচ্ছে। একটা বল স্যুইং করার জন্য দরকার সঠিক সিম। আর বল নরম হওয়ার পর সেই সিমটা বসে যাচ্ছে। এতে বোলারদের জন্য কিছু থাকছে না। নতুন বল ছাড়া বোলাররা উইকেট পাচ্ছেন না। এই সমস্যার মূল কারণ, আগে ডিউক বল তৈরি হতো হাতে। ফলে সিমটা উঁচু হয়ে থাকত এবং অনেকক্ষণ বলটায় খেলা যেত। বর্তমানে মেশিনে তৈরি হচ্ছে বল, আর মেশিনে হাতের মতো আকার বা মান আসছে না।