জাতীয় মহিলা কমিশনের সামনে আগামী ১৪ জুলাই হাজিরা দেবেন বীরভূম এসপি, নির্দেশ আদালতের

মে মাসের তিরিশ তারিখ একটি কল রেকর্ডিং ঘির উত্তাল হয়েছিল বঙ্গ রাজনীতি। এই কলরেকর্ডিংয়ে বীরভূমে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে গালিগালাজ করতে শোনা গিয়েছিল ৷ আর এই গালিগালাজ করেছিলেন বোলপুর থানার আইসিকে। এই ফোনকলে  শুধু বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারকেই কটূক্তি করা হয়নি, বরং তাঁর স্ত্রী ও মায়ের উদ্দেশ্যেও কুরুচিকর মন্তব্য করা হয় ৷ এই ঘটনায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় শুক্রবার বড় নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট ৷

অনুব্রত মণ্ডলের তরফে করা ওই মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি ৷ ইতিমধ্যে বীরভূম পুলিশ মামলা রুজু করেছে ৷ সেই নিয়ে তদন্তও চলছে ৷ অনুব্রত মণ্ডলকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ ৷ এদিকে এই ঘটনায়  পদক্ষেপ করে জাতীয় মহিলা কমিশন ৷ বীরভূমের পুলিশ সুপারকে দিল্লিতে জাতীয় মহিলা কমিশনের দফতরে গিয়ে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় ৷ কিন্তু সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বীরভূমের পুলিশ সুপার ৷ তিনি জাতীয় মহিলা কমিশনের নির্দেশ খারিজ করার আর্জি জানিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টে ৷

শুক্রবার সেই মামলার শুনানি হয় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে ৷ আদালতের নির্দেশ, বীরভূমের পুলিশ সুপারকে জাতীয় মহিলা কমিশনের সামনে আগামী ১৪ জুলাই বেলা ১২টার সময় ওই হাজিরা দিতে হবে৷ তবে বীরভূমের পুলিশ সুপার ভার্চুয়ালি হাজিরা দেবেন।

প্রসঙ্গত, ১৪ জুলাই দিল্লি গিয়ে বীরভূমের পুলিশ সুপারকে অনুব্রত মণ্ডলের কটূক্তি সংক্রান্ত মামলার কেস ডায়েরিসহ হাজিরা দেওয়ার জন্য় তলব করেছিল জাতীয় মহিলা কমিশন ৷ হাইকোর্টের নির্দেশের ফলে বীরভূমের পুলিশ সুপারকে সরাসরি দিল্লি যেতে হবে না ৷ যদিও আদালত জানিয়েছে, এই মামলা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথি পুলিশ সুপার অথবা তাঁর মনোনীত কোনও আধিকারিককে যেকোনও পদ্ধতিতে (ইমেল, ফ্যাক্স, ডাকযোগে ইত্যাদি) জাতীয় মহিলা কমিশনের দিল্লির দফতরে পাঠাতে পারেন ৷

তবে এদিন শুনানির সময়ে কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতির প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় জাতীয় মহিলা কমিশনকে। এদিন মহিলা কমিশনকে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘তদন্তকারী সংস্থার কাজে কীভাবে হস্তক্ষেপ করছেন ? কোন ধারা যুক্ত হবে না হবে না, সেটা নিয়ে কীভাবে নির্দেশ দেন আপনারা?’ উত্তরে মহিলা কমিশনের পক্ষ থেকে সওয়াল করা হয়, ‘আমরা কোনও নির্দেশ দিইনি, আমরা পরামর্শ দিয়েছি।তাঁদের বক্তব্য, লঘু ধারায় মামলা হয়েছে, তাই আমরা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এরপরই বিচারপতি জানতে চান, ‘কীসের ভিত্তিতে আপনারা এই নির্দেশ দিচ্ছেন, আপনাদের কাছে কী তথ্য প্রমাণ আছে ?’ উত্তরে বিচারপতি বলেন, ‘আপনারা দেখান যে আপনাদের কাছে যে তথ্যপ্রমাণ আছে সেটা কেস ডায়রির থেকে বেশি।এই প্রসঙ্গেই বিচারপতির তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘আমাদের দেশে প্রচুর কমিশন রয়েছে, সবাই যদি তদন্তকারী সংস্থার কাজে হস্তক্ষেপ করা শুরু করে, তাহলে তদন্ত কীভাবে চলবে?’ এই সূত্র ধরেই জাতীয় মহিলা কমিশনকে বিচারপতির পরামর্শ, ‘আপনারা আপনাদের তদন্ত করুন, কাউকে ডাকতে চাইলে ডেকে পাঠান, কিন্তু কেস ডায়রি দেখতে পারেন না।

একই সঙ্গে এই মামলায় সবপক্ষকে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট ৷ আদালতের নির্দেশ, নিজেদের বক্তব্য হলফনামার মাধ্যমে জানাতে হবে৷ আগামী 8 অগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 + 4 =