ভুয়ো আধার কার্ড দিয়ে কলকাতা সহ রাজ্য থেকে তোলা হয়েছে ২৩ হাজার সিম, জানাল ডিওটি

ভুয়ো আধার ব্যবহার করে তোলা হয়েছে বিপুল সংখ্যায় সিম কার্ড। আর এই সিম নেওয়া হয়েছে কলকাতা সহ রাজ্য জুড়ে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকমিউনিকেশন (ডিওটি)-এর রিপোর্টে জানানো হয়েছে, শুধুমাত্র বিগত কয়েক মাসেই পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রায় ২৩ হাজার সিম কার্ড তোলা হয়েছে। আর এসব ক্ষেত্রে জাল আধার ব্যবহার করা হয়েছে। সেই তথ্য হাতে আসার পরই তৎপর হয়ে উঠল লালবাজার। শুরু হয়েছে অভিযানও। এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় তরফেইহাই রিস্ক সিকিউরিটি ইস্যুহিসেবে দেখা হচ্ছে।

গোয়েন্দা সূত্রে এও জানা যাচ্ছে, এই সিমগুলোর বড় একটি অংশ সাইবার জালিয়াতদের হাতে চলে গিয়েছে। আবার একটি অংশ পাঠানো হয়েছে অন্যান্য রাজ্যে। সেখানে সক্রিয় রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি প্রতারণা চক্র। শুধু তাই নয়, গোয়েন্দাদের সন্দেহ এই সিমগুলি জঙ্গি সংগঠনের স্লিপার সেল সদস্যদের হাতেও চলে গিয়ে থাকতে পারে। লালবাজার সূত্রে খবর, এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একজন রমেশ দুবে, অন্যজন সামাদ খান। ধৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, তারা ভুয়ো নথি তৈরি করে বিভিন্ন সিম ডিস্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে সিম সংগ্রহ করত এবং তা সাইবার প্রতারকদের কাছে বিক্রি করত। প্রতিটি সিম বিক্রির মূল্য ছিল ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা।

এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে যে তথ্য মিলছে তাতে জানা গিয়েছে, আধার কার্ডের নম্বর অপরিবর্তিত রেখে, নাম ও ছবি বদলে তৈরি করা হয়েছে জাল আধার। এই কাজে কিছু আধার কেন্দ্রের কর্মীদেরও যোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছে বলে সন্দেহ। এইভাবে তৈরি নথি দিয়ে সিম কার্ড ইস্যু করা হয়েছে, যার পরিণতি হয়েছে ভয়ঙ্কর। এগুলি ব্যবহার করা হচ্ছে একাধিক প্রতারণার কাজে, এমনকি আন্তর্জাতিক কল ও হোয়াটসঅ্যাপ জালিয়াতিতেও। ডিওটি ইতিমধ্যেই এই সমস্ত সিমের একটি তালিকা তৈরি করে তা রাজ্য প্রশাসনের হাতে তুলে দিয়েছে। সূত্র অনুযায়ী, এর পরপরই লালবাজার গোয়েন্দা বিভাগ দ্রুত তদন্তে নামে এবং বিভিন্ন এজেন্ট ও ডিস্ট্রিবিউটরের নাম খতিয়ে দেখা শুরু করে। একাধিকবার বিভিন্ন সাইবার অপরাধের তদন্তে দেখা গিয়েছে, অপরাধীরা সপ্তাহখানেক ব্যবহারের পরই ওই সিম ফেলে দিচ্ছে। তাতে তাদের ট্র্যাক করা যায় না। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও চরম উদ্বিগ্ন।

তদন্তকারীদের মতে, এই সিম জালিয়াতি কেবল প্রতারণা নয়, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও এক বড় আশঙ্কার ইঙ্গিত। স্লিপার সেলের ব্যবহারের সম্ভাবনা একে আরও গুরুতর করে তুলেছে। কে বা কারা এই বৃহৎ জালিয়াতির পিছনে, তাদের মধ্যে সরকারি কর্মচারি বা আধার সংক্রান্ত কর্মীরা কেউ যুক্ত কিনা তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 + 19 =