পিছিয়ে গেল ডিএ মামলার শুনানি, মঙ্গলবার শুনানির সম্ভাবনা

সুপ্রিম কোর্টে সোমবারও পিছিয়ে গেল ডিএ মামলার শুনানি। মঙ্গলবার শুনানির সম্ভাবনা। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ ভাতার দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা হয়েছে, তা নিয়ে এবার প্রয়োজনে রোজ শুনানি হবে বলে জানিয়ে দিল দেশের শীর্ষ আদালত। 

মঙ্গলবার ডিএ মামলার বিস্তারিত শুনানি হবে বলে জানিয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্যের তরফে অনুরোধ করা হয়েছিল, আগামী সোমবার যাতে এই মামলার শুনানি হয়। রাজ্যের আর্জি খারিজ করে দেন বিচারপতি সঞ্জয় করোল। পাশাপাশি রাজ্য সরকারের তরফে আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি জানান, সুপ্রিম কোর্টের পূর্ববর্তী নির্দেশ কীভাবে কার্যকর করা হবে, তা খতিয়ে দেখার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে রাজ্য সরকার। আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী রাজ্য সরকারের তরফে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য দুমাস সময় চান। সোমবার প্রাথমিকভাবে  রাজ্যের আবেদন অর্থাৎ অতিরিক্ত সময়ের আবেদনে সায় দিতে গররাজি ছিলেন বিচারপতি সঞ্জয়  করোল এবং প্রশান্ত কুমার মিশ্রর বেঞ্চ।পর্যবেক্ষণে বিচারপতি করোল বলেন,  এই মামলার রায়ের প্রভাব সারা দেশব্যাপী পড়বে।’ পরে বিচারপতিরা জানান,  মঙ্গলবার এই মামলার শুনানি ফের হবে।

এদিকে, সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তরফে বলা হচ্ছে, রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছিল, এই পরিমাণ বকেয়া ডিএ দিতে গেলে নাকি কোমর ভেঙে যাবে। অথচ দুর্গাপুজোর অনুদান ক্রমশ বেড়েই চলেছে ক্লাবগুলির ক্ষেত্রে। আর এখানেই সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের প্রশ্ন, এক্ষেত্রে সরকারের কোষাগারে কোথা থেকে পয়সা আসছে এবং ডিএ দেওয়ার বেলায় কেন এত অনীহা? প্রশ্ন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের। তারা সুপ্রিম কোর্টের উপরই সম্পূর্ণ ভরসা রাখছেন।

গত ১৬ মে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। এরপর রাজ্য হলফনামা দিয়ে বকেয়া মেটানোর জন্য ৬ মাস সময় চায়। একইসঙ্গে রাজ্য জানিয়েছিল, বকেয়া ডিএ কর্মীদের দেওয়ার বদলে মামলার ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত কোর্টের কাছে জমা রাখবে।রাজ্য বকেয়া ডিএ সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ না মানায় একাধিক সরকারি কর্মী-সংগঠন আদালত অবমাননার মামলাও করে।

সোমবারের শুনানির শুরুতেই রাজ্য সরকারের আইনজীবীরারা সওয়াল করার জন্য কিছুটা সময় চান। তাঁরা স্পষ্ট করে আদালতে জানান, যে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট দিয়েছে, তা কার্যকর করতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে। সুপ্রিম কোর্টের কাছে তাঁরা দুমাস সময় চান। আইনজীবীরা জানান, একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেই কমিটি খতিয়ে দেখছে, কত পরিমাণ অর্থ দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল ২৫ শতাংশ ডিএ দিতে হবে। সেই বিষয়টি কার্যকর করতে ২ মাস সময় লাগবে বলে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে।  তখনই আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি স্পষ্টভাবে জানান, কলকাতা হাইকোর্ট বা ট্রাইব্যুনাল কত পরিমাণ অর্থ দিতে হবে, তাকোয়ান্টিফাইকরে দেয়নি।পাশাপাশি অভিষেক মনু  সিংভি আদালতে এএও বলেন,  ‘বিপুল পরিমাণ টাকা, রাজ্য সরকারকে দিতে হবে। কিন্তু বকেয়া ডিএর অর্থের পরিমাণ কত হবে, তা হাইকোর্ট বা ট্রাইব্যুনাল স্পষ্ট করেনি।’ এরই রেশ ধরে তিনি সওয়াল করতে গিয়ে এও বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে কত পরিমাণ অর্থ দিতে হবে, সেই বিষয়ে খতিয়ে দেখছে কমিটি। সেই অর্থের পরিমাণ সুপ্রিম কোর্টের তরফে স্পষ্ট করে দেওয়ার জন্য অভিষেক মনু সিংভি আবেদন জানান। ফলে এবার আদৌ রাজ্য সরকারি কর্মীরা কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পাবেন কি না, পেলেও বকেয়ার কতখানি পাবেন এবং কবে থেকে তা অ্যাকউন্টে ঢুকবে, সবটাই স্পষ্ট হবে বলে মনে করা হচ্ছে। 

এই প্রসঙ্গে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘আদালতের কাজ আইন বাতলে দেওয়া। আদালত তো আর কোয়ান্টিফাই করতে পারবে না। কোয়ান্টিফাই কে করবেন না করবেন, সেটা তো আদালতের বিষয় নয়। আসলে ওরা মামলার শুনানি করতে চাইছিলেন না। যদি আমরা জিতি, ১০০ শতাংশই দিতে হবে।

এই প্রসঙ্গে বলে রাখা শ্রেয়, রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের মোট বকেয়া ডিএর পরিমাণ ১১ হাজার ৮৯০ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা। এ ছাড়া পেনশন প্রাপকদের জন্য মোট বকেয়া ১১ হাজার ৬১১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা। তাই রাজ্য সরকারের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে জানিয়েছিলেন, পুরো ডিএ দিতে গেলে রাজ্য সরকারের আর্থিক অবস্থা বেহাল হয়ে যাবে। পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারিরা বর্তমানে ১৮ শতাংশ হারে ডিএ পান। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারিদের সঙ্গে এ রাজ্যের কর্মীদের মহার্ঘভাতার ফারাক এখনও ৩৭ শতাংশ। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা ৫৫ শতাংশ হারে ডিএ পান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five + one =