ভারতের শীর্ষস্থানীয় প্রি–স্কুল বিশেষজ্ঞ ইউরোকিডস গর্বের সঙ্গে তাদের অষ্টম সংস্করণের কারিকুলাম ‘হিউরেকা’ – দ্য ভিজিবল থিংকিং কারিকুলাম চালুর কথা ঘোষণা করল। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজেক্ট জিরো থেকে অনুপ্রাণিত এবং জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০–এর সামগ্রিক উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এই ‘হিউরেকা’ কারিকুলামটি শিশুদের সমালোচনামূলক ও সৃজনশীল চিন্তাশক্তি বিকাশে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইউরোকিডসের বৃদ্ধি কৌশলের অংশ হিসেবে সংস্থাটি কলকাতা ও সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে তাদের উপস্থিতি বাড়ানোর পরিকল্পনার কথাও ঘোষণা করেছে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ১১০টি নতুন সেন্টার চালু করার মাধ্যমে রাজ্যে কেন্দ্রের সংখ্যা বর্তমান ১৪০ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ২৫০–এ। এর ফলে প্রাথমিক শিক্ষার মান আরও উন্নত হবে। প্রাথমিক শিক্ষায় দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইউরোকিডস উচ্চমানের প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সর্বদা উপলব্ধি করে, আর সেই কারণেই তারা নিয়মিত তাদের কারিকুলাম–এর আধুনিকতা বজায় রেখে চলেছে।
‘হিউরেকা’ শিশুদের শুধু কি ভাবতে হবে তা শেখানোর বদলে তাদেরকে কীভাবে ভাবতে হবে সেই দক্ষতায় সক্ষম করে তোলার চেষ্টা করছে। এই কারিকুলামে হার্ভার্ড–প্রণোদিত ২০টি নির্দিষ্ট ‘থিঙ্কিং রুটিন’ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা শিশু মনে কৌতূহল জাগায়, কল্পনাশক্তিকে উস্কে দেয় এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটায়। এর ফলে শিশুরা তথ্য মুখস্থ করার বদলে সক্রিয়ভাবে সেই তথ্যের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে—যা তাদের মধ্যে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটায়।
১৮ মাসের সুপরিকল্পিত গবেষণা, পাইলট টেস্টিং ও ক্রমাগত পরিমার্জনের মাধ্যমে তৈরি ‘হিউরেকা’ EPICS দর্শনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে । এই শিক্ষাব্যবস্থায় প্রায়ই উপেক্ষিত পাঁচটি মৌলিক বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়—ইমোশনাল, ফিজিক্যাল, ইন্টেলেকচুয়াল, ক্রিয়েটিভ এবং স্পিরিচুয়াল । এই কারিকুলামের স্তম্ভ হল ১৩টি ভিন্ন ভিন্ন প্রোগ্রাম (যেমন—কোডকোয়েস্ট, ইউরোকনেক্ট, ইউরোফিট, ইউরোআর্ট, এলিভেট ইত্যাদি), যা প্রতিটি শিশুর শেখার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি। এর উদ্দেশ্য শুধু একাডেমিক সাফল্যের জন্য নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি ব্যক্তিগত বিকাশের পথও সুগম করা।
কারিকুলামের ঘোষণা করতে গিয়ে, কেভিএস সেশাসাই, সিইও, প্রি–কে ডিভিশন (লাইটহাউস লার্নিং) ইউরোকিডস জানান, ‘ইউরোকিডসে আমরা বিশ্বাস করি আজীবন শেখার ভিত তৈরি করতে হলে কৌতূহল আর সমালোচনামূলক চিন্তাশক্তিকে লালন করতে হবে—যা শুরু হয় মাত্র দুই বছর বয়স থেকেই। আমাদের কারিকুলাম ডেভেলপমেন্ট প্রধান ড. অনিতা মদন ‘হিউরেকা’ তৈরি করেছেন, যা আর্লি চাইল্ডহুড কেয়ার অ্যান্ড এডুকেশন ক্ষেত্রে সবচেয়ে উদ্ভাবনী কারিকুলাম। আমাদের পদ্ধতি নিশ্চিত করে যে শিশুরা শুধু স্কুলের জন্যই নয়, জীবনের জন্য প্রস্তুত হবে—একটি ক্রমবিবর্তনশীল পৃথিবীতে পথ চলার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা নিয়ে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, কীভাবে এই কারিকুলাম আগামী দিনের চিন্তাবিদ, উদ্ভাবক এবং নেতাদের গড়ে তুলবে। এই নতুন কারিকুলামের মাধ্যমে আমরা কলকাতা এবং গোটা পশ্চিমবঙ্গে আমাদের উপস্থিতি আরও শক্তিশালী করতে আগ্রহী।’
পাঠ্যক্রমের উদ্বোধন উপলক্ষে, ড. অনিতা মদন, হেড– কারিকুলাম ডেভেলপমেন্ট , ইউরোকিডস বলেন, ‘হিউরেকা প্রারম্ভিক শিক্ষায় একটি পরিবর্তনমুখী দৃষ্টিভঙ্গি। EPICS ফ্রেমওয়ার্কের মাধ্যমে আমরা কেবল IQ দিকে মনোনিবেশ করছি না, বরং শিশুর মানসিক, শারীরিক, সৃজনশীল ও আধ্যাত্মিক বিকাশকেও প্রাধান্য দিচ্ছি। আমরা চাই শিশুরা শুধু প্রশ্নের উত্তর দিতে না শিখে, প্রশ্নের উত্তরকেও প্রশ্ন করতে শিখুক। এই পরিবর্তন কৌতূহল, সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ এবং তাদের চারপাশের বিশ্বের সঙ্গে গভীর সংযোগ গড়ে তোলে। হিউরেকা শুধু একাডেমিক প্রস্তুতি নয়, এটি এমন মানসিকতা গড়ে তোলে যেখানে শিশুরা সমস্যা সমাধান করতে এবং পৃথিবীর সঙ্গে অর্থপূর্ণভাবে যুক্ত হতে সক্ষম হয়।’
জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০–এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, যা প্রাচীন ভারতীয় পঞ্চকোষ ধারণা বা মানব জীবনের ‘পাঁচ স্তর’-এর উপর ভিত্তি করে সমগ্র বিকাশকে গুরুত্ব দেয়, হিউরেকা এই নীতি শিক্ষার দৃষ্টিভঙ্গিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে। পাশাপাশি, ইউরোকিডস তাদের হোমবাডি অ্যাপকেও উন্নত করছে, যাতে পাঠ্যক্রমকে সমৃদ্ধ ইন্টারঅ্যাকটিভ কনটেন্টের মাধ্যমে শিশুর বিকাশে সহায়তা করা যায় এবং পরিমিত স্ক্রিন টাইম বজায় রাখা যায়।
২৩ বছরের অভিজ্ঞতা এবং ৫০০ শহরে ১,৭০০–এরও বেশি প্রি–স্কুল নেটওয়ার্কসহ ৭,০০,০০০–এর বেশি শিক্ষার্থীকে ইতিমধ্যেই শিক্ষিত করার পর, ইউরোকিডস এখন ভবিষ্যতের জন্য শিশু মনগুলোকে প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে অগ্রণী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হয়। এই নতুন পাঠ্যক্রম ইউরোকিডসের প্রতিশ্রুতিকে আরও দৃঢ় করে—যে তারা কৌতূহলী, বহুমুখী ও সুসংগঠিত শিক্ষার্থীদের গঠন করে, এবং প্রারম্ভিক শিক্ষার ক্ষেত্রে তার নেতৃত্বকে পুনরায় নিশ্চিত করে।