ফের ভাঙড়ে ঢুকতে বাধা নওশাদকে

ফের ভাঙড়ে ঢোকার মুখে আটকে দেওয়া হল আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিকে। সূত্রে খবর, রবিবার ভাঙড়ে ঢোকার আনেক আগেই লেদার কমপ্লেক্স থানা এলাকায় তাঁকে আটকে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, শুক্রবারের পর ফের একই ঘটনা ঘটল রবিবারেও।
এদিকে আইএসএফ শিবির সূত্রে খবর, রবিবার দুপুরে হুগলির ফুরফুরার বাড়ি থেকে গাড়িতে ওঠেন নওশাদ। জানান, এ বার তিনি আশা করছেন, তাঁকে আটকাবে না পুলিশ। যদিও বাধা যে আসবে, সে ব্যাপারে প্রায় নিশ্চিত ছিলেন তিনি। এরই প্রেক্ষিতে নওশাদ এও জানান,‘আমায় বেআইনি ভাবে আটকানো হয়েছিল সে দিন। আবার যাচ্ছি। আশা তো করছি আজ আটকাবে না। দেখা যাক।’ তবে এদিন বিকেলেও ঘটে শুক্রবারেরই পুনরাবৃত্তি। ভাঙড়ে প্রবেশ করার অনেক আগেই বিধায়ককে আটকায় পুলিশ। পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়, ‘এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। তাই তিনি সেখানে যেতে পারবেন না।’ এদিকে আইএসএফ-এর তরফ থেকে দাবি করা হয়, হাতিশালার কাছে যেখানে নওশাদকে আটকানো হয়েছে, সেখানে ১৪৪ ধারা জারি হয়নি। এ নিয়ে নওশাদ বলেন,‘সুপরিকল্পিত ভাবে আটকানো হচ্ছে।’ অন্যদিকে, বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট এবং কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার পুলিশ আধিকারিকদের বক্তব্য, তাঁরা সংযোগস্থলে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। বিধায়কের অভিযোগ থাকলে তিনি লিখিত আকারে দিন। তা খতিয়ে দেখবে পুলিশ। শুধু তাই নয়, ডিএসপি ক্রাইমও তাঁর হাতে থাকা নথি দেখিয়ে নওশাদকে জানান, ম্যাজিস্ট্রেট থেকে আসা নির্দেশ তাঁরা পালন করছেন। বাইরে থেকে কাউকে তাঁরা ঢুকতে দিচ্ছেন না এলাকায়।
তবে এদিনের ঘটনায় নওশাদ রাজ্য পুলিশ প্রশাসনকে বিদ্ধ করে জানান,’পুলিশ শাসক দলের জন্য আলাদা ভূমিকা নিচ্ছে, বিরোধীদের জন্য আলাদা ভূমিকা নেওয়া হচ্ছে। এটা তো পুলিশ দ্বিচারিতা করছে। আমাকে যেভাবে আটকানো হয়েছে, সেটা পুরো অনৈতিক। নিয়মের বাইরে গিয়ে এটা করা হচ্ছে। ১৪৪ ধারা থাকলে একসঙ্গে চারজন জমায়েত হয়ে পারে না। আমি একজনকে নিয়ে যাচ্ছি। আমার বিধায়ক হিসাবে কাজে ব্যাঘাত ঘটান হচ্ছে।’একইসঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে জানতে চান, ‘আপনাদের খারাপ লাগে না? উর্দি পরে দ্বিচারিতা করছেন। গণতন্ত্র হরণ করছেন। আমার যে সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে, সেটা আপনি কেড়ে নিচ্ছেন। এর জবাব এক দিন আপনাকে দিতে হবে।’ একইসঙ্গে আইএসএফ বিধায়কের বক্তব্য,নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রের মানুষের সঙ্গে তিনি দেখা করতে চান। তাঁদের এক প্রার্থী নিখোঁজ। তাঁর খোঁজ নিতে চাইছেন তিনি। ওই প্রার্থীর পরিবারের সঙ্গেও দেখা করতে চান। এদিকে কোনও ভাবেই বিধায়ককে এগোতে না দেওয়ায় তিনি আমি পুলিশের কাছে এ প্রশ্নও রাখেন,এমন এক প্রেক্ষাপটে বিধায়কের যাওয়ার ক্ষেত্রে ১৪৪ ধারা জারির মানে কী তা নিয়েও। এরই পাশাপাশি এদিন কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিকদের এও বোঝানোর চেষ্টা করেন যে,১৪৪ ধারা তিনি জানেন। ভাঙড়ে কোনও জমায়েত তিনি করতে যাচ্ছেন না। আর তাঁর সঙ্গে রয়েছেন মাত্র একজন। এরই পাশাপাশি তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে তোপ দেগে অভিযোগ করেন, শনিবারই সেখানে সভা করেছেন তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লারা। ১৪৪ ধারা জারি থাকলে তাঁরা কী ভাবে সেটা করলেন তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আইএসএফ বিধায়ক।এর বিরুদ্ধে তিনি আদালতে যাবেন বলেও এদিন হুঁশিয়ারি দিতে শোনা যায় নওশাদকে।
প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে ভাঙড় এলাকা। মনোনয়ন পর্ব থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন, এমনকি ফলাফল প্রকাশের দিনেও অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। ফলাফল প্রকাশের দিন-রাতে অশান্তির চিত্র উঠে আসে ভাঙড় থেকে। রাতের বেলা মুহুর্মুহু বোমাবাজি হয়। একাধিক আইএসএফ কর্মী মারা যান বলে জানানো হয়। দুই পুলিশ আধিকারিক আহত হন। এরপর থেকেই ভাঙড় থানা এবং কাশীপুর থানা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয় বারুইপুর পুলিশের তরফ থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight − 6 =