‘পারলে আমাদের হারাও’, বেঙ্গালুরুর বৈঠক থেকে চ্যালেঞ্জ মমতার

‘পারলে আমাদের হারাও।’ বেঙ্গালুরুতে ২৬টি বিরোধী দলের বৈঠকের পরে ঠিক এই ভাষাতেই বিজেপির উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে দেখা গেল তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বার্তা দিলেন, কেন্দ্র থেকে নরেন্দ্র মোদির সরকারকে উৎখাত করতে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের।
বিরোধী জোটের নেতাদের আলোচনার শেষে আয়োজিত সাংবাদিক বৈঠকে সঞ্চালক ছিলেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের পরেই বক্তৃতার জন্য মমতাকে আমন্ত্রণ জানান তিনি। মমতার পরের বক্তাদের তালিকায় ছিলেন কেজরিওয়াল,উদ্ধব ঠাকরে এবং রাহুল। প্রসঙ্গত, গত ২৩ জুন পটনায় বৈঠক থেকেও মমতা বার্তা দিয়েছিলেন, কেন্দ্র থেকে বিজেপিকে সরাতে হলে আদর্শগত মতপার্থক্য দূরে সরিয়ে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করাও কথাও বলেছিলেন। কিন্তু সে দিন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের পটনার বাড়িতে ১৫টি বিরোধী দলের নেতাদের আলোচনার পরে সাংবাদিক বৈঠক রাহুল-সহ কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে মমতার ‘দূরত্ব’ চোখে পড়েছিল রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের। আবার সোমবার থেকে শুরু হওয়া বেঙ্গালুরুর বৈঠকে দু’পক্ষের ‘নৈকট্যও’ নজরে এসেছে। শুধু তাই নয়, কংগ্রেসের দলীয় টুইটার হ্যান্ডলেও দেখা গিয়েছে তৃণমূল সুপ্রিমোর মন্তব্য। মমতা মঙ্গলবার সকালে বলেছিলেন,‘ভাল এবং ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে।’’ তাঁর সেই বক্তব্য দেখা গিয়েছে এআইসিসির টুইটারে। কংগ্রেস-তৃণমূল সেতুবন্ধের ক্ষেত্রে সোনিয়া গান্ধির উপস্থিতি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হয়েছে বলে তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি।
তবে বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দেবে কে এই প্রশ্নে বিগত কয়েক বছর ধরে তৃণমূল আর কংগ্রেসের সম্পর্কটা বিশেষ ভাল যাচ্ছিল না। এদিকে আবার বাংলার মাটিতে বারবার একাদিক ইস্যুত মমতার সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে দেখা গিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে। শেষ বিধানসভা ভোটেও সিপিএম,আইএসএফের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছিল কংগ্রেস। সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও সেলিম-নওশাদদের সঙ্গে হয়েছে ‘অলিখিত’ জোট। এদিকে এরইমধ্যে মঙ্গলবার তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে শোনা গেল রাহুল ‘স্তূতি’। বসেওছিলেন রাহুল গান্ধি,সোনিয়া গান্ধির মাঝে। এই বৈঠকেই কথা বলতে গিয়ে শুরুতেই সমস্ত দলের নেতাদের অভিবাদন জানান মমতা। বলেন,’অরবিন্দজি, সীতারাম জি, রাজা, হেমন্ত, মান, সিদ্দারামাইয়াজি, শরদ পাওয়ার জি আমি সকলকে ধন্যবাদ জানাই।’ নেতাদের নাম বলার সময় মমতা এও বলেন,’আওয়ার ফেভারিট রাহুল গান্ধি’। মমতার মুখে রাহুলের প্রশংসা নিয়েই এখন রাজনৈতিক মহলে শুরু হয় জোর চর্চা। শুধু রাহুল নয়, মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেরও এদিন প্রশংসা করেন মমতা। প্রসঙ্গত,তীব্র রাজনৈতিক ডামাডোলে কিছুদিন আগেই মারাঠা ভূমের মসনদ থেকে সরতে হয়েছিল উদ্ধবকে। যদিও মমতার দাবি,’উদ্ধব এখন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তবে আমি ওঁকে প্রাক্তন বলব না। আগামীতে ওরা আবার আসছে।’ তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চা।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারনা, দু’দিনের বৈঠকের পরেও জাতীয় স্তরে নয়া বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ অর্থাৎ ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়ান্স-এর অন্দরের ‘সমীকরণ’ নিয়ে জট বোধহয় পুরোপুরি কাটল না। কারণ, বিরোধী নেতাদের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির নাম যেমন নিলেন না মমতা ঠিক তেমনই রাহুল গান্ধির বক্তব্যে অনুচ্চারিত রইল আম আদমি পার্টি (আপ)-র প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × two =