ভরা বাজারে প্রকাশ্য দিবালোকে নগ্ন করে বেধড়ক মারধর করার ঘটনা ইতিমধ্যেই জোর শোরগোল শুরু হয় রাজনৈতিক মহলেও। এদিকে ইতিমধ্যেই নির্যাতিতা দুই মহিলার বিরুদ্ধেই স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেছে পুলিশ। অন্যদিকে ওই দুই মহিলাকে নির্যাতন করার অভিযোগে ইতিমধ্যেই ৫ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। কিন্তু, নির্যাতিতা দুই মহিলাকে কেন গ্রেফতার করা হল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের অতি সক্রিয়তা নিয়েও।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার ১৬ জুলাই মালদহের বামনগোলা থানা এলাকার নালাগোলায় বুরন মুর্মু নামে এক বিজেপি কর্মীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। খুনের অভিযোগ ওঠে তাঁর ছেলে ও পুত্রবধূর বিরুদ্ধে। এদিকে এবারের পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী ছিল তাঁর পুত্রবধূ। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার ১৭ জুলাই উত্তাল হয় বামনগোলা। নালাগোলা পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাও করে বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। ঝাঁটে হাতে বিক্ষোভে সামিল হতে দেখা যায় এলাকার মহিলাদের। পুলিশের অভিযোগ সেদিনের ঘটনায় যুক্ত ছিলেন এই দুই নির্যাতিতা মহিলা। সে কারণেই তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে শনিবার। যদিও বর্তমানে তাঁরা দু’জনে মালদহ মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। এদিকে এই ঘটনায় বিজেপির অভিযোগ, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে দুই মহিলাকে।
নির্যাতিতা দুই মহিলার গ্রেফতার নিয়ে রাজ্য পুলিশের তরফ থেকেও স্পষ্ট কোনও বিবৃতি জারি করা হয়নি।ফলে সেখানেও তৈরি হয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা।সূত্রের খবর, ওই দুই মহিলাকে নালাগোলা পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়।থানায় বিবস্ত্র অবস্থায় তাঁদের বসিয়ে রাখারও অভিযোগ ওঠে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায় জানা গিয়েছে, বাইরে থেকে একটি কাপড় নিয়ে এসে দু’টুকরো করে ওই মহিলাদের দেওয়া হয়। এখনও পর্যন্ত ওই মহিলাদের গ্রেফতার নিয়ে মুখ খোলেননি পুলিশের কোনও কর্তা। সূত্রের খবর, ২২ জুলাই তাঁদের গ্রেফতার করে ধৃত এক বিজেপি কর্মীর সঙ্গে মালদহ জেলা আদালতে তোলা হয়। আদালত ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দেয়। সেখান থেকে ওই দুই নির্যাতিতাকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়। বিজেপির অভিযোগ, ওই দুই নির্যাতিতাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। যদিও, গ্রেফতারের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অন্যদিকে দুই মহিলাকে নির্যাতনের ঘটনায় যে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে সে প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব জানান, ‘বামনগোলা থানা গতকাল ভিডিয়োটা পেয়েছে। তারপরই সুয়োমটো কেস করেছে। আমরা আইটি অ্যাক্টে মামলা করেছি। যে ভিডিয়োতে কে কে আছে তাও দেখা হয়েছে। তারপরই এখনও পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারমধ্যে ৩ জন মহিলা ও ২ জন মহিলা রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল করেছিল। আরও দু’জনকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। তাঁদেরও গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে।’
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে ধরনায় বসেন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু। তার সঙ্গে ধরনায় রয়েছেন বিজেপির অন্যান্য নেতা কর্মীরাও। সাতবার ফোন করা সত্ত্বেও পুলিশ সুপার ফোন ধরেননি বলে অভিযোগ সাংসদের। তাঁর আরও অভিযোগ, ২ ঘণ্টা নগ্ন অবস্থায় ফাঁড়িতে বসিয়ে রাখা হয় দুই মহিলাকে। এরপর কলকাতায় সেই আন্দোলন নিয়ে আসতে চায় বিজেপি। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, আগামী বুধ এবং বৃহস্পতিবার শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় এলাকায় ধরনা কর্মসূচি নেবে মহিলা মোর্চা। কারণ, গেরুয়া শিবিরের দাবি, হাওড়ার পাঁচলা এবং মালদহের বামনগোলার যে ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, তা থেকেই পরিষ্কার রাজ্যে মহিলাদের উপর কী ভাবে অত্যাচার হয়। শুধু রাজ্য বিজেপিই নয়, এ নিয়ে সরব কেন্দ্রীয় নেতারাও। তাঁরাও লাগাতার টুইট করছেন। পাশাপাশি এ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকও করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। মালদহের ঘটনার নিন্দা করেছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাট থেকে কংগ্রেসের লোকসভার নেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। মালদহের ঘটনার নিন্দা করে মহিলাদের উপর হিংসার ঘটনায় দেশের প্রথম পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে একটি বাংলা বলেও দাবি করেন অধীর। এদিকে মালদহের ঘটনা নিয়ে শাসকদল তৃণমূলের দাবি, একটি স্থানীয় চুরির ঘটনাকে রাজনীতির রূপ দিতে চাইছে বিজেপি।