অগ্নিগর্ভ মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিবৃতির উত্তপ্ত হতে পারে সংসদের বাদল অধিবেশন। সোমবার সংসদে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদের মুখে পড়তে চলেছে বিজেপি সরকার।আপাতত সূত্রে খবর, কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধী দলগুলির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিবাদে সরব হতে চলেছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূলের সংসদীয় টিম। এই প্রতিবাদে সামিল হতে রবিবার দিল্লি পৌঁছে গেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে সকাল সাড়ে দশটায় দিল্লিতে গান্ধি মূর্তির সামনে বিরোধীপক্ষের শতাধিক সাংসদ ধর্নায় বসবেন।
সূত্রে খবর মিলছে, ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ব্যানারে এই ধর্নায় কংগ্রেসের তরফ থেকে সোনিয়া গান্ধি, রাহুল গান্ধি, মল্লিকার্জুন খাড়গেরা থাকতে পারেন।অভিষেকের নেতৃত্বে তৃণমূলের পুরো সংসদীয় টিমই এই ধর্নায় সামিল হবে। সংসদের বাইরে এই প্রতিবাদ কর্মসূচির পাশাপাশি লোকসভা ও রাজ্যসভায় ‘ইন্ডিয়া’ জোটের রণকৌশল ঠিক করতে সকাল দশটায় বিরোধী দলগুলির সংসদীয় নেতৃত্ব বৈঠকও করবেন।
বাদল অধিবেশন শুরুতেই মণিপুর ইস্যুতে উত্তপ্ত সংসদ। মণিপুরের দুই মহিলাকে যে ভাবে নিগ্রহ করা হয়েছে তাতে দেশজুড়ে উঠেছে ধিক্কার ধ্বনি।প্রধানমন্ত্রী এই ইস্যুতে মুখ খুললেও বিরোধীপক্ষ চাইছে, মোদি সংসদের মধ্যে বিবৃতি দিন এবং তাঁর উপস্থিতিতেই সেখানে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা হোক। এর পাল্টা হিসাবে রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তিসগড়ের মতো অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যে নারী নির্যাতনের ঘটনা খুঁজে বের করে বিরোধীপক্ষের উপরে পাল্টা চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে স্যাফ্রন ব্রিগেডও। ফলে এমন সম্ভাবনাও রয়েছে যে, সোমবার সংসদ খুললে সেখানে ফের এই বিষয়টি নিয়ে বিজেপি পাল্টা সওয়াল করতে পারে।
এদিকে সোমবারই রাজ্য বিধানসভার বর্ষাকালীন অধিবেশন বসছে।এই অধিবেশনেও মণিপুর প্রসঙ্গ তুলতে পারে রাজ্যের শাসক দল। বিরোধী বিজেপি আবার বিধানসভাতেও মালদা ইস্যুতে সরব হওয়ার পরিকল্পনা করছে।ফলে চলতি সপ্তাহে দিল্লিতে সংসদ ও বাংলায় বিধানসভার অধিবেশনে শাসক-বিরোধী লড়াইয়ের দিকে নজর রয়েছে সব পক্ষেরই। এদিকে মণিপুর-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নারী নিগ্রহ নিয়ে বিজেপি সংসদে আলোচনায় রাজি হলেও প্রধানমন্ত্রী বিবৃতি দেবেন কি না, তা গেরুয়া শিবির এদিন স্পষ্ট করেনি।
এদিকে বিরোধীদের তরফ কেন্দ্রকে বিদ্ধ করে অভিযোগ উঠেছে ‘মানুষকে এরা বিচার দিতে পারে না।’ বিরোধীপক্ষের সম্মিলিত জোরালো প্রতিবাদের মুখে কেন্দ্রীয় সরকার পড়তে চলেছে বুঝেই কেন্দ্রের অর্থ প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বলেন, ‘রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, মণিপুর– যে রাজ্যেই নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটুক না কেন তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। মহিলাদের উপর অপরাধ কমানোর দায়িত্ব রাজ্যের উপর বর্তায়। তাই বিরোধীপক্ষকে বলছি, এই বিষয়ে রাজনীতি না করে সোমবার সংসদে বিশদে আলোচনা করুন।’ ফলে যখন মণিপুরের মোকাবিলায় বিজেপি যেভাবে সংসদে পশ্চিমবঙ্গের মালদা, পাঁচলার ঘটনা, রাজস্থানে একাধিক নারী নিগ্রহের ঘটনা, বিহার, ছত্তিসগড়ের কিছু ঘটনাকে তুলে ধরতে চাইছে ঠিক তখনই এর তীব্র সমালোচনা করেন কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘তিন মাস ধরে মণিপুরে জাতিদাঙ্গা চলছে। ভারতে কোথাও এমন ঘটনা ঘটেছে? দেশের অন্য কোথাও যদি নারী নির্যাতন হয়, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা হোক। তবে মণিপুরের সঙ্গে অন্য জায়গার তুল্যমূল্য বিচার কেন করা হচ্ছে? কোথায় ধর্ষণ কম, কোথায় বেশি তার বিচার হচ্ছে? এঁরা জনপ্রতিনিধি? তিলের সঙ্গে তালের তুলনা করা হচ্ছে।’ সংসদেও উত্তর মালদার সাংসদ খগেন মুর্মু-সহ বিজেপি সাংসদরা মালদা, পাঁচলার ঘটনা নিয়ে হইচই করার পরিকল্পনা করেছেন।
এদিকে হাত শিবির সূত্রে খবর, সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির দাবির সঙ্গে এন বীরেন সিং-কে মনিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করার দাবি তুলেছে কংগ্রেস। এআইসিসি-র তরফে উত্তর-পূর্ব ভারতের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ জানান, ‘বীরেন সিং যতদিন মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকবেন, ততদিন শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।প্রধানমন্ত্রীর এই ঘটনায় অনেক আগেই পদক্ষেপ করা উচিত ছিল, কিন্তু তিনি তা করেননি। অন্যদিকে দৃষ্টি না ঘুরিয়ে তিনি অবিলম্বে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করুন।’ এদিকে মণিপুর নিয়ে সরব হয়েছেন, সদ্য রাজ্যসভায় নির্বাচিত হওয়া সাকেত গোখলেও। কারণ, উত্তপ্ত মণিপুরে হিংসার বলি হয়েছেন এক স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্ত্রীও। এই ঘটনা নিয়ে সদ্য রাজ্যসভার সাংসদ হওয়া তৃণমূল নেতা সাকেত গোখলে এদিন বলেন, ‘বিরোধী শাসিত রাজ্যে কিছু হলেই কেন্দ্রীয় এজেন্সি তৎপর হয়, কিন্তু মণিপুরে তাদের দেখা যাচ্ছে না। এটা থেকে স্পষ্ট, এই এজেন্সিগুলি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার যন্ত্রে পরিণত হয়েছে।’
এদিকে বিধানসভায় গেরুয়া শিবির যে মালদার ইস্যুতে বিধানসভায় সরব হতে চাইছে তার ইঙ্গিত মিলেছে রবিবার বিধানসভার সামনে বিজেপি সচেতক মনোজ টিগ্গার নেতৃত্বে পাঁচ দলীয় বিধায়ক হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদ জানানোর ঘটনায়। রাজ্য বিধানসভায় শাসক তৃণমূল আবার মণিপুরের ঘটনা নিয়ে সরব হতে পারে ঠিক তেমনই শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিরোধী বিজেপিও মালদার ঘটনা নিয়ে পাল্টা চাপ তৈরির রাস্তায় হাঁটতে চলেছে। বিধানসভায় মুলতুবি প্রস্তাবও আনতে পারে তারা বলেই আঁচ করছেন অনেকেই।