বর্ষা শুরু হতেই ফের চোখ রাঙানো শুরু করেছে ডেঙ্গি। গত বছর একের এক প্রাণ কেড়েছে মশাবাহিত এই রোগ। এবারও যে খবর আসছে তা মোটেই আশাপ্রদ নয়। স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, এবার শহর থেকেও বেশি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে গ্রামবাংলার ডেঙ্গির চিত্র। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে পাঁচ ডেঙ্গি আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। ২১ জুলাই বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে এক ডেঙ্গি আক্রান্ত মহিলার মৃত্যু হয়। রানাঘাটের বাসিন্দা ওই মহিলার নাম উমা সরকার। ১৯ জুলাই বিসি রায় হাসপাতালে এক শিশুর মৃত্যু হয়। ইন্সস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেল্থে মৃত্যু হয় এক শিশুর। গত শনিবার, মৃত্যু হয় পল্লবী দে নামে আরও এক নাবালিকার। এরপর মঙ্গলবার সকালে দক্ষিণ দমদম ২৯ নম্বর ওয়ার্ড ৭২ নম্বর এভিনিউ এ ব্লকে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় রিঙ্কি রায় নামে আরও এক গৃহবধূর।
এদিকে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে গ্রামের হাসপাতাল থেকে রেফার হয়ে আসছেন রোগীরা। ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা জেলাতে মারাত্মকভাবে বাড়ছে বলেই হাসপাতাল সূত্রে জানা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, জানুয়ারি মাস ১৬ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ২২০। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, জেলা থেকে যে সমস্ত রোগীদের কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হচ্ছে, তাঁদের অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক। শরীরের একাধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসায় সাড়া দেওয়া বন্ধ করে দিচ্ছেন রোগীরা। তাতেই মৃত্যু।
পরিসংখ্যান বলছে, গড়ে মোট আক্রান্তের ৬৫ শতাংশই গ্রামবাংলার। অন্যদিকে পূর্ব বর্ধমানের দুর্গাপুরেও হু হু করে বেড়ে চলেছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। গত বছর অবধিও শহর, শহরতলিতে ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছে। তবে এ বছরের পরিস্থিতি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে ভীষণভাবে ভাবাচ্ছে। কারণ, এবার এডিস ইজিপ্টাই মশার হানা শহরের থেকে গ্রামে অনেক বেশি। মোট আক্রান্তের ৬৫ শতাংশই গ্রামবাংলার। এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে নদিয়ার রানাঘাট-১, রানাঘাট-২, হরিণঘাটা, কৃষ্ণনগর-১, উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙা, বসিরহাট, হাওড়া পুরএলাকা। হুগলির মূলত রিষড়া, চন্দননগর, শ্রীরামপুর। আর কলকাতাও রয়েছে বিশেষ নজরে।
এদিকে এভাবে শহরে ও জেলায় পরপর থাবা বসাতেই নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য প্রশাসন। রাজ্যের রক্তভাণ্ডারে প্লেটলেটের ঘাটতি ঠেকাতে আগেভাগে গাইডলাইন জারি করে দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। তা পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন জেলার হাসপাতালে ও ব্লাড ব্যাঙ্কে। এই গাইডলাইনে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, রোগীর প্লেটলেট কাউন্ট ১০ হাজারের নীচে গেলে প্লেটলেট দিতে হবে। যেসব রোগীদের প্লেটলেট কাউন্ট ১০ থেকে ২০ হাজারের মধ্যে, সেক্ষেত্রে রক্তপাত না হলে প্লেটলেট দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আর কোন গ্রুপের প্লেটলেট প্রয়োজন, প্রেসক্রিপশনে উল্লেখ করতে হবে।
তবে এই বিষয়ে চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি সংক্রমণে রোগীর দেহে প্লেটলেট কাউন্ট কমে যায়। তখন রক্তপাত হতে পারে। সে সময়ে প্লেটলেট দিতে হয় রোগীকে। তবে ডেঙ্গির সময়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই প্লেটলেট নিয়ে খানিকটা অতিরিক্ত আতঙ্কও তৈরি হয়। অনেকেই ভেবে বসেন, ডেঙ্গি হলেই হাসপাতালে ভর্তি করে প্লেটলেট দিতে হবে। আসলে সবক্ষেত্রে এমন হয় না, প্লেটলেট কমতে শুরু করলেও তা নিয়ে প্রথমেই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। অনেক সময়ে নিয়ম মেনে রোগীর যত্ন করলেই প্লেটলেট বেড়ে যায়। কিন্তু সাধারণ মানুষের একাংশ তা না বুঝে আতঙ্কিত হলে প্লেটলেটের অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি হয়। আর এমনই কিছু খবর সামনে আসছে রাজ্যে বেশ কিছু হাসপাতাল থেকে। তাই এই জিনিস আটকাতে কড়া হাতে নামছে রাজ্য প্রশাসন।