মঙ্গলবার রাতের পর মানিককে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ফের প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে সিবিআই আধিকারিকেরা। এবার নিয়োগ দুর্নীতি নয়। একেবারে নতুন একটি মামলা যেখানে সামনে এসেছে টাকা নিয়ে পছন্দের জায়গায় চাকরি করার অভিযোগ। আর সেই মামলাতেই ফের বিপাকে পড়েছেন প্রাক্তন প্রাথমিক পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। মঙ্গলবার এ নিয়ে মানিককে জিজ্ঞাসা করার নির্দেশ সিবিআইকে দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এরপর মঙ্গলবার প্রেসিডেন্সি সংশোধানাগের হাজির হতে দেখা গিয়েছিল সিবিআই আধিকারিকদের। এরপর ফের বুধবার সকাল ৯ টায় সিবিআইয়ের একটি দল প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে যায়। এই দলে ছিলেন মলয় দাস, ওয়াসিম আক্রম ও ধ্রুব নামে সিবিআইয়ের ৩ আধিকারিক৷ দলে সাইবার এক্সপার্টও রয়েছেন বলে সূত্রে খবর। এরপর সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া সংক্রান্ত একটি দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরেই নতুন করে শুরু হয়েছে জলঘোলা। সবশুনে গোটা ঘটনাকে ‘ডিজাইনড কোরাপশন’ বলে উল্লেখও করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। কারণ, মামলাকারী যে অভিযোগ এনেছেন তাতে দেখা যাচ্ছে মূলত চারটি জেলা বীরভূম, বাঁকুড়া, হুগলি এবং মুর্শিদাবাদে এই দুর্নীতি হয়েছে। ২০২০ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এই চার জেলায় কোনও শূন্যপদ দেখানো হয়নি। ফলে বাধ্য হয়েই এই চার জেলার স্কুলে যাঁরা চাকরি নিতে ইচ্ছুক ছিলেন, তাঁদের দূরবর্তী কোনও জেলার স্কুল বাছতে হয়। দূরের জেলার স্কুল বাছার পরেই বিস্ময়কর ভাবে তাঁরা জানতে পারেন, ওই চার জেলায় ২৩ দিন পরেই দেখানো হয় শূন্যপদ। শুধু তাই নয়, সেখানে চারশো জন চাকরিপ্রার্থী নিযুক্তও হন। পছন্দের স্কুলে নিয়োগের বিনিময়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা করে মোট চার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে বলে সন্দেহও প্রকাশ করেছেন অভিযোগকারী। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের আরও আশঙ্কা, দালালের প্রাপ্য ধরলে এই দুর্নীতির অঙ্ক আরও বাড়বে।
বুধবার এই প্রসঙ্গে মানিক ভট্টাচার্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন সিবিআই আধিকারিকেরা এমনটাই জানা গেছে। জানা গিয়েছে, ২০২১ সালের ৬ জুলাই প্রথম বিজ্ঞপ্তি বের হয়। তারপর ৩০ জুলাই লিস্ট। এর মাঝে শূন্যপদের বিজ্ঞপ্তি। সেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয়ে মানিকের কী ভূমিকা ছিল বা তিনি বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে কী কী জানতেন বা এই কয়েক দিনের মধ্যে কত টাকার লেনদেন এসবই জিজ্ঞাসা করা হবে মানিককে। কারণ, সিবিআই আধিকারকদের ধারনা, টাকার বিনিময়ে পোস্টিং দেওয়া হবে বলে পরিকল্পিত ভাবেই কি ওই সব জায়গার ভ্যাকেন্সি দেখানো হয়নি।
এদিকে সিবিআই সূত্রে খবর, এই প্রশ্নোত্তর পর্ব ভিডিওগ্রাফি করা হবে। কারণ, মানিক ভট্টাচাৰ্য যে বার বার তদন্তে অসহযোগিতা করতেন এবার তার প্রমাণ রাখতে চান গোয়েন্দারা। এখানে আরও একটা কথা মনে রাখতেই হবে এই নতুন মামলায় কোনও রক্ষাকবচ নেই মানিকের। তাই তাঁর গ্রেফতার হওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল।