মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিককে অ্যামাজন পে-র ট্রানজাকশন এর নাম করে ভারতীয় মুদ্রায় ৩৩ লক্ষ টাকার প্রতারণা। এই ঘটনা সামনে আসতেই ইন্টারপোলের মাধ্যমে দিল্লি সিবিআইতে অভিযোগ জানানো হয়। এরপর এই মামলার তদন্তভার দিল্লি সিবিআই হস্তান্তর করে কলকাতা পুলিশকে। এরই সূত্র ধরে তদন্তে নামে বিধান নগর সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ। এই তদন্তেই সামনে আসে ভুয়ো কল সেন্টারে খোঁজ। এরপর সেখানে হানা দিয়ে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় এই প্রতারণা চক্রের মূল চক্রী মহম্মদ রিজওয়ানকেও।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত ৩ জানুয়ারি দিল্লির সিবিআই সদর দফতর থেকে একটি অভিযোগ বিধান নগর সাইবার ক্রাইম থানায় ফরওয়ার্ড করা হয়। তাতে তিনি জানান, তাদের অ্যামাজন সংস্থার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন কাস্টমার মিস লইস রোমানো অ্যামাজনের ফ্রড ডিপার্টমেন্টে অভিযোগ করেন। যে এক ব্যক্তি তাকে ভয়েজ ওভার ইন্টারনেট প্রটোকলের মাধ্যমে ফোন করে জানায় যে তাঁর অ্যামাজন অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হয়েছে। সেটি ঠিক করার জন্য তাকে ইমেইল মারফত একটি লিংক পাঠায় ওই ব্যক্তি। এই লিংকের মাধ্যমে ওই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকের মোবাইলে টিমভিউয়ার অ্যাপ ডাউনলোড করানো হয়। এরপরে এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকের অ্যাকাউন্ট থেকে ৪০ হাজার ইউএস ডলার যা ভারতীয় মুদ্রায় আনুমানিক ৩৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারকের দল।
অ্যামাজনের অ্যান্টি ফ্রড ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু করলে তারা জানতে পারে সেই ফোন কলটি এসেছিল সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ অঞ্চল থেকে। এরপরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যামাজন সংস্থার পক্ষ থেকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দিল্লির অ্যামাজন দফতরে বিষয়টি জানানো হয়। দিল্লির অ্যামাজনের হেড অফিসের পক্ষ থেকে দিল্লি সিবিআই এর কাছে অভিযোগটি জানানো হলে এই অভিযোগটি বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানায় ফরওয়ার্ড করা হয়। ঘটনা তদন্ত শুরু করে যে অ্যাড্রেস বা লোকেশন অ্যামাজনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল পুলিশ সেই লোকেশনে গিয়ে জানতে পারে সেখানে কোনও ধরনের অফিস নেই। এরপরেই প্রতারকের ইমেইল আইডি এবং মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে পুলিশ খোঁজ পায় সল্টলেক সেক্টর ফাইভ এর ডিএন ব্লকে একটি অফিস চালানো হচ্ছে। এরপরই মঙ্গলবার সেক্টর ফাইভ এর ডি এন ২১ অফিসের ছয় তলায় হানা দেয় বিধান নগর সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ। পুলিশ সেখানে গিয়ে খোঁজ পায় দুটি কলসেন্টারের। একটির নাম বর্ডারলেসা সল্যুশন এবং অপরটির নাম জেড ওয়েব মিডিয়া। এরপরেই ওই অফিস থেকে এই চক্রের মূল পান্ডা মোঃ রেজওয়ান সহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ। তাদের কাছ থেকে একটি কম্পিউটার, দুটি ল্যাপটপ, সাতখানা মোবাইল ফোন, একটি রাউটার, একটি অ্যাটেন্ডেন্স রেজিস্টার, একটি রাবার স্ট্যাম্প, একটি ব্যাংক চেক বই, একটি প্যান কার্ড এবং প্রচুর পরিমাণ নথি উদ্ধার করে পুলিশ। এই চক্রের সঙ্গে আরো কারা জড়িত আছে সে বিষয়ে তদন্ত করে দেখছে বিধান নগর সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ।