রুদ্রনীলের বিরুদ্ধে এফআইআর রাজন্যার, ভুল কিছু বলেননি জানালেন বিজেপি নেতা

বিজেপি নেতা তথা অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের নামে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করলেন তৃণমূলের ছাত্রনেত্রী রাজন্যা হালদার। অভিযোগ, ‘বোন’ বলে সম্বোধন করে রাজন্যার বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য করেছেন বিজেপি নেতা রুদ্রনীল। শনিবার সোনারপুর থানায় বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর দায়ের করেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এই নেত্রী।

রুদ্রনীল রাজন্যাকে উদ্দেশ্য় করেই বলেছিলেন, ‘রাজন্যা বোনকে বলি, খুব সাবধানে থাকো। নিজের ঘরের দরজাটা ভাল করে এঁটে বন্ধ করে রেখো। তোমার ঘর কত বড়, সেখানে ১, ২ কোটি, ৫০ কোটি ঢোকানো যাবে কি না, তা দেখে নিচ্ছে। সে সব টাকা তোমার ঘরে ঢোকানো হবে। তবেই দলে তোমার জায়গায় পাকা হবে। এই মুহূর্তে তোমার কী কী আছে আর কী কী নেই, সেসব দেখা হচ্ছে। তোমার আশপাশে দেবাংশুকে দেখে বুঝে নাও।’

রাজন্যার অভিযোগ, নিজের বক্তব্য রাখার সময় রুদ্রনীল ঘোষ তাঁকে বোন বলে সম্বোধন করে অশালীন মন্তব্য করেছেন। সমস্ত শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছেন বিজেপি নেতা। এই অভিযোগ তুলে শনিবার নেতার বিরুদ্ধে সোনারপুর থানায় এফআইআর দায়ের করেন রাজন্যা।

এফআইআর দায়ের করার পর রাজন্যা বলেন, ‘রুদ্রনীল ঘোষ যে মন্তব্য করেছেন তা মারাত্মক। উনি সাক্ষাৎকারে বলছেন কত টাকায় রাজন্যাকে কেনা হবে। যা অত্যন্ত অবমাননাকর। আমার কথা যারা শুনছেন তাদের মা-বোনেদের নিয়ে যদি এই মন্তব্য করা হত! ভেবে দেখুন তো কতটা অসম্মানজনক। আমাদের নেহাত সহবত শিক্ষা আছে। নাহলে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি একবার নির্দেশ দিতেন, তাহলে ওঁর কী হাল হত, কল্পনাও করতে পারতেন না।’ এরপরই রবিবার এই ঘটনায় মুখ খোলেন রুদ্রনীল। বলেন, ‘প্রথমে বলব এইভাবে পুলিশকে ব্যবহার করে মিথ্যে কেস তৈরি করার যে প্রকল্প এবং তার যে পরম্পরা রয়েছে তা আবারও প্রমাণিত হল। আমি যদি কোনও কথা বলে থাকি এবং তা যদি শুনেও থাকতেন সকলে সেক্ষেত্রে তাঁরা জানবেন তৃণমূল দল বিভিন্ন লুঠের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মা বোনেদের জড়িয়ে নিচ্ছেন।’ উদাহারণ দেওয়ার জন্য তিনি ‘পার্থ-অর্পিতা, সায়নী ঘোষ, নুসরত জাহান’ প্রসঙ্গ টেনে রুদ্রনীল ঘোষ বলেন, ‘আর্থিক দুর্নীতি, ফ্ল্যাটে টাকা রাখা এই সমস্তর সঙ্গে জড়ানো হচ্ছে। আমি বলেছিলাম এই নিয়ে মা বোনেদের সতর্ক থাকা উচিত।’ আর এখানেই রুদ্রনীলের প্রশ্ন, ‘এটা কি কোনওভাবে তাঁদের অবমাননা করা?’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘মা বোনেরা সাবধানে থাকবেন না হলে পরিষ্কার আপনাদের ঘরে কত জায়গা রয়েছে তা জেনে তৃণমূল নেতারা টাকা ঢোকানোর জন্য ভাবনা চিন্তা শুরু করেছে। কারণ এটা সংবাদ মাধ্যমেই দেখেছি যে ঘর থেকে কোটি কোটি টাকা বার হচ্ছে। এর মধ্যে অসম্মান কোথায় হল! অবমাননা কোথায় হল! বরং মা বোনেদের জড়িয়ে তৃণমূলের অবমাননার চক্রান্ত করছে। কোটি কোটি টাকা এদিক ওদিক করা, তার উদাহারণ তো তৃণমূল ‘সেট’ করেছে। সেক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়কেই সতর্ক থাকতে হবে। এই গোটা ঘটনাই পরিকল্পিত। পুলিশকে ব্যবহার করে যে ‘হ্যারাস’ করার চেষ্টা ওরা করে এটি সেই ঘটনার পরম্পরা।’

প্রসঙ্গত, প্রসঙ্গত, তৃণমূলের একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে একঝাঁক যুবদের মুখ উঠে আসতে দেখা যায়। দলের পোড়খাওয়া নেতাদের পাশাপাশি এবার একুশের ভরা মঞ্চে দেখা গিয়েছিল তৃণমূলের ছাত্র-যুবদেরও। ধর্মতলার উপচে পড়া ভিড়ে ঝাঁঝালো ভাষণে মঞ্চ মাতিয়েছিলেন রাজন্যা হালদারের মতো মুখও। এখানে আরও একটা কথা বলে রাখা প্রযোজন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরি করা ‘জয়ী’ ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য রাজন্যা হালদার। মাস কয়েক আগে ধর্মতলায় শহিদ মিনারের পাদদেশে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে ২ দিনের ধরনা চলাকালীন তৃণমূল ছাত্র-যুবদের গান শুনে এই ব্যান্ডটি তৈরি করে দিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। জনা কয়েকের তৈরি এই গানের দলকে নিজেই বেশ কিছু বাদ্যযন্ত্রও সরবরাহ করেন। সেই ব্যান্ডের সদস্যই প্রেসিডেন্সির ছাত্রী রাজন্যা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 1 =