গত কয়েক বছর ধরে সরকারি হাসপাতালের অত্যাধুনিক রেডিয়োলজির পরীক্ষাগুলি করা হয় পিপিপি মডেলে চলা হাসপাতাল সংলগ্ন ডায়গনস্টিক সেন্টারে। আর এই পরীক্ষা করা নিয়েই উঠেছে বিস্তর অভিযোগ। এই অভিযোগ জানার পরই পদক্ষেপ করা হল স্বাস্থ দফতরের তরফ থেকে। কারণ, স্বাস্থ্য দফতর চাইছে এই পিপিপি ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলিকে আরও শৃঙ্খলাপরায়ণ করতে। একইসঙ্গে সরকারি অর্থ অপচয়ও ঠেকাতে। এই লক্ষ্যেই স্বাস্থ্য দফতরের তরফ থেকে জারি করা হয়েছে এক নির্দেশিকাও। এই স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) জারি করা হয় সব জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং সব মেডিক্যাল কলেজের সুপার তথা উপাধ্যক্ষদের উদ্দেশে। তাতে বলা হয়েছে, একমাত্র নির্দিষ্ট পদমর্যাদার সিনিয়র ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশনেই মান্যতা দিয়ে টেস্ট করবে পিপিপি ডায়গনস্টিক সেন্টার।
প্রসঙ্গত, অনেক দিন ধরেই অভিযোগ উঠছিল, নানা সময়ে একশ্রেণির হাসপাতাল কর্মীদের সঙ্গে যোগসাজসে ভুয়ো পরীক্ষা ও ভুয়ো বিল করেন ওই সব ডায়গনস্টিক সেন্টারের কর্মীদের একাংশ। এমনই এক ঘটনা ঘটে গত জুনে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে। যা নিয়ে তুলকালাম হয় স্বাস্থ্য দফতরে। এরপরই তদন্তে নেমে জানা যায়, সিনিয়রদের অন্ধকারে রেখে কিছু জুনিয়র ডাক্তারের লেখা ভুয়ো প্রেসক্রিপশনে জাল পরীক্ষা করা হয়েছে। এরপর কড়া পদক্ষেপ করে স্বাস্থ্য দফতর। গত ১ জুলাই স্বাস্থ্য দফতরের তরফ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়, প্রেসক্রিপশন ও রিপোর্ট সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পোর্টালে রিয়েল-টাইম আপডেট করতে হবে।
এরপর এবার এই এসওপি প্রকাশ করা হল স্বাস্থ্য দফতরের তরফ থেকে। যেখানে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওযা হয়েছে, ইমার্জেন্সি, ইন্ডোর, আউটডোরের রোগীদের প্রেসক্রিপশন কারা লিখবেন, তাতে কোন কোন পরীক্ষা হবে। শুধু তাই নয়, এর পাশাপাশি নির্দিষ্ট পরীক্ষার জন্য প্রেসক্রিপশনে ব্যাখ্যা দিতে হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের এই নির্দেশিকায়। একইসঙ্গে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনের দায়িত্বও। যেখানে স্পষ্ট নির্দেশ, ইমার্জেন্সি থেকে কোনও রোগীকে পিপিপি ডায়গনস্টিকে পাঠানো যাবে না এমআরআই পরীক্ষার জন্য। সে ক্ষেত্রে রোগীকে আগে ভর্তি করতে হবে। তবে ইমার্জেন্সি থেকে ডিজিটাল এক্স-রে এবং সিটি স্ক্যানের সুপারিশ করা যাবে। যদিও সে ক্ষেত্রে প্রেসক্রিপশনে ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসারের সই এবং পরীক্ষাটি কেন জরুরি, তার ব্যাখ্যাও দিতে হবে তাঁকে।
সঙ্গে এও জানানো হয়েছে, প্রেসক্রিপশনে করতে হবে পুরো সই। সঙ্গে থাকতে হবে তাঁর রেজিস্ট্রেশন নম্বরের উল্লেখ। ইন্ডোরে ভর্তি রোগীদের ক্ষেত্রে এই সব টেস্টের জন্য ন্যূনতম অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর স্তরের শিক্ষক-চিকিৎসক এবং স্পেশ্যালিস্ট মেডিক্যাল অফিসার অথবা বেড ইন-চার্জকে করতে হবে প্রেসক্রিপশন। অন্যথায় সেই প্রেসক্রিপশন গ্রাহ্য হবে না পিপিপি ডায়গনস্টিক সেন্টারে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রতিটি প্রেসক্রিপশনের রিকুইজিশন করতে হবে তিন কপি করে। এখানেই শেষ নয়, এই নির্দেশিকায় এও বলা হয়েছে, ডেপুটি অথবা অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারকে রোজ কমপক্ষে একবার ভিজিট করতে হবে পিপিপি ডায়গনস্টিক সেন্টার। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুধু উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (১)-কে এই বিষয়গুলি দেখভালের জন্য নোডাল অফিসার বহালই করবেন না, তাঁকে নিজেকেও ন্যূনতম ৫ শতাংশ বিল পরখ করে দেখে নিতে হবে।