যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া স্বপ্নদীপের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনটাই জানিয়েছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। একইসঙ্গে তিনি এও জানান, ‘যাদবপুরে যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে র্যাগিংয়ের যে অভিযোগ সামনে এসেছে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। মুখ্যমন্ত্রী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ।’ সঙ্গে এ প্রশ্নও করেন, ‘ওই জায়গায় কয়েকজন কি আচরণ করেছেন? কে কে ছিল? নতুন ছেলেদের কেন আতঙ্কে থাকতে হবে ওই সম্মানজনক প্রতিষ্ঠানে! অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।’ এখানে বলে রাখা শ্রেয় বৃহস্পতিবারই স্বপ্নদীপের বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। আশ্বাসও দেন পূর্ণাঙ্গ তদন্তের।
এরই প্রেক্ষিতে কুণাল ঘোষ এও জানান, ‘হস্টেলের সকলে যেন সহযোগিতা করেন। তাঁদের বাড়ির লোকেরা যেন প্রভাবশালীদের ধরাধরি না করেন। এই সব বরদাস্ত করা হবে না।’ পাশাপাশি কুণাল এ প্রশ্নও তোলেন, ‘কেন পোশাক ছিল না? কেন সে ভয়ঙ্কর সংলাপ বলল? তদন্ত চাই। কারা এর পেছনে আছে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। নামীদামী লোকদের কাছে অনেকে যাচ্ছেন। কীভাবে মামলা করে ঠেকানো যায়। আইনজীবীর অভাব নেই বুদ্ধি দেওয়ার। কিন্তু বিরোধীদের অনুরোধ এটা করতে দেবেন না।’
এদিকে বৃহস্পতিবারের এই ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষা দফতর ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বর্তমানে র্যাগিং সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশাবলী ও যতগুলি আইন ও নিয়মাবলী আছে তা নিয়ে রাজ্য সরকার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করবে। নিয়ম মেনে তৈরি হবে কমিটি।
তবে স্বপ্নদীপের এই মৃত্যুর পর যত একের পর এক তথ্য সামনে আসছে ততই নিশ্চিত হচ্ছে ব়্যাগিংয়ের তত্ত্বই। কারণ, প্রশ্ন সবার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে যে, কীভাবে তিনতলার বারান্দা থেকে পড়ে গেলেন স্বপ্নদীপ বা তাঁর পরণে কেন কোনও পোশাক ছিল না আর কেনই দুপুরের পর থেকে অদ্ভূত মতো করছিলেন স্বপ্নদীপ তার উত্তর নেই কারও কাছে। কেউ বলছেন কার্নিশ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে পড়ুয়া, কেউ বলছেন মাত্রাতিরিক্ত র্যাগিংয়ের ফলেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। তবে বুধবার রাতে এমন কিছু অস্বাভাবিক যে ঘটেছিল, তা একবাক্যে মেনে নিচ্ছেন সকলে। এদিকে যাদবপুরের কয়েকজন পড়ুয়াকে ইতিমধ্যেই থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে যাদবপুর থানার পুলিশ। তাঁদের দাবি, স্বপ্নদীপকে সমকামী বলে হেনস্থা করা হচ্ছিল টানা তিনদিন ধরে। নানা সময়ে তাঁকে উলঙ্গ হয়ে হস্টেলের ব্যালকনিতে ঘুরতে বলা হয়। বিবস্ত্র অবস্থা নাচতেও বাধ্য করা হচ্ছিল। এ ছাড়াও নানা সময়ে তাঁকে নানা ভাবে শারীরিক এবং মানসিকভাবে হেনস্তা করা হচ্ছিল, তাতেই দিশাহারা হয়ে পড়ে স্বপ্নদীপ। এদিকে সমগ্র ঘটনার তদন্তে নেমেছে যাদবপুর থানা।