প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে একের পর এক মামলায় চরম বিপাকে চাকরিপ্রার্থীরা। কারণ, যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণ নিয়ে বারবার উঠছে প্রশ্ন। চাকরিপ্রার্থীদের বক্তব্য, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পর পদ্ধতি নিয়ে বারবার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ নির্ধারিত সময়ে ইন্টারভিউ ও অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট নিলেও কবে প্যানেল বেরোবে তা নিয়ে কোনও তথ্যই নেই তাঁদের কাছে। ফলে প্রবল অনিশ্চিয়তায় পড়ছেন তাঁরা। এদিকে সংরক্ষিত প্রার্থীদের নিয়োগে যোগ্যতামানের মামলার প্রেক্ষিতে প্যানেল প্রকাশে ৩০ দিনের স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রাথমিক টেটে সফল সংরক্ষিত শ্রেণির কিছু প্রার্থী আরটিআই করে জানতে পারেন তাঁরা ৮২ নম্বর পেয়েছিলেন। এদিকে পর্ষদের বিধি অনুযায়ী, যোগ্যতামান ৮২.৫ বলে তাকে ৮৩ ধরা হতো। কিন্তু কেন্দ্রীয় টেট এবং পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের উচ্চ প্রাথমিক টেটে সংরক্ষিতদের ক্ষেত্রে ৮২ নম্বরের যোগ্যতামানের উল্লেখ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন সংরক্ষিত প্রার্থীদের একাংশ। সেই মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রায় দেন, ৮৩-র বদলে ৮২ পেলেই টেটে সফল বলে ধরা হবে। এ নিয়ে মিঠুন কুমার দোলুই নামে টেটে সফল এক প্রার্থী পালটা ডিভিশন বেঞ্চে যান। ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্য দু’রকম মত প্রকাশ করেন। একজন জানান, ৮২ পেলে সফল বলে ধরা হবে, অন্যজন যান ৮৩-র পক্ষে। এদিকে ডিভিশনের বেঞ্চের রায় বিভাজিত বলে এই মামলা অন্য বেঞ্চে বিচারাধীন। শীঘ্রই শুনানি হওয়ার কথা। আবার, ২০২০-২২ শিক্ষাবর্ষে যাঁরা ডিএলএড প্রশিক্ষণে ভর্তি হন, তাঁরা সেপ্টেম্বরে প্রাথমিক পর্ষদের তরফ থেকে যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় তাতে ১১,৭৬৫ জন নিয়োগের আগে প্রশিক্ষণ শেষ করতে পারেননি। তাঁদের তরফ থেকে নিয়োগে আবেদনের সুযোগ দিতে হবে বলে আর্জি জানিয়ে সিঙ্গল বেঞ্চে মামলা হয়। এই মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় রায় দেন, পর্ষদকে দ্রুত পরীক্ষা নিয়ে এঁদের নিয়োগে আবেদনের সুযোগ দিতে হবে। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সাদেক বিশ্বাস ও শ্রাবণী নায়েক নামে দু’জন প্রার্থী ডিভিশন বেঞ্চে যান। সেখানে ডিভিশন বেঞ্চ রায় দেয়, ২০২০-২২ ব্যাচ নিয়োগে বসতে পারবে না। কারণ নিয়ম অনুযায়ী, নিয়োগ-বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন পর্যন্ত কোনও প্রার্থীর সবরকম যোগ্যতা থাকা বাধ্যতামূলক। এরপর ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের ভিত্তিতে পর্ষদ গত ১৩ এপ্রিল নোটিসে জানায়, ওই ব্যাচের প্রার্থীরা এই ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ায় সুযোগ পাচ্ছে না। এই রায় চ্যালেঞ্জ হয় সুপ্রিম কোর্টে। শীর্ষ কোর্টের বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের ডিভিশন বেঞ্চ হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের সেই রায়ে স্থগিতাদেশ জারি করেন।
আবার, প্রাথমিকে বিএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের নিয়োগের বিরোধিতা করে ডিএলএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা সুপ্রিম কোর্টে যান। বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসুর ডিভিশন বেঞ্চ শুক্রবার রায় দেয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে শুধু ডিএলএড-রাই যোগ্য। ফলে বিএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত শিক্ষকতা করতে পারেন। এদিকে পর্ষদের তরফ থেকে যে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে তাতে বলা হচ্ছে, আদালতের নির্দেশে বিএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের প্যানেল থেকে বাদ দিতে হবে।
মামলার এই ঘোর প্যাঁচে পড়ে নিজেদের ভবিষ্যত সম্পর্কে অনিশ্চয়তায় ২০১৭-র প্রাথমিক টেটে সফল প্রার্থীরা। তাঁরা জানান, ‘বিভিন্ন মামলার জন্য প্রাথমিকের এই পৌনে ১২ হাজার নিয়োগে জটিলতা বেড়েই চলেছে। ৬ বছর ধরে অপেক্ষায় আছি। আমরা চাই, পর্ষদ তৎপর হয়ে বিভিন্ন জটিলতা মিটিয়ে পুজোর আগেই আমাদের প্যানেল প্রকাশ করুক।’