স্বাধীনতা দিবসে সম্মান জানানো হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী এবং কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনীর ৭৬ জন বীরকে

সশস্ত্র বাহিনী এবং কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর ৭৬ জনকে স্বাধীনতা দিবসে তাঁদের বীরত্বের প্রতি সম্মান দেখিয়ে সশস্ত্র বাহিনী এবং কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর ৭৬ জন বীরত্বের পুরস্কার পাচ্ছেন। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে এই বীরদের পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্তে অনুমোদন দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। এর মধ্য রয়েছে ৪টি কীর্তি চক্র এবং ১১টি শৌর্য চক্র। চারজন কীর্তি চক্র বিজয়ীর সকলেই মরণোত্তর সম্মান পাচ্ছেন। এঁরা সকলেই কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনীর সদস্য ছিলেন। এর পাশাপাশি ১১ জন শৌর্য চক্র বিজয়ীর মধ্যেও পাঁচজন মরণোত্তর সম্মান পাচ্ছেন। সশস্ত্র বাহিনীর কর্মীদের পাশাপাশি সিএপিএফ কর্মীরাও শৌর্য চক্র পাচ্ছেন। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, এবারের শৌর্যচক্র প্রাপকদের তালিকা –

মেজর বিজয় ভার্মা: ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে ১০টি সফল অভিযান পরিচালনা করেছেন মেজর বিজয় ভার্মা। নির্মূল হয়েছে ২২ জন দাগী সন্ত্রাসীবাদী। দৃষ্টান্তমূলক নেতৃত্ব এবং বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য তাঁকে শৌর্য চক্রে ভূষিত করা হয়েছে।

মেজর বিকাশ ভম্ভু এবং মেজর মোস্তাফা বোহর (মরণোত্তর): দুই সেনা সদস্যকেই তাঁদের অদম্য সাহস, দৃঢ়তা এবং ব্যতিক্রমী পেশাদারিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে মরণোত্তর শৌর্য চক্র দেওযা হয়েছে। অরুণাচল প্রদেশে এক অভিযানে গিয়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিলেন তিনি। অভিযান সফল হওয়ার পর, তাঁদের হেলিকপ্টারে আগুন ধরে গিয়েছিল। চাপের মুখেও মাখা ঠান্ডা রেখে তাঁরা কপ্টারটিকে অসামরিক এলাকা এবং সেনার এক অস্ত্র ভান্ডার থেকে সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যায়। নাগরিকদের রক্ষা করতে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তারা।

মেজর শচিন নেগি: ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ছয়টি সফল সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী অভিযানে তিনি অসাধারণ পেশাদারিত্ব এবং সাহসের নিদর্শন রেখেছেন। ওই ৬ অভিযানে মোট ১৪ জন জঙ্গির মৃত্যু হয়েছিল। জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় তিনি একটি মোবাইল ভেহিকেল চেক পোস্টও স্থাপন করেছেন।

মেজর রাজেন্দ্র প্রসাদ জাট: অপারেশন ওয়াটেরহালের সময় ব্যতিক্রমী বীরত্ব ও নেতৃত্বের নিদর্শন রেখেছিলেন মেজর রাজেন্দ্র প্রসাদ জাট। ওই অভিযানে তিনজন দাগী সন্ত্রাসবাদীকে নির্মূল করা হয়েছিল। প্রতিকূল আবহাওয়া এবং প্রতিকূল ভূখণ্ডে অভিযান পরিচালনার জন্য তিনি কৌশলী পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন। তাঁর গুলিতে এক জঙ্গির মৃত্যু হয়েছিল আর আরেক জঙ্গি গুরুতর আহত হয়েছিলেন। তবে এক সঙ্গীকে রক্ষা করতে, সন্ত্রাসবাদীদের গোলাগুলির বিরুদ্ধে নিঃস্বার্থভাবে এগিয়ে যাওয়ার কারণেই তিনি বেশি পরিচিতি পেয়েছেন।

মেজর রবিন্দর সিং রাওয়াত: ২০২০ সালের মার্চ থেকে, ২৮ জন দাগী সন্ত্রাসবাদীকে নির্মূল করেছেন মেজর রবিন্দর সিং রাওয়াত। ১১টি সফল অভিযানে অসামান্য নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০২২-এর ৩০ অগস্ট, শোপিয়ান জেলার এক গ্রামে তিন সন্ত্রাসবাদী লুকিয়ে আছে বলে খবর পেয়েছিলেন তিনি। সন্ত্রাসবাদীরা পালানোর চেষ্টা করলে, তিনি নিজে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। আরেকটি ক্ষেত্রে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত এক সন্ত্রাসবাদীকে খতম করতে একটি কংক্রিটের নালায় প্রবেশ করতেও পিছপা হননি তিনি।

হাবিলদার বিবেক সিং তোমর (মরণোত্তর): কাশ্মীরের সুউচ্চ পাহাড়ি এলাকার এক সেনা ঘাঁটিতে নিযুক্ত ছিলেন হাবিলদার বিবেক তোমর। ২০২৩-এর ১০ জানুয়ারি, তুষারাবৃত পাহাড়ের এক সেনা তাঁবু থেকে ঘন ধোঁয়া বের হতে দেখেছিলেন তিনি। সতীর্থদের প্রাণের জুঁকি রয়েছে বুঝেই তিনি নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সেই ধোঁয়ায় ভরা তাঁবুতে ঢুকেছিলেন। ধোঁয়ায় শ্বাস নেওয়া ছিল দুষ্কর। আগুনে ঝলসে যাওয়ার ঝুঁকিও ছিল। তাও ওই প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে ৩৬ ঘন্টা ধরে লড়াই করে তিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন। বড় দুর্ঘটনা এড়িয়েছিল সেনাবাহিনী। শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এই হাবিলদার।

নায়েক ভীম সিং: কমব্যাট টিম কমান্ডার ছিলেন নায়েক ভীম সিং। ২০২২-এর ২৬ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ কাশ্মীরের এক গ্রামে সন্ত্রাসবাদীদের লুকিয়ে থাকার খবর পেয়ে ওই গ্রামে হানা দিয়েছিল সেনা। অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নায়েক ভীম সিং। সন্ত্রাসবাদীদের গুলিতে এক সেনা অফিসার আহত হয়েছিলেন। জঙ্গিরা নিশানা করে অসামরিক ব্যক্তিদেরও। নায়েক ভীম সিং ওই সন্ত্রাসবাদীদের দমন করার পাশাপাশি আহতদের উদ্ধারও করেন। তাঁর ব্যতিক্রমী সাহসিকতা এবং সচেতনতাকে স্বীকৃতি দিচ্ছে সরকার।

কুলভূষণ মান্থা (মরণোত্তর): ২০২২ সালের অক্টোবরে জম্মু ও কাশ্মীরে এক জঙ্গল জঙ্গি বিরোধী অভিযানে অসামান্য সাহসের নিদর্শন রেখেছিলেন রাইফেলম্যান কুলভূষণ মান্থা। দুই সন্ত্রাসবাদীর সঙ্গে একেবারে খালি হাতে লড়াই করেছিলেন তিনি। বন্দুকযুদ্ধে আহত হওয়ার পরও পলায়নরত সন্ত্রাসবাদীদের ধাওয়া করেছিলেন তিনি। সহকর্মীদের রক্ষা করতে গিয়ে নিজের প্রাণ বিসর্জন দেন তিনি।

এছাড়া, জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের কর্মী সইফুল্লাহ কাদরি এবং সিআরপিএফ কর্মী গমিত মুকেশ কুমারকেও শৌর্য পদক দেওয়া হচ্ছে। সইফুল্লাহ কাদরি এই সম্মান পাবেন মরণোত্তর।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − fourteen =