১৫ অগাস্ট থেকে পরপর চাঁদের ছবি তুলেই চলেছে ইসরোর চন্দ্রযান-৩। ১৫ অগাস্ট তোলা ওই ছবি ভিডিয়ো আকারে প্রকাশ করেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। অন্যদিকে ১৭ অগাস্টও আরও কিছু ছবি তুলেছে চন্দ্রযান-৩-এর ক্যামেরা। ল্যান্ডার পজিশন ডিটেকশন ক্যামেরা বা এলপিডিসি চাঁদের ছবিগুলি তুলেছে বলে জানাচ্ছে ইসরো। সেটিও ভিডিয়ো আকারে প্রকাশ করেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।
১৭ সেকেন্ডের চাঁদের ওই ছবিতে ধূসর রঙের চাঁদের গর্তগুলি ভীষণ ভাবে স্পষ্ট। এবড়ো-খেবড়ো পৃষ্ঠ, খানা-খন্দে ভরা। এর আগেও চাঁদের বেশ কয়েকটি ছবি শেয়ার করেছিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। প্রত্যেকটি ছবিই তুলেছে ইসরোর চন্দ্রযান-৩।
এদিকে ইসরোর তরফ থেকে জানা যাচ্ছে শুক্রবারবিকেলে ৪টের সময় ল্য়ান্ডার ‘বিক্রম’ জটিল ‘ডিবুস্টিং’ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ইসরো তরফে জানানো হয়েছে, এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপটি ২৩ অগাস্ট চাঁদের পিঠে নির্ধারিত অবতরণের জন্য মহাকাশযানটির চূড়ান্ত প্রস্তুতির অংশ এই ডিবুস্টিং প্রক্রিয়া। ‘ডিবুস্টিং’ প্রক্রিয়ায় মহাকাশযানের থ্রাস্ট কম করে এটিকে ধীর করা হয়। ২৩ অগাস্ট অবতরণ করবে চন্দ্রযান-৩। এদিকে শুক্রবার ল্যান্ডার মডিউলটি সফল ভাবে একটি ডিবুস্টিং কৌশল অতিক্রম করেছে। এটির কক্ষপথকে ১১৩ কিলোমিটার x ১৫৭ কিমিতে কমিয়ে দিয়েছে।
দ্বিতীয় ডিবুস্টিং অপারেশনটি ২০ আগস্ট, ২০২৩-এর জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে। রাত ২টোর সময় হবে এই প্রক্রিয়া। এর আগে বৃহস্পতিবার ইসরোর তরফে টুইটে জানানো হয়, ১৭ অগাস্ট প্রোপালশন মডিউল থেকে আলাদা হয়ে গেছে চন্দ্রযান ৩-এর ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। ল্যান্ডারটিতে রয়েছে ২৬ কিলোগ্রাম ওজন বিশিষ্ট রোভার। এটি চাঁদের পৃষ্ঠে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে। ২৩ অগাস্ট, ভারতীয় সময় প্রায় ৫টা ৪৭ মিনিটে চন্দ্রের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করবে চন্দ্রযান-৩। এখানে একটা তথ্য দিয়ে রাখা প্রয়োজন, চন্দ্রযান ৩ হল চন্দ্রপৃষ্ঠের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযানের অবতরণের এর জন্য ভারতের দ্বিতীয় প্রচেষ্টা। এর আগে চন্দ্রযান ২ চূড়ান্ত অবতরণের সময় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল সেটি।
শুক্রবার বৃত্তাকার কক্ষপথ থেকে চন্দ্র পৃষ্ঠের দিকে আরও নামানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রথমে এটি বৃত্তাকার ১০০ কিলোমিটার X ১০০ কিলোমিটার কক্ষপথে প্রবেশ করবে। এরপর ১০০ কিলোমিটার X ৩০ কিলোমিটার কক্ষপথে প্রবেশ করিয়ে মহাকাশ যানটিকে চাঁদের আরও কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া হবে। ২৩ আগস্ট ল্যান্ডারটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুকে স্পর্শ করার জন্য সেখানে চূড়ান্ত অবতরণ শুরু করবে।
এখানে চলে আসছে সেই ২০১৯-এর প্রচেষ্টার কথা। সেবার চাঁদে রোভার ‘প্রজ্ঞান’ স্থাপনের চেষ্টা করা হয়। অবতরণের কয়েক মুহূর্ত আগেও পর্যন্ত প্রত্য়াশামাফিক চলছিল সবকিছু। একেবারে শেষ মুহূর্তে ঘটে অঘটন। সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার উভয়েরই সমস্যা দেখা দেয়। বাধা দেয় ল্যান্ডারটিকে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সঠিকভাবে অবতরণের জন্য প্রয়োজনীয় গতি কমাতে।
এই প্রসঙ্গে নাসা এও জানাচ্ছে, মহাকাশ থেকে চাঁদের পৃষ্ঠে হালকা ভাবে চাঁদের অবতরণ বেশ কঠিন। এজন্য উন্নত প্রযুক্তিগত ক্ষমতার দরকার। এই বিষয়ে মঙ্গল গ্রহ সংক্রান্ত গবেষণায় নাসার বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ‘ধরে নেওয়া যাক মহাকাশে মহাকাশযান ছুটে চলেছে একটি বিমানের চেয়ে ১০ গুণ বেশি গতিতে। ওই মহাকাশযানকে চাঁদের পৃষ্ঠে আলতোভাবে অবতরণের আগে প্রায় স্থির হয়ে যেতে পারে। বিষয়টি কয়েক মিনিটের ব্যাপার। আরও গুরুত্বপূর্ণ যে, পুরো প্রক্রিয়াটি সংগঠিত হবে মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই অর্থাৎ স্বয়ংক্রিয় ভাবে। এটিই সংক্ষেপে চাঁদের পৃষ্ঠে নরম বা আলতোভাবে অবতরণ অর্থাৎ আমরা যেটাকে বলছি সফট ল্যান্ডিং।’
এই প্রসঙ্গে ইসরোর বিজ্ঞানীরা এও জানিয়েছেন, সমস্যার কথা বিচার করেই চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার মডিউলকে এবার চন্দ্রপৃষ্ঠে হালকা পালকের মতো অবতরণের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। ল্যান্ডার যাতে প্রত্যাশিত প্রভাব কাটিয়ে চাঁদের পৃষ্ঠে শক্তভাবে তার অবস্থান বজায় রাখতে পারে, সেজন্য সেটির পা মজবুত করা হয়েছে। প্রতিকূল পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে মোকাবিলা করার জন্য একাধিক যন্ত্র, আপডেট করা সফটওয়্যার এবং একটি বড় জ্বালানি ট্যাংকও সঙ্গে রাখা হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা টুইট করে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার প্রোপালশন মডিউল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। এখানে বলে রাখা শ্রেয়, চন্দ্রযানের দুই রকম মডিউল আছে–প্রোপালসন মডিউল। একটি হল ল্যান্ডারকে লঞ্চিং স্টেশন থেকে চাঁদের কক্ষপথে নিয়ে যাওয়া এবং এরপর ল্যান্ডার মডিউল যাতে রোভার ল্যান্ডারের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়া। ল্যান্ডারের ওজন ১৭৫২ কিলোগ্রাম, রোভারের ২৫ কিলোগ্রাম। প্রোপালশন মডিউলের ওজন ২১৪৮ কিলোগ্রাম। চন্দ্রযানের মোট ওজন ৩৯০০ কিলোগ্রাম।
প্রোপালশন মডিউল ল্যান্ডারকে চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছে দিয়েছে। তার কাজ শেষ। এবার ল্যান্ডারকে নিজের থেকে আলাদা করার প্রক্রিয়া শুরু করবে। ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ ও তার ভেতরে থাকা রোভার আলাদা হয়ে গেলেই তা চাঁদের আরও কাছাকাছি চলে যাবে। দূরত্ব কমে হবে ১০০ কিলোমিটার।