বাড়ছে না পাঁউরুটি বা বেকারিজাত দ্রব্যের দাম

আমাদের প্রতিদিনের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে পাঁউরুটি থেকে কেকের মতো নানা জিনিস। যা তৈরি হয় বেকারিতে। সম্প্রতি এমন একটা খবর বাজারে চাউর হয়, খুব দ্রুত দাম বাড়তে চলেছে পাঁউরুটির।  অথচ এই পাঁউরুটি নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত পরিবারে নিত্যদিনের খাবার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে এমন এক খবরে কপালে ভাঁজ পড়ে আম বাঙালির।

এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ বেকারি মালিকদের জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির সম্পাদক তথা বিধায়ক ইদ্রিস আলি অবশ্য আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে পাঁউরুটির দাম বাড়ছে না। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে আর সামনে পুজোর মরসুমের কথা ভেবেই আমরা দাম বাড়াচ্ছি না। বর্তমানে এমন কোন পরিস্থিতি হয়নি যাতে পাঁউরুটির দাম বাড়াতে হবে।’ এই একই সুর শোনা গেছে ওয়েস্ট বেঙ্গল বেকার্স কো অর্ডিনেশন কমিটির সম্পাদক সেখ ইসমাইল হোসেনের গলাতেও।

এদিকে এই প্রসঙ্গে বেকারি মালিক সংগঠনের সম্পাদক ইদ্রিস আলি এও জানান, বেকারি মালিকদের দুটি সংগঠন রয়েছে। একটি জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি এবং অপরটি বেকার্স কো অডিনেশন কমিটি। সঙ্গে এও জানান, পশ্চিমবঙ্গে প্রায় চার হাজার বেকারি রয়েছে। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন চার লক্ষের বেশি মানুষ।’ শুধু তাই নয়, পাশাপাশি এও মনে করিয়ে দেন, কিছুদিন আগে পাঁউরুটির দাম প্রতি চারশো গ্রামে  ৪ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। ফলে এই মুহূর্তে ৪০০ গ্রাম পাঁউরিটির দাম দাঁড়িয়েছে ২৮ টাকায়। এরপর যদি ফের পাঁউরুটির দাম বাড়ানো হয় তাবলে সমস্যায় পড়বেন গরিব ও সাধারণ মানুষ।’ এই প্রসঙ্গে বিধায়ক ইদ্রিশ আলির সংযোজন,’পাঁউরুটি, কেকের দাম বৃদ্ধি নির্ণয় করে ওয়েস্ট বেঙ্গল বেকার্স কো-অর্ডিনেশন কমিটি এবং জয়েন্ট অ্যাকশন ফোরাম। বেকারি শিল্পের সঙ্গে নিযুক্তদের উদ্দেশ্যে বলেন, গুণমান বজায় রাখতে হবে এবং সঠিক দাম নিতে হবে। বেকারি শিল্পের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বিধানসভায় আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও জানানো হয়েছে। এই বেকারিগুলির সুবিধা অসুবিধা নিয়েও আলোচনাও চলছে। পাশাপাশি বেকারি শিল্পের জন্য যাতে কম সুদে ঋণের ব্যবস্থার পাশাপাশি রাজ্যে ময়দার কারখানা বৃদ্ধি হয় তা নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা চলছে বলেও জানান তিনি। সঙ্গে এও মনে করিয়ে দেন, ‘বেকারি শিল্পের প্রতি কেন্দ্র সরকার উদাসীন। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালানো হবে।’

এদিকে পাঁউরুটির দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ওয়েস্ট বেঙ্গল বেকার্স কো অর্ডিনেশন কমিটির সম্পাদক সেখ ইসমাইল হোসেন জানান, ‘পাঁউরুটি যেমন বিমানে যাতায়াতকারী বড়লোকেরাও খান, ঠিক তেমনই কলকাতার কোলে মার্কেটের কাছে অনেক গরিব মানুষও ঘুগনির সঙ্গে ১০০ গ্রাম পাউরুটি দিয়ে দুপুরের আহারও করেন। তাই আমরা চাই ‌বেকারি শিল্পও বাঁচুক এবং একইসঙ্গে সাধারণ মানুষের কোন অসুবিধা না হয় সেদিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন।’ সঙ্গে তিনি এও জানান, ‘আমাদের রাজ্য সরকার মানবিক সরকার। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরকারই।’ অর্থাৎ বিধায়ক ইদ্রিস আলির কথায় এটা স্পষ্ট যে, পাঁউরুটি, বিস্কুট,কেক কোনও কিছুরই দাম এই মুহূর্তে বাড়ছে না।

এই প্রসঙ্গে কো-অর্ডিনেশন কমিটির সম্পাদক ইসমাইল হোসেন এই প্রসঙ্গে জানান, ‘বেকারি শিল্পের উন্নয়নে খাবারের গুণগত মান ভালো রাখতে হবে। মান ভালো না হলে বেকারি শিল্পের বদনাম হবে।’

এদিকে এই প্রসঙ্গে প্রাক্তন সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান  জানান, বেকারি শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ওয়েস্ট বেঙ্গল কো-অর্ডিনেশন কমিটির ভূমিকা রয়েছে। তাঁর পরামর্শ, এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে গুণগত মান ও দামে খেয়াল রাখতে হবে। ছোট ছোট বেকারিগুলি যান্ত্রিক-পরিষেবা গ্রহণ করলে বড় বেকারি হতে সহায়তা হবে। রাজ্য সরকারের একাধিক প্রকল্প রয়েছে। ব্যবসাকে বাড়াতে এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে ব্যবসাকে বাড়াতে ঋণ গ্রহণ করতে পারে। পাশাপাশি বেকারি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সচেতনতা আনা প্রয়োজন। যার জন্য সেমিনার- সম্মেলনের পাশাপাশি ওয়ার্কশপ করতে হবে। আর এই ধরনের সেমিনারে এই বেকির শিল্পের সঙ্গে যাঁরা জড়িতে তাঁদের কোনও সমস্যা থাকলে তারও সমাধান হবে। এরই পাশাপাশি হাজ রহিম বক্স ওয়াকফ স্টেট-এর সম্পাদক ও হজ কমিটির সদস্য কুতুবউদ্দিন তরফদার জানান, ‘বেকারি শিল্প শুধু ব্যবসা নয়। এই শিল্পের সঙ্গে নিযুক্তরা সকলেই সমাজসেবক। কারণ বেকারি শিল্পের খাবার মানুষের দৈনন্দিন  প্রয়োজন।’

এখানে আরও একটা কথা বলতেই হয়, ওয়েস্ট বেঙ্গল বেকার্স কো-অর্ডিনেশন কমিটি ১৯৮৫ সাল থেকে কাজ করে আসছে। এই কমিটির দাবিগুলির মধ্যে রয়েছে, বেকারি শিল্পকে বাঁচাতে ব্যবৃহত আটা, চিনি, ভোজ্য তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। পাশাপাশি দাবি করা হয়েছে, প্যাকেটে সঠিক গুণমান সহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিস্তারিত বিবরণ সহ উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, নূনতম ঋণের সুবিধা, ভ্যাট প্রত্যাহার করারও দাবি তোলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen + seventeen =