কর্মরত অবস্থায় বাবা-মায়ের মৃত্যু হলে পরিবারের সদস্যের চাকরি অধিকার নয়, জানাল কলকাতা হাইকোর্ট

কর্মরত অবস্থায় বাবা-মায়ের মৃত্যুর হলে ছেলে বা পরিবারের কারও চাকরি পাওয়া অধিকারের মধ্যে পড়ে না। একটি মামলায় রায় দিতে গিয়ে এমনটাই পর্যবেক্ষণ কলকাতা হাইকোর্টের। আদালতের মত, উপযুক্ত প্রয়োজন ছাড়া এই ধরনের চাকরি কমপ্যাশানেট অ্যাপয়েন্ট মেধা নষ্ট করে।

এদিকে এই কমপ্যাশানেট বিষয়ে একটি মামলা হাইকোর্টে উত্থাপিত হয়। মামলাকারী টার্জন ঘোষ তাঁর বাবার মৃত্যুর পর চাকরি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন। তবে বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ তাঁর আর্জি খারিজ করে দেয়। সঙ্গে ডিভিশন বেঞ্চের তরফ থেকে এও জানানো হয়, এই চাকরি কোনও বংশগত অধিকার নয়। শুধু হাইকোর্ট নয়, এই ধরনের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টেরও মত, এই জাতীয় চাকরি সহানুভূতি। প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে মামলাকারী টার্জন ঘোষের বাবার মৃত্যু হয়। ২০০৯ সালে তিনি চাকরির জন্য কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করেন। মামলাকারীর বাবার বয়স মৃত্যুর সময় পঞ্চাশ পার হয়ে যায়। আইনত এক্ষেত্রে চাকরি দেওয়া যায় না। কারণ তাঁর উত্তরাধিকারীদের বয়স ততদিনে ১৮ হয়ে গিয়েছে। এবং চাকরি খোঁজার ব্যাপারে তাঁরা স্বাবলম্বী। এছাড়াও আদালতের এও মনে হয়েছে, মৃতের স্ত্রী বা পরিবার দু’বছর কেন দেরি করলেন চাকরির আবেদন করতে? শুধু তাই নয়, মামলাকারী এবং তাঁর বোনের বয়স ততদিনে ১৮ পেরিয়ে গিয়েছে। ফলে এতদিনে তাঁরা চাকরি খোঁজার ব্যাপারে সাবলম্বী হয়ে গিয়েছেন।

এদিকে কমপ্যাশানেট গ্রাউন্ডে অ্যাপয়েন্টমেন্টের  ক্ষেত্রে শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, মৃত্যুর ফলে পরিবারের কতটা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রাথমিকভাবে তা দেখা উচিত। এমনকী, যিনি মারা গিয়েছেন তাঁর আয় পরিবারের আয়ের চল্লিশ শতাংশের কম কি না তাও দেখার কথা জানায় শীর্ষ আদালত। আর তাহলে ওই পরিবারের কেউ চাকরি পাবেন না, এমনটাই জানানো হয়েছিল শীর্ষ আদালতের তরফ থেকে। পাশাপাশি শীর্ষ আদালতের তরফ থেকে এও জানিয়ে দেওয় হয়, এই চাকরি আসলে কোনও অধিকার নয়। এটা সহানুভূতি। সঙ্গে আদালত সূত্রে এ তথ্যও মিলেছে গত ২০১৭ সালে এমন ঘটনায় কয়েকশো মামলাকারী হাইকোর্টে মামলা করেন। ডিভিশন বেঞ্চে তাঁদের জয়ও হয়। এরপরই রাজ্য ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। সেই মামলায় জয় হয় রাজ্য সরকারের। কারণ শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ,পরিবারের আর্থিক ক্ষতি কতটা হচ্ছে তার ভিত্তিতেই বিচার্য হবে।

এখানে বলে রাখা শ্রেয়, কোনও সরকারি কর্মচারির মৃত্যু হলে তাঁর উপর যাঁরা নির্ভর করেন অর্থাৎ শুধুমাত্র পরিবারের সদস্যরাই এক বছরের মধ্যে আবেদন করতে পারেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে রাজ্য সিদ্ধান্ত নেয়। বিভিন্ন পেশা এবং কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারি দফতরের তরফ থেকে নিজেদের নিয়ম অনুযায়ী এই ব্যাপারে স্কিম রাখা হয়েছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven − 5 =