সন্তানদের দিকে তাকিয়ে নিজেদের ঝামেলা মেটান, পরামর্শ কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের

দাম্পত্য কলহে দুই নাবালকের জীবন দুর্বিষহ হচ্ছে। তারা এক দেশ থেকে অন্য দেশে এসে মানাতে পারছে না। মানসিক সমস্যা বাড়ছে। তাই নিজেদের কলহ সরিয়ে স্বামী-স্ত্রীকে কোথাও গিয়ে কথা বলে নিজেদের সমস্যা মেটানোর পরামর্শ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতের বক্তব্য, এই পরামর্শ কতটা কাজে এল, পরের শুনানিতে তা জানাতে হবে আদালতে। আদালত সূত্রে খবর, এক তরুণীর আইনজীবীর উদ্দেশে আদালতের বক্তব্য, ‘আপনার মক্কেলকে বলবেন, বর্তমানে পিএইচডি করা ছেলেমেয়েরাও কাজ না-পেয়ে ঘুরছেন। আর এ ক্ষেত্রে যেখানে বাবা বার বার সন্তানদের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী, সেখানে আপনার মক্কেলের আপত্তি কোথায়! দু’টি বাচ্চা, যারা পরিষ্কার করে এখনও কথা বলতেও পারে না, তাদের দিকটা দেখুন। বাবা-মা হয়ে তাদের কথা ভাবুন। কীসের এতো ইগো, কীসের এত অহংকার!’ এরই পাশাপাশি নথিপত্র খুঁটিয়ে দেখে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, সন্তানরা অন্য আবহে বড় হয়েছে। বাবার স্নেহ ও দেখভাল থেকে, উচ্চশিক্ষা, বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বাবার আর্থিক ক্ষমতার সংস্থান থেকে তাদের বঞ্চিত করা ঠিক হচ্ছে না। আর এই সমস্যা মেটাতে আদালত দম্পতিকে সুযোগ দিয়েছে। ১৮ সেপ্টেম্বর হবে ফের শুনানি। ওই দিন দম্পতিকে নিজেদের বক্তব্য জানাতে হবে আদালতে।

আদালত সূত্রে খবর, উচ্চশিক্ষার পর চাকরি নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় যান নদিয়ার নদিয়ার নাকাশিপাড়ার এক যুবক। ২০১০-এ এ রাজ্যের এক তরুণীর সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। এরপর গ্র্যাজুয়েট ওই তরুণীকে নিয়েও যান সে দেশে। আমেরিকায় ২০১৩ ও ২০১৭ সালে প্রথমে কন্যা ও পরে পুত্রসন্তানের জন্ম হয় দম্পতির। ফলে জন্মসূত্রেই তারা সে দেশের নাগরিক।কিন্তু এরই মধ্যে ওই তরুণী ‘বদ সঙ্গে’ জড়িয় পড়েন বলে হাইকোর্টে দায়ের মামলায় অভিযোগ তাঁর স্বামীর। অভিযোগ, স্ত্রী এতটাই মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন যে সন্তানদের যত্নেও অবহেলা হতো। যদিও তরুণীর আইনজীবীরা এই অভিযোগ উড়িয়ে দেন। গত বছর জুনে বিবাদ চরমে পৌঁছালে ওই তরুণী দুই সন্তানকে নিয়ে দেশে ফিরে বাপের বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। স্বামী আমেরিকা থেকে বার বার যোগাযোগ করে বাচ্চাদের স্কুল খুলে গিয়েছে জানিয়ে ফেরার তাগাদা দিয়েও ব্যর্থ হন। উলটে স্বামীর বিরুদ্ধে নাকাশিপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তরুণী। এদিকে ওই তরুণ পৃথক থাকার জন্যে মামলা করেন। সন্তানদের ফিরে না-পেয়ে জুলাইয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। আদালত সমাজে বেড়ে চলা দাম্পত্য কলহে উদ্বেগ প্রকাশ করে ওই দম্পতিকে মেলানোর চেষ্টা শুরু করেছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × four =