শ্রীলঙ্কাকে গুঁড়িয়ে দিয়ে অষ্টম বারের জন্যে এশিয়া কাপ জিতল ভারত। ফাইনালে তারা জিতেছে ১০ উইকেটে। শ্রীলঙ্কার তোলা ৫০ রান কোনও উইকেট না হারিয়েই তুলে নেয় টি্ম ইন্ডিয়া। তবে রবিবারের ম্যাচ এমন একপেশে হতে পারে তা কেউই স্বপ্নেও ভাবেননি। বিশেষ করে পুরো টুর্নামেন্ট এবং গত দু-বছরে শ্রীলঙ্কার অনবদ্য পারফরম্যান্সের পর, ভারতীয় বোলিংয়ের সামনে এমন হতশ্রী চেহারা ধরা পড়বে তা অতিবড় ক্রিকেট বোদ্ধাও ভাবেননি।এখানে বলতেই হয়, ওডিআই ফরম্যাটে টানা ১৩টি জয়ের রেকর্ড গড়েছিল শ্রীলঙ্কা। সুপার ফোরে ভারতের কাছে জয়ের রথ থামে। এবারের টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বড় আশঙ্কা ছিল বৃষ্টি। তবে বৃষ্টি এদিন ভারতের জয়ের ক্ষেত্রে কোনও বাধা হয়েই দাঁড়ায়নি। বিশ্বের দ্বিতীয় দল হিসেবে শ্রীলঙ্কা টানা জয়ের রেকর্ড গড়লেও ফাইনালের চাপ নিতে ব্যর্থ।
এদিকে এক ওভারে ৪ উইকেট সহ মোট ৬ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ডটাই ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন সিরাজ। তিনে নামা কুশল মেন্ডিস ছাড়া শ্রীলঙ্কার টপ অর্ডারকে প্যাভিলিয়নে পাঠিয়ে দিয়েছেন সিরাজ-বুমরা। ইনিংসের প্রথম ওভারে শ্রীলঙ্কাকে প্রথম ধাক্কা দেন জসপ্রীত বুমরা। এরপর দায়িত্ব নিয়ে একের পর এক উইকেট তুলে নিতে থাকেন সিরাজ। চতুর্থ ওভারে সিরাজ যা জাদু দেখালেন, তা ভোলার নয়। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে সিরাজ তুলে নেন পাথুম নিশঙ্কার (২) উইকেট। রবীন্দ্র জাডেজা ডানদিকে লাফ দিয়ে দু’হাত দিয়ে ক্যাচ ধরে নেন। পরের বলটা ডট হয়। এরপর ওভারের তৃতীয় বলে সাদিরা সমরবিক্রমা এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন। রিভিউ নিয়েছিলেন। কাজে লাগেনি। পরের বলেই চরিথ আসালঙ্কাকে ফেরান সিরাজ। কভারে ক্যাচ নেন ঈশান কিষাণ। শূন্যে ফেরেন আসালঙ্কা। এর পরের বল ধনঞ্জয় ডি সিলভা মিড অনের দিকে মারেন। এরপর সিরাজ চতুর্থ ওভার শেষে ধনঞ্জয় ডি সিলভাকেও ওই চার রানেই প্যাভিলিয়নের পথ দেখান সিরাজ। সিরাজের কাছে এই ম্যাচে হ্যাটট্রিকের সুযোগও ছিল। কিন্তু, সেই সুযোগ অল্পের জন্য তিনি হাতছাড়া করে ফেলেন। কিন্তু, একই ওভারে ৪ উইকেট শিকার করে তিনি যে শ্রীলঙ্কার কোমর ভেঙে দেন, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এরপর ষষ্ঠ ওভারে অধিনায়ক দাসুন শানাকাকে বোল্ড আউট করেন সিরাজ। মাত্র ১২ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় টানা সাত ওভারের স্পেল শেষে সিরাজের বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড়ায় ৭-১-২১-৬।
৫০ রানে শ্রীলঙ্কার ইনিংস গুটিয়ে যাওয়ার পর ভারতের কাছে জয় ছিল সময়ের অপেক্ষা। চ্যালেঞ্জ ছিল কত তাড়াতাড়ি তারা শেষ করতে পারে ম্যাচ। সেটাই হল। মাত্র ৬.১ ওভারে শেষ হল এশিয়া কাপের ফাইনাল। ১০ উইকেটে জিতল ভারত। আর সেটার জন্য রোহিত শর্মা ভরসা রাখতে দেখা গেল ঈশান কিষান ও শুভমান গিলের ওপরেই। তবে তখনও অনেকেই আশা করছিলেন, ভারতের বোলিং স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করে শ্রীলঙ্কা পাল্টা লড়াই দেবে। কিন্তু সেটা দূরে থাক। তার কাছ পর্যন্ত যেতে পারল না তারা। ভারতের থেকে বোলিং না শিখে নিজেদের স্ট্র্যাটেজিতে খেলতে নেমেছিলেন শ্রীলঙ্কার প্লেয়াররা। ফলে পেস বা স্পিন কোনও কিছুতেই কাজে এল না। তিন ঘণ্টারও কম সময়ে ম্যাচ শেষ করল ভারত। ঈশান কিষানের ২৩ রান আর শুভমানের ২৭ রানের সুবাদে মাত্র ৬.১ ওভারে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় টিম ইন্ডিয়া। এদিনের এই জয়ে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে পরপর সাফল্য এলেও মাল্টি টিম ইভেন্টে ট্রফি খরা কাটল ভারতের।কারণ, আইসিসি টুর্নামেন্টে শেষ ট্রফি এসেছে ২০১৩ সালে। তেমনই মাল্টি টিম ইভেন্টে এর আগে ট্রফি ২০১৮ সালে এশিয়া কাপে।
রবিবারের ম্যাচের সেরা সিরাজ। তবে ম্যাচ শেষে ‘ম্যাচের সেরার আর্থিক পুরস্কার মাঠকর্মীদের হাতে তুলে দিয়ে তিনি জানান, ‘ওঁরাই আসল নায়ক। ওরা না থাকলে টুর্নামেন্টটাই হয়তো সম্পূর্ণ হত না।’
এক নজরে-
১০ উইকেটে জয় ভারতের।
ঈশান কিষান ২৩ আর শুভমানের ২৭ রান।
এক ওভারে চার উইকেট সিরাজের।
বোলিং পরিসংখ্যান- ৭-১-২১-৬।
ম্যাচ সেরা-সিরাজ।