লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের সংস্থার কর্তাদের সম্পত্তির খতিয়ান দেখে সন্তুষ্ট নন কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশে সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্থার সিইও ও ডিরেক্টরদের সম্পত্তির খতিয়ান জমার কথা বলা হয়। এই নির্দেশ অনুসারে ইডি-র তরফ থেকে জমাও দেওযা হয় রিপোর্ট। তবে এই রিপোর্টে সম্পত্তির খতিয়ান দেখে সোমবার কার্যত তদন্তকারী সংস্থাকে তিরষ্কার করতে দেখা যায় বিচারপতি অমৃতা সিনহাকে। ইডিকে তিরস্কার করার পাশাপাশি একের পর এক প্রশ্ন ছুড়েও দেন বিচারপতি।
এদিন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের দেওয়ার তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তির বিবরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। অভিষেক-সহ লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার সিইও এবং ডিরেক্টরদের সম্পত্তির বিবরণ ইডিকে জমা দিতে বলেছিল হাইকোর্ট। সেই বিবরণ নিয়েই ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি সিনহা। বিবরণে অভিষেকের কোনও ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট জানায়নি ইডি। এই প্রসঙ্গে সোমবার বিচারপতি জিজ্ঞেস করেন, সাংসদের মাত্র তিনটি বিমা ছাড়া কিছু নেই তা কী ভাবে সম্ভব তা নিয়েই। সঙ্গে জমা দেওযা হয়নি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ডিটেলসও। এই নিয়ে ইডিকে তীব্র ভর্ৎসনা করে বিচারপতি এও জানান, লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস নিয়ে গত আট মাস ধরে ইডি যে তদন্ত করেছে, তার নিট ফল শূন্য। এই নিয়ে বিশদ তথ্য ইডিকে জমা করার নির্দেশ দেন বিচারপতি। মামলার পরবর্তী শুনানি ২৯ সেপ্টেম্বর।
এদিকে আদালত সূত্রে খবর, এদিন বিচারপতি এ প্রশ্নও করেন, ‘এটা কি হতে পারে সাংসদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই? তা হলে তিনি বেতন পান কী ভাবে?’ সঙ্গে এ প্রশ্নও করেন,‘অভিষেকের বাড়ির ঠিকানা জানে ইডি আদৌ জানে কি না তা নিয়ে। ১৮৮এ হরিশ মুখার্জি রোডে কার নামে বাড়ি রয়েছে এদিন তাও জানতে চান বিতারপতি সিনহা। এখানেই শেষ নয়, এদিন বিচারপতি এ প্রশ্নও তোলেন, ‘অভিষেক লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার যে সিইও, তাঁর কী সম্পত্তি দেখানো হয়েছে? আপনারা যে তথ্য দিয়েছেন, তা কি বিশ্বাসযোগ্য?’ ইডি অভিষেকের সম্পত্তির যে বিবরণ দিয়েছে, তাতে তাঁর মালিকানাধীন জমি দেখানো হয়েছে। এই জমি নিয়েও প্রশ্ন তুলে বিচারপতি জানতে চান, ‘আপনারা অভিষেকের যে জমি দেখাচ্ছেন তার বিশদ তথ্য কোথায়? কোথায় রয়েছে জমি? জমির কত দাম, কিছু জানাননি? আপনাদের এই তদন্তের হাল? আপনারা যে নথি দিচ্ছেন, তা সত্য কি মিথ্যা যাচাই করেননি। কোন এলাকায় জমি তাও যাচাই করেননি।এখন তো মনে হচ্ছে আপনারই তথ্য গোপন করছেন।’
এদিকে ইডির তদন্তে জানা গিয়েছে, লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার একটি কারখানা ছিল। বিচারপতি অসন্তোষ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, সেই কারখানার বিষয়েও বিশদে কিছু জানায়নি ইডি। তাঁর কথায়, ‘আপনারা বলছেন, সংস্থার কারখানা ছিল? তা কবে, কোথায় তৈরি হয়েছে তা জানাননি। সংস্থার সম্পত্তির বিবরণ দেননি। আপনারা জানিয়েছেন, সংস্থার এসি রয়েছে, গাড়ি রয়েছে, লরি রয়েছে। কিন্তু কার নামে সেই গাড়ি, লরি, কিছুই জানাননি।’ এরপরই বিচারপতি কড়া সুরে জানতে চান, ‘আপনারা কি সঠিক ভাবে তদন্ত করবেন না? সংস্থার ৬ জন ডিরেক্টর রয়েছেন। সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ছাড়া কারও বিরুদ্ধে কি কোনও তদন্ত করেছেন?’ একইসঙ্গে এ প্রশ্নও তোলেন, সুজয়কৃষ্ণর গলার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে কি না তা নিয়েও।
এরপরই এদিনের শুনানির পর ইডিকে হাইকোর্টের নির্দেশ, ‘কোম্পানির বিস্তারিত তথ, কত টাকার সম্পত্তি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথি জমা দিতে হবে। সংস্থার মূল্য নির্ধারণ করে খতিয়ে দেখে এই তথ্য দিতে হবে। একই সঙ্গে যাঁরা সংস্থার রোজকার কাজের সঙ্গে যুক্ত তাঁদেরও তথ্য দিত দিতে হবে। সুজয় কৃষ্ণভদ্রের হিসেব দেওয়া হয়েছে। সংস্থায় লতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও রয়েছে। রেজিস্টার অফ কোম্পানিসের তথ্য র সঙ্গে বাস্তবে কোনও তথ্য বদল হলে তাও জানাতে হবে।’
প্রসঙ্গত, অভিষেক-সহ লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার ডিরেক্টরদের সম্পত্তির বিবরণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সিনহা। এই সংক্রান্ত বিষয়গুলি স্পষ্ট করার জন্য সোমবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি এবং সিবিআইয়ের আধিকারিকদের তিনি আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিচারপতি সিনহার নির্দেশে লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার সিইও এবং অন্য ডিরেক্টরদের সম্পত্তির বিস্তারিত তথ্য আদালতে জমা দিয়েছিল ইডি। সেই সঙ্গে নিয়োগ মামলায় জড়িত এক অভিনেতার নাম এবং সম্পত্তির বিবরণও আদালতে জমা দেওয়া হয়।অভিষেকের সংস্থার পাশাপাশি, এক টলিউড অভিনেতার সম্পত্তি নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। তাঁর মন্তব্য, সম্পত্তির যে বিবরণ জমা পড়েছে, তা নিয়ে কিছু সন্দেহ রয়েছে। কিছু বিষয় স্পষ্ট করা প্রয়োজন। দুই কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকদেরই আদালতে হাজির থাকতে বলেছিলেন তিনি। তাঁদের উপস্থিতিতে এদিন ইডিকে ভর্ৎসনাও করেন বিচারপতি।