চাকরিপ্রার্থীদের মিছিলে উত্তপ্ত দক্ষিণ কলকাতা

চাকরিপ্রার্থীদের মিছিলে বুধবার দুপুর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দক্ষিণ কলকাতা। বুধবার দুপুর ২টো নাগাদ কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কাছে বিক্ষোভ দেখাতে জড়ো হন ২০০৯ সালের টেট উত্তীর্ণ দক্ষিণ ২৪ পরগনার চাকরিপ্রার্থীরা। রাস্তায় শুয়ে বিক্ষোভ দেখান তারা। এরপর হঠাৎ-ই হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট ধরে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির দিকে আচমকা দৌড় দিতে দেখা যায় চাকরিপ্রার্থীদের। স্বাভাবিকভাবেই এমন ঘটনায় ঠিক তাল সামাল দিতে পারেননি কলকাতা পুলিশের আধিকারিকেরা।পরে অবশ্য এঁদের আটক করা হয়। এদিকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিস চত্বরে জড়ো হন গ্রুপ ডি-র চাকরিপ্রার্থীরা। এদিকে এদিনের এই মিছিলে যোগ দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচি।এদিকে আদালতের অনুমতির পরই গ্রুপ ডি-র চাকরিপ্রার্থীরা এদিন ক্যামাক স্ট্রিট ও থিয়েটার রোডের সংযোগস্থলে জড়ো হয়। সেখানে মিছিলে যোগ দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আসেন কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচিও।

থিয়েটার রোড ও ক্যামাক স্ট্রিট রোডের সংযোগস্থল থেকে শুরু হয় মিছিল। প্রসঙ্গত, পূর্বতন বাম সরকারের আমলে ২০০৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। পরীক্ষাও হয়েছিল। কিন্তু এরপর তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় এসে সেই নিয়োগ বাতিল করে। ২০১৪ সালে নতুন করে ইন্টারভিউ নেওয়া হয়। প্রত্যন্ত জেলাগুলির নিয়োগ হলেও দক্ষিণ ২৪ পরগনা নিয়োগ আটকে যায়। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ২০১৪ সালের চাকরিপ্রার্থীদের প্যানেলই প্রকাশিত হয়নি। ১৩ বছর ধরে নিয়োগের আশায় বসে রয়েছেন তাঁরা। এদিন নিয়োগের দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে জড়ো হয় তারা। বিক্ষোভকারীদের দাবি,  ‘এক যুগ পেরিয়ে গেলেও নিয়োগ মেলেনি। তাই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলাম।’ এদিকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসের দিকে আঙুল তুলে হুঁশিয়ারি দিতে দেখা যায় শুভেন্দু এবং কৌস্তভকে। স্বাভাবিকভাবে দুই ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী নেতার একই মিছিলে থাকা ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে। যদিও কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচির দাবি, ‘মিছিলে কোনও দলের পতাকা নেই। এখানে মুখ্যমন্ত্রী এলেও তাঁর পাশে হাঁটতে কোনও অসুবিধা ছিল না।’

এদিনের এই মিছিল সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘এই আন্দোলন অরাজনৈতিক আন্দোলন।আমি বিরোধী দলনেতা হিসাবে এসেছি। আন্দোলনকারীরা কাকে রাখবেন সেটা তাঁদের ব্যাপার।’ এরপরই কার্যত কৌস্তভের প্রশংসা করে জানান, ‘আমার রাজৈনিক মতাদর্শের বাইরে যে কয়েকটা লোক এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন তার মধ্যে কৌস্তভ অন্যতম। এরা হাইকোর্টে যে লড়াই করে অনুমতি এনেছেন তাতে হাইকোর্টের একজন সফল আইনজীবী হিসাবে কৌস্তভেরও অবদান আছে। স্বাভাবিকভাবে যার আন্দোলনের দাবির প্রতি মমত্ববোধ থাকবে সেই এই মিছিলে আসতে পারে।’

মিছিলে হাঁটা নিয়ে শুভেন্দুর সঙ্গে খানিক একই মত কৌস্তভেরও। বলেন, ‘এটা কোনও রাজনৈতিক দলের মিছিল নয়। বিজেপির মিছিল নয়। বিজেপির মিছিল হলে আমিও হাঁটতাম না, আর কংগ্রেসের মিছিল হলে শুভেন্দু অধিকারীও হাঁটতেন না। এখানে আমি আমার রাজনৈতিক সত্তার বাইরে আইনজীবী হিসাবে এসেছি। তাই বলছি অহেতুক জল্পনা করার কোনও মানে হয় না।’

প্রসঙ্গত, ইন্ডিয়া জোটে তৃণমূলের সঙ্গে হাত ধরে চলা নিয়ে তীব্র আপত্তি রয়েছে কৌস্তভের। দলের অন্দরে কার্যত বিদ্রোহও ঘোষণা করেন তিনি। তাঁর আচরণে রেগে আগুন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। সম্প্রতি তাঁকে আবার কংগ্রেসের মুখপাত্রের তালিকা থেকেও বাদ দেওয়া হয়েছে। দলের অন্দরে কেউ কেউ বলতে শুরু করেছিলেন, তিনি শীঘ্রই যোগ দিতে পারেন বিজেপিতে। তাই এসব করছেন। এরইমধ্যে সেই কৌস্তভ বাগচিকে এদিন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে একই মিছিলে হাঁটতে দেখা যেতেই স্বাভাবিক ভাবেই এই জল্পনায় ঘৃতহুতি হল বলা যেতেই পারে।

যদিও বিষয়টিকে খুব একটা পাত্তা দিতে নারাজ কংগ্রেসের জোট সঙ্গী সিপিএম। বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলছেন, ‘কে মিছিলে গেল সেটা বড় কথা নয়।’ এর প্রত্যুত্তরে ঘাসফুল শিবিরের তরফ থেকে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘এটা দীর্ঘ দিন ধরেই আমরা বলছি। বৃহত্তর স্বার্থে ইন্ডিয়া হয়েছে, আর অধীর এ রাজ্যে বিজেপির বি টিম এর ভূমিকা পালন করছেন। এটা ইন্ডিয়ার লাইনের সঙ্গে সঙ্গতি পূর্ণ নয়।’

বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘ওনারা ওখানে কোন পরিচয়ে গিয়েছিলেন তা সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেছেন। কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপি একই মঞ্চ থেকে আন্দোলন করবে এটা কোনওদিন সম্ভব নয়। এটা অবাস্তব বিষয়। আমরা বলছি, এ রাজ্য়ে যাঁরা তৃণমূলকে সরাতে চান তাঁদের বিজেপিতে আসতে হবে। কিন্তু, বিজেপি কাকে নেবে কাকে নেবে না, সেটা দলের বিষয়।’

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − three =