এটা শুধু তৃণমূলের কর্মসূচি নয়, মানুষের কর্মসূচি, বার্তা অভিষেকের

শুক্রবার রেলের তরফে বিশেষ ট্রেন বাতিলের ঘোষণার পর ক্ষোভ উগরে দিতে দেখা গিয়েছিল তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এরপর শনিবার ফেসবুক লাইভে এসে দলীয় কর্মীদের মনোবল বৃদ্ধির নয়া স্ট্র্যাটেজি নিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে সরব হওয়ার পাশাপাশি, বাংলার বিরোধী দলের কর্মীদের উদ্দেশেও বার্তা দেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড। একই সঙ্গে ২ ও ৩ অক্টোবর দিল্লির কর্মসূচি রাজ্যের পঞ্চায়েত স্তরে লাইভ সম্প্রচার করার জন্যও দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিতে দেখা যায় অভিষেককে।

শনিবার ফেসবুক লাইভে এসে অভিষেক বলেন, ‘বাংলার প্রাপ্য আদায়ের জন্য তৃণমূলের তরফে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বাংলার মানুষের দাবি আদায়ের জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মানুষকে কথা দিলে আমরা বন্ধপরিকর। বাংলার মানুষকে বলব দৃঢ় মনোভাব রাখুন। অন্য দলের কর্মীদেরও আমি বলতে চাই, এটা শুধু তৃণমূলের কর্মসূচি নয়। এটা মানুষের কর্মসূচি। আমি সব স্তরের মানুষের কাছে বলতে চাই, যদি বিবেক, মানসিকতা ও মনুষত্ব থাকে তবে মানুষের জন্য রাস্তায় নামুন। মানুষের হাত শক্তিশালী করুন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্তিশালী করতে হবে না। মানুষের হাত শক্ত করুন।’ অভিষেকের বক্তব্য, ‘আমরা ২ তারিখ, ৩ তারিখ যে আন্দোলন করব বলেছিলাম, করব। কারও ক্ষমতা থাকলে আন্দোলন আটকে দেখাক। আর বাংলার একটা মানুষের গায়ে যদি হাত পড়ে দিল্লিতে, একটা আঁচড় যদি পড়ে শ্রমিক কৃষকের উপর। মারলে আমাদের মারবেন, আমাদের সাংসদ-বিধায়কদের গায়ে হাত দেবেন। একটা গরিব মানুষের গায়ে যদি হাত পড়ে ইট কা জবাব পাত্থর সে কীভাবে দিতে হয় সেটা গণতান্ত্রিকভাবে আগামীদিনে মানুষ দেখিয়ে দেবে।’

এখানেই শেষ নয়, এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, গত ১৬ তারিখ তাঁরা কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের দফতরে চিঠি পাঠান। মূলত ৩ তারিখ তৃণমূলের সাংসদদের প্রতিনিধি দল বৈঠক করতে চেয়েছিল মন্ত্রীর সঙ্গে। এই প্রসঙ্গে অভিষেক জানান, ‘গতরাতে উত্তর এসেছে। বলছেন উনি ব্যস্ত, থাকবেন না। আমরা বলেছি ঠিক আছে ধরে নিলাম আপনি ব্যস্ত। আপনার প্রতিমন্ত্রীকে বৈঠক করতে হবে। জবাব আপনাকে দিতেই হবে, টাকা আপনাকে ছাড়তে হবে।’

বারবার বিজেপি এই ১০০ দিনের কাজ, আবাস এরই রেশ ধরে অভিষেকের প্রশ্ন, ‘বিজেপি বলে ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতি হয়েছে। তাহলে দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। ২ হাজার লোক দুর্নীতি করলে আড়াই কোটি মানুষের টাকা আটকে রাখবেন? এটা কেমন বিচার? এত ভয় কীসের?’ এরই রেশ ধরে অভিষেক জানান, ২০২১ সালের পর প্রতিটা ভোটে বিজেপিকে মানুষ ফিরিয়ে দিয়েছে। সেই রাগেই এভাবে বাংলার টাকা আটকে বাংলাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

পাশাপাশি এদিনের বক্তব্যে তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ডের বার্তা, বাংলার সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ যেন এই কর্মসূচিতে শামিল হন। মানুষের কর্মসূচিতে কাঁধে কাঁধ মেলাতে চাইলে ২ আর ৩ অক্টোবর মানুষের জন্য রাস্তায় নামুন। আমার পাশে দাঁড়াতে হবে না, মানুষের পাশে দাঁড়ান।’

এদিনের এই ভার্চুয়াল বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই দু’দিনের কর্মসূচি কী তাও শনিবার জানিয়ে দেন অভিষেক। জানান, ‘ফাইট ফর রাইট’ নাম দেওয়া হয়েছে এই কর্মসূচির। অভিষেক বলেন, ‘বাংলার মানুষ তাঁদের অধিকার পাবে, আমি কথা দিচ্ছি।’ এই দু’দিন দিল্লিতে কী কী কর্মসূচি হবে, আর বাংলাতেই বা কী করবেন নেতারা তাও স্পষ্ট করে দেন তিনি।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘২ তারিখ আমরা ঘণ্টা দু’য়েক শান্তিপূর্ণভাবে রাজঘাটে বসব। রাজ্য সরকারের মন্ত্রী, সাংসদরা থাকবেন সেখানে। আমরা যখন রাজঘাটে বসব, পঞ্চায়েতের প্রধানরা গান্ধিজীর মূর্তিতে মাল্যদান করবেন, শ্রদ্ধা জানাবেন। পারলে একটা মোমবাতি জ্বালাবেন। বিকেলে চাইলে শান্তিপূর্ণভাবে মোমবাতি মিছিলও করতে পারেন।’ বাংলার মানুষের প্রতি সমর্থন জানাতে এই মিছিল বলেই জানান অভিষেক। এরপর ৩ তারিখ দিল্লির যন্তর মন্তরে একত্রিত হয়ে একটি সভা করবেন তাঁরা। সকাল ১১টায় এই কর্মসূচি হবে। তা বাংলার প্রতিটা পঞ্চায়েত এলাকায় সরাসরি দেখানো হবে। পঞ্চায়েত প্রধান বা অঞ্চল সভাপতিরা তার দায়িত্বে থাকবেন। এই প্রসঙ্গে অভিষেক জানান,  ‘৩ তারিখ প্রতিবাদ সভা করব যন্তর মন্তরে। আমরা রামলীলা ময়দান চেয়েছিলাম ১ লক্ষ মানুষ যাতে থাকতে পারেন, চারদিনের জন্য চেয়েছিলাম দেয়নি। যেখানে অবস্থান বিক্ষোভ করতে চেয়েছি অনুমতি দেয়নি। তবে প্রতিবাদ সভা হবে। আগামীদিন এই লড়াইয়ের দিক নির্দেশিকা দিল্লির মাটি থেকেই ঘোষণা করব।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × four =