রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহার ভূমিকায় ক্ষুব্ধ রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজীব সিনহার জয়েনিং লেটার সই না করে তিনি নবান্নে ফেরাতেই রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল। তুঙ্গে রাজীব সিনহার পদত্যাগের জল্পনা। প্রশ্ন ওঠে এরপর কি নির্বাচন কমিশনারের পদে বহাল থাকতে পারবেন রাজীব সিনহা কি না তা নিয়েও। এই প্রসঙ্গে এবার মুখ খুললেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার পটনা যাওয়ার আগে মমতা স্পষ্ট ভাষায় জানান, এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের কাছে কোনও তথ্য নেই যে সব সাংবাদিকার এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেছিলেন তাঁদের কাছে মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা জানতে চান, ‘কোথায় ফাইল? আপনার পকেটে আছে? আমাদের কাছে এমন কোনও তথ্য নেই।’
একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এদিন এ দাবিও করেন, ‘এমন কোনও ঘটনা অতীতে কখনও হয়নি।‘ একইসঙ্গে এমন কিছু হওয়া নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন তিনি। সঙ্গে এও জানান, ‘রাজ্যপাল ফাইল পাশ করেছিলেন। উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়ার মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি।’ সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘রাজ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে যাবতীয় প্রক্রিয়া ‘সিস্টেম অনুযায়ীই’ হয়েছে। তাঁর সাফ কথা, নির্বাচন কমিশনারকে দায়িত্ব থেকে সরাতে হলে, বিচারপতিদের যেমন ইমপিচমেন্টের পদ্ধতি রয়েছে, সেই ইমপিচমেন্ট পদ্ধতিতে নির্বাচন কমিশনারকেও সরাতে হবে।‘
এরপরই রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। বলেন,’ও ওঁর মতো কাজ করছে। এত শান্তিতে মনোনয়ন, এর আগে কখনও হয়নি, মাত্র ৪টি বুথে অশান্তি হয়েছে। তার মধ্যে তো আমাদেরই লোক মারা গিয়েছে।’ একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনারের উপর আস্থা রেখে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পুলিশ অত্যন্ত স্মার্ট। তাদের উপর আস্থা রাখুন। একসময় কলকাতা পুলিশকে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সঙ্গে তুলনা করা হত।’ এরই রেশ ধরে নাম না করে বিরোধী দলের উপর ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ত্রিপুরায় ৯৬ শতাংশ সিটে কোনও ভোটই হয় না। এখানে লাখ লাখ নমিনেশন পড়েছে। একটা নির্বাচিত সরকারকে দমাতে সমস্ত কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে কাজে লাগানো হচ্ছে। ওরা যত আমাদের পিছনে লাগবে। যত ওরা আমাদের ঘাঁটাবে, তার জবাব মানুষ দেব। আমরা লড়ে নেব। জিতে নেব।’
উল্লেখ্য, এদিন হাইকোর্টে বিচারপতি অমৃতা সিনহার একক বেঞ্চেও রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের জয়েনিং রিপোর্ট ফেরত চাওয়ার প্রসঙ্গটি উঠেছিল। বিচারপতি এই বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। কমিশনার আদৌ দায়িত্বে আছেন কি না, তা জানতে চেয়েছিলেন বিচারপতি সিনহা। জবাবে কমিশনের তরফে বলা হয়েছিল, তিনি দায়িত্বে আছেন এবং যা শোনা যাচ্ছে সেটা কেবলই জল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়।
এদিকে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে যখন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখন রাজ্যপালের গলায় কমিশনারের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ ফুটে উঠে। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানান, ‘কমিশনার বাংলার মানুষকে নিরাশ করেছে।’