‘আজ এই রাজঘাটে দাঁড়িয়ে, দিল্লির মাটিতে দাঁড়িয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ছি, আগামীকাল লড়াই হবে। সরকারের ক্ষমতা কত আর জনগণের ক্ষমতা কত দেখা যাবে। গণতন্ত্রই শেষ কথা, আগামী দিনে এটা মানুষ প্রমাণ করে দেবে।’ সোমবার রাজঘাট চত্বরে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে এমনই ভাষায় রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে দেখা গেল তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এরপরই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সরাসরি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে বলেন, ‘শান্তি-সাধনা, কৃচ্ছ সাধনা, জাতির জনকের সংগ্রামের প্রতীক হল রাজঘাট। ২০২১ সাল থেকে ১৫,২০০ কোটি টাকা বাংলার পাওনা রয়েছে। জোর করে টাকা আটকে রেখেছে বিজেপি সরকার। এই বকেয়ার দাবিতে আমরা এই রাজঘাট থেকে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ শুরু করছি।’ এর পাশাপাশি অভিষেক এও জানান, সোমবারের পাশাপাশি মঙ্গলবারও প্রতিবাদ কর্মসূচি রয়েছে তৃণমূলের।
প্রসঙ্গত, সোমবর দুপুর ১টা নাগাদ রাজঘাটে শ্রদ্ধা জানাতে যান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ দলের সাংসদ, মন্ত্রী-বিধায়করা। সেখানেই ধর্নায় বসে প্রতিবাদে সামিল হন তাঁরা। এদিনের এই ধর্না থেকে অভিষেক কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে জানান, বাঁকুড়ায় দেওয়াল চাপা পড়ে ৩ শিশুর মৃত্যুর জন্য কেন্দ্রকেই কাঠগড়ায় তোলেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, এঁদের পাকা বাড়ি থাকলে এভাবে মৃত্যু হত না। এদের নাম আবাস তালিকায় ছিল। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ও গিরিরাজ সিংয়ের জেদের জন্য এদের মৃত্যু হয়েছে। কারণ, ২০২১ সাল থেকে বাড়ির টাকা, রাস্তার টাকা, জলের টাকা, ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।
এদিকে রাজঘাটে ২ ঘণ্টা শান্তিপূর্ণ অবস্থান করার সময় নেওয়া হয়েছিল জানিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা রাজঘাটে ১টায় আসি। তাঁকে পুষ্প দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে ১.১০ মিনিট থেকে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করি। কিন্তু, ১০ মিনিট অন্তর পুলিশ, সিআরপিএফ, সিআইএসএফ জওয়ানরা এসে মহিলাদের অবস্থান থেকে তোলার চেষ্টা করেন। এতেই তাঁদের সঙ্গে ধ্বস্তাধস্তি হয়।’ এরই রেশ ধরে কেন্দ্রের প্রতি সুর চড়িয়ে অভিষেক এও জানান, ‘গান্ধিজী কারও পৈতৃক সম্পত্তি নয়, সরকারের কেনা সম্পত্তি নয়। গান্ধিজী গোটা দেশের গর্ব। তাঁকে স্মরণ করার সকলের সমান অধিকার আছে। সকলের এই রাজঘাটে এসে বসা, গান্ধীজিকে স্মরণ করা, তাঁর পথকে পাথেয় করে অনুপ্রাণিত হওয়ার অধিকার আছে। আমরাও এসেছি তাঁকে পাথেয় করে আন্দোলন তীব্রতর করার। আমরা কেউ শ্লোগান দিইনি। টাকা ছাড়তে হবে পোস্টার নিয়ে কর্মসূচি করেছি। শান্তিপূর্ণ অবস্থান করেছি। তারপরেও অনেক চেষ্টা করেছে আমাদের আটকানোর, আমরা ২ ঘণ্টা অবস্থান করব বলেছিলাম, তাই করেছি।’
এরই পাশাপাশি দিল্লি আসার বিশেষ ট্রেন, বিমান বাতিল প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, ‘অনেক ষড়যন্ত্র করেছে আমাদের কর্মসূচি আটকানোর। ট্রেন বাতিল করেছে। ভেবেছিল, ট্রেন বাতিল করলে কেউ আসতে পারবে না। কিন্তু, সবাই এসেছে। বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ হয়ে মাথা উঁচু করে সবাই এসেছে। এরপর মঙ্গলবার যন্তর-মন্তরে বড় কর্মসূচি রয়েছে।’
কেন্দ্র বাংলার টাকা আটকে রেখেছে বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, সেটা এদিন বিজেপি স্বীকার করে নিয়েছে বলেও তোপ দাগেন অভিষেক। শুধু তাই নয়, এদিন বাংলার বিজেপি সাংসদরাও দিল্লিতে যান এবং সেখানে সাংবাদিক বৈঠকও করেন। সেখানেই বাংলার টাকা আটকে রাখার কথা বিজেপি স্বীকার করে নিয়েছে বলে অভিযোগ অভিষেকের। এরই রেশ ধরে অভিষেক এও বলেন, ‘আজ বাংলার বিজেপি সাংসদরা বিজেপি অফিস থেকে সাংবাদিক বৈঠক করছেন। কিন্তু, রাজঘাটে এসে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার ন্যূনতম সৌজন্য নেই।’
এদিকে এদিন রাজঘাটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রাণে মারার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে বলে অভিযোগ তুলতে দেখা গেল তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বিজেপির এই আচরণ লজ্জাজনক বলে ধিক্কারও জানান তিনি।