বৃহস্পতিবার সকালেই খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের বাড়িতে হানা দিলেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকেরা। সূত্রে খবর, এদিন সকালেই তাঁর মাইকেল নগরের বাড়িতে পৌঁছে যায় ইডি-র বিশেষ তদন্তকারী দল। পুর-নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে এই প্রথম কোনও মন্ত্রীর বাড়িতে চলছে তল্লাশি অভিযান। সঙ্গে এও জানা যাচ্ছে, মন্ত্রীর বাড়ি সহ ১৩ জায়গায় চলছে তল্লাশি। গোয়েন্দা আধিকারিকদের দাবি, পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলার অন্যতম কিংপিন অয়ন শীল তাঁর বয়ানে রথীন ঘোষের নাম উল্লেখ করেছেন। শুধু তাই নয়, সাম্প্রতিক নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত নথি চেয়ে মধ্যমগ্রাম পুরসভার কাছে নোটিশ পাঠায় ইডি। এরপরই বর্তমান চেয়ারম্যান নিমাই ঘোষ জানান, নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্যই তিনি পাঠিয়েছিলেন ইডি দপ্তরে। তবে সূত্রের খবর অয়ন শীলের ফাইল ঘেঁটে বেশ কিছু তথ্য উঠে আসে ইডির হাতে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে এদিন ভোর ছটায় ইডি আধিকারিকরা হানা দেয় মন্ত্রী রথীন ঘোষের মধ্যমগ্রাম মাইকেল নগরের বাড়িতে। সূত্রে এ খবরও মিলেছে, এদিন সকাল নাগাদ সিজিও কমপ্লেক্স থেকে ইডি-র একাধিক দল বের হয়। ১২ টি টিমে ভাগ হয়ে ৮০ জন ইডি আধিকারিক নামেন এই অভিযানে। এঁদের মধ্যে দশজনের একটি দল খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের বাড়িতে যায়। সঙ্গে রয়েছে সিআরপিএফ জওয়ানরাও। সূত্রে এ খবরও মিলছে, ইডি হানার সময় বাড়িতেই ছিলেন রথীন ঘোষ। ইডি আধিকারিকেরা হানা দেওয়ার সময়েই তাঁর এবং তাঁর পরিবারের লোকজনদেরও মোবাইল বাজেয়াপ্ত করেন। এদিকে ইডি সূত্রে খবর, পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে নাম জড়ায় রাজ্যের মন্ত্রীর। এখানে বলে রাখা শ্রেয়, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মধ্যমগ্রাম পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। বস্তুত, এ দিন মন্ত্রীর বাড়ি ছাড়াও, শহর এবং শহরতলির বিভিন্ন জায়গায় চলছে তল্লাশি। শুধু তাই নয়, রথীন অনুগামীদের বাড়িতেও চালানো হচ্ছে অভিযান।
এদিন শুধু খাদ্যমন্ত্রীই নন, টিটাগর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যানের বাড়িতেও একইসঙ্গে হানা দেয় ইডির একটি দল। উত্তর ২৪ পরগণা জেলার টিটাগর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রশান্ত চৌধুরীর বাড়িতে ভোরবেলা থেকে শুরু হয় ইডি তল্লাশি। টিটাগর পুরসভায় চাকরি নিয়োগ ক্ষেত্রে যে দুর্নীতি হয়েছিল, সেই ঘটনায় তদন্তে এসেছে ইডি। সকাল সাড়ে ছয়টা নাগাদ চার থেকে পাঁচ জন আধিকারিক প্রশান্ত চৌধুরীর বাড়িতে আসে। ২০১৬ সালে টিটাগর পুরসভায় ২২১ জন চাকরি পেয়েছিলেন বলে জানা যায়। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিয়ুক্ত ও ধৃত অয়ন শীলের হাত ধরে সেইসব চাকরি হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।
সূত্রের খবর, পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এদিন ইডি নজরে উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক পুরসভার চেয়ারপার্সন। জানা গিয়েছে, কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহা, বরানগর পুরসভার চেয়ারপার্সন অপর্ণা মল্লিক এবং দক্ষিণ দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারপার্সন নিতাই দত্ত, দক্ষিণ দমদম এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান পাঁচু রায় সহ পুরসভা নিয়োগ দুর্নীতিতে একাধিক জায়গায় চলছে তল্লাশি অভিযান।
বস্তুত, অয়ন শীলের সংস্থা কীভাবে বছরের পর বছর কীভাবে পুরসভাগুলির টেন্ডার পেয়েছে সেই বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়েই সন্দেহ দানা বাঁধে গোয়েন্দাদের। একমাত্র অয়ন শীলের সংস্থা যাঁরা নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থেকেছে। এরপর অয়ন শীল গ্রেফতার হতেই তাঁর বয়ানে রথীন ঘোষ ছাড়াও একাধিক রাজনৈতিক নেতার নাম উঠে এসেছে বলে ইডি সূত্রে খবর। গোয়েন্দারা মনে করছেন, এ দিনের তদন্তের পর বেশ কিছু নথি হাতে আসতে চলছে তাঁদের। যা থেকে তদন্ত আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সহজ হবে।