সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখা করে তবেই ছাড়বেন ধর্নামঞ্চ, নাছোড় অভিষেক

একশো দিনের বঞ্চনা এবং আবাস যোজনা ইস্যুতে রাজভবনের নর্থ গেটের সামনে ধরনায় বসেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। পঞ্চাশ থেকে একশো মিটারের মধ্যেই চলছে সেই অবস্থান বিক্ষোভ। উপস্থিত রয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য সহ রাজ্যের তাবড়-তাবড় বিধায়ক নেতা মন্ত্রীরা। তাঁরা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে তবেই ফিরবেন, এতোটাই নাছোড় তাঁরা। তবে এই বিক্ষোভ নিয়েই এবার কড়া রাজভবন। এদিকে রাজভবন সূত্রে খবর, রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস মুখ্যসচিবকে চিঠি পাঠাতে চলছেন। এই চিঠিতে সেখানে তিনটি ধারার কথা উল্লেখ রাখা হয়েছে। মূলত প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ১৪৪ ধারার মধ্যে কীভাবে অবস্থান চলতে পারে তা নিয়েই। এটি বেআইনি চিত্র।

এদিকে সূত্রে খবর, কলকাতায় ফিরছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজভবন সূত্রে খবর, রাজ্যপাল সন্ধ্যায় বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে রওনা দেবেন। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে অবতরণ করবে বোসের বিমান। রাত ৮টার মধ্যেই রাজভবনে পৌঁছে যাওয়ার কথা তাঁর। তবে এক সংঘাতময় পরিস্থিতিতেই কলকাতায়  রাজ্যপাল। সূত্রের খবর, তিনি অসুস্থ। চলতি অচলাবস্থা কাটাতে তিনি তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে শীঘ্রই আলোচনায় বসবেন কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। রাজ্যপাল কলকাতায় ফিরে রাজ্যের শাসকদলের প্রতি আরও অনমনীয় অবস্থান নিতে পারেন, এমন সম্ভাবনার দিকটিও কেউ কেউ উড়িয়ে দিচ্ছেন না।

এদিকে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল এবং রাজ্যপালের মধ্যে এই নয়া সংঘাতের সূত্রপাত ঘটে গত মঙ্গলবার রাতে। সংঘাতের প্রেক্ষাপট ছিল কেন্দ্রীয় বঞ্চনার। তবে অনুঘটক হিসাবে কাজ করেছে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের জোর করে দিল্লির কৃষি ভবন থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা।

প্রসঙ্গত, ১০০ দিনের কাজ করেও যাঁরা টাকা পাননি এবং কেন্দ্রীয় আবাস যোজনা প্রকল্প থেকে যারা ‘বঞ্চিত’, কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তাঁদের নিয়ে দিল্লিতে দু’দিনের কর্মসূচির আয়োজন করে তৃণমূল। এরপর গত মঙ্গলবার কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন, রাজঘাটে ধর্নার পর কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতির সঙ্গে দেখা করতে কৃষি ভবনে যান বাংলার শাসকদলের প্রতিনিধিরা। কিন্তু অভিযোগ ওঠে যে, তাঁদের দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখার পর পিছনের দরজা দিয়ে মন্ত্রী ‘পালিয়ে’ গিয়েছেন। দেখা করেননি। এরপর রাত ৯টা নাগাদ কৃষি ভবনে অবস্থানরত তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে জোর করে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে দিল্লি পুলিশ। শুরু হয় তুমুল ধস্তাধস্তি। প্রায় দু’ঘণ্টা পর রাত ১১টা নাগাদ ছেড়ে দেওয়া হয় তৃণমূল নেতৃত্বকে। এরপরই অভিষেক রাজভবন অভিযানের ডাক দেন। জানান, কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসাবে রাজ্যপালের হাতেই ‘বঞ্চিত’দের তরফে স্মারকলিপি তুলে দিতে চান তাঁরা। এই পরিকল্পনাতেই বৃহস্পতিবার দুপুর ২টোর পরে রবীন্দ্র সদন থেকে মিছিল বার করে তৃণমূল। গন্তব্য রাজভবন। মিছিলে যোগ দেন অভিষেকও।

এই ঘটনাতেও তৃণমূল-রাজ্যপাল সংঘাত ঘটে। কারণ, রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার জন্য বৃহস্পতিবার সময় চেয়েছিল তৃণমূল। অভিষেক রাজভবনের সামনের সমাবেশ থেকে জানান, বৃহস্পতিবার ইমেল মারফত রাজ্যপাল তাঁদের জানিয়েছেন, শিলিগুড়িতে গিয়ে দেখা করতে হবে। এরপর একেই ‘জমিদারি মানসিকতা’ বলে কটাক্ষ করেন অভিষেক। অভিষেকের কটাক্ষের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাজভবন সূত্রে রাজ্যপালের জবাব মেলে। রাজ্যপাল জানান, ‘জমিতে বা মাটির কাছাকাছি পৌঁছনো জমিদারি নয়। বরং, জমিতে না নেমে শহরের বিলাসী আস্তানায় বসে কৃষকদের নিয়ন্ত্রণ করা হল নব্যজমিদারি। রাজ্যপালের কাছে এই মাটি এবং তার মানুষ পবিত্র।’ এরপরই শনিবার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস আলোচনার জন্য তৃণমূলকে সময় দেন। তবে কলকাতায় নয়, দার্জিলিঙের রাজভবনে। তা নিয়েও একপ্রস্ত বিতর্ক হয়।

শনিবার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস আলোচনার জন্য তৃণমূলকে সময় দেন। তবে কলকাতায় নয়, দার্জিলিঙের রাজভবনে। তা নিয়েও একপ্রস্ত বিতর্কও হয়। রাজভবনের তরফে বৈঠক-বার্তা পাওয়ার পরে ধর্নামঞ্চ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন যে, শনিবার তৃণমূলের তিন সদস্য রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করবেন উত্তরবঙ্গে গিয়েই। কিন্তু মূল প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কলকাতায় ফিরে তাঁকে দেখা করতেই হবে এবং তা যত দিন না হচ্ছে, তত দিন তিনি ধর্না থেকে উঠবেন বলেও জানিয়ে দেন তিনি।

এরপর শনিবার ধর্নামঞ্চ থেকেই শনিবার সারা দিনে রাজ্যপালের কর্মসূচি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। দার্জিলিঙে তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা ছাড়া বোসের আর কোনও কর্মসূচি ছিল না, এমনটা দাবি করে অভিষেক রাজ্যপালের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনার যদি একটাই কর্মসূচি ছিল, তবে আপনি কলকাতায় এলেন না কেন?’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one + one =