রবিবার সকালে ফিরহাদ হাকিমের পর মদন মিত্রের ভবানীপুরের বাড়িতে পৌঁছান সিবিআই আধিকারিকেরা। সিবিআই সূত্রের খবর, পুর নিয়োগ দুর্নীতির কারণে তাঁর বাড়িতে যান তদন্তকারীরা। মদন মিত্রের বাড়ির সামনে মোতায়েন করা হয় কেন্দ্রীয় বাহিনীও। সূত্রে এ খবরও মেলে মদন মিত্রকে এদিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এরপর প্রায় ৫ ঘণ্টা তল্লাশির পর সিবিআই আধিকারিকরা এদিন বিধায়ক মদন মিত্রর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। ভবানীপুরে মদন মিত্রের বাড়িতে থেকে কী গুরুত্বপূর্ণ নথি পেলেন সিবিআই আধিকারিকেরা সে ব্যাপারে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি তাঁরা। মদন মিত্রের আইনজীবী নীলাদ্রি ভট্টাচার্য জানান, ওঁরা পুর নিয়োগ দুর্নীতিতে তল্লাশি চালিয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে তল্লাশি হয়েছে।
তল্লাশি শেষ হওয়ার পর এদিন মদন মিত্র জানান, ‘ওরা এসেছেন। যা যা জানতে চেয়েছেন আমি জানিয়েছি। এখন শুনছি যে ওরা দক্ষিণেশ্বরের বাড়িতেও গিয়েছে।’ এরপর তিনি বলেন, ‘যখন এই চাকরি হয়েছে পুরসভায়, তখন আমি এমএলএ ছিলাম না। শুধু তাই নয়, আমি তখন জেল হেফাজতে ছিলাম। কাস্টডিতে থেকে, একজন বিধায়ক না হয়েও কীভাবে চাকরি দেব।’
এরই পাশাপাশি নিয়োগ সম্পর্কে মদন মিত্রের ব্যাখ্যা, দক্ষিণেশ্বরে তাঁর অফিস রয়েছে। তিনি থাকুন বা না থাকুন, তাঁর কর্মীরা সেখানে থাকেন। সেখানে গিয়ে অনেকেই বলেন, চাকরি দেওয়ার কথা। নিষেধ করলেও তাঁরা ফেরেন না। তাই তাঁদের কাগজ জমা নেওয়া হয়। তবে তাঁদের চাকরি দেওয়া হয়, এমন প্রমাণ নেই বলেই দাবি করেন মদন মিত্র।
এরপরই রাজভবনের কাছে তৃণমূলের ধর্নামঞ্চে আসতে দেখা যায় কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রকে। দেখা করেন তিনি। দলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। শুধু তাই নয়, তাঁর সঙ্গে কথা বলতেও দেখা যায় কামারহাটির বিধায়ককে। দুজনের মধ্যে আলোচনাও হয় কিছুক্ষণ। এদিকে মদন মিত্র যখন রাজভবনের অদূরে ধর্নামঞ্চে আসেন, তখন মঞ্চের নীচে ছিলেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়। তাঁর সঙ্গেও কথা বলতে দেখা যায় মদন মিত্রকে। তবে সিবিআই তল্লাশির মোকাবিলা করেই মদনের সোজা ধর্নামঞ্চে আসার মধ্যে কোনও রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে কি না তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
এখানে একটা কথা বলতেই হয়, রাজ্যে পুর নিয়োগ দুর্নীতিতে কেন্দ্রীয় সংস্থা তৎপরতা বাড়ানোর পরই এই ঘটনায় কামারহাটি পুরসভার বেশ কিছু নথি সহ ৩৪ জন কর্মীকে তলব করাও হয়েছিল। এই সময়ই সংশ্লিষ্ট পুরসভার প্রধান গোপাল সাহা জানান, নির্দেশ অনুসারে যাবতীয় নথি পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অফিসে। এদিকে কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র। সেক্ষেত্রে পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলাতেই মদন মিত্রের বাড়িতে এদিন হানা দেয় সিবিআই।
এর আগেও পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গোয়েন্দারা একাধিক জায়গায় তদন্ত চালিয়েছিল। উল্লেখ্য, হুগলির প্রোমোটার অয়ন শীলের গ্রেফতারির পর থেকেই শিরোনামে উঠে এসেছে পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতি প্রসঙ্গ। তাঁর বাড়ি এবং অফিসে তল্লাশি চালিয়ে একগুচ্ছ নয়া তথ্য উঠে এসেছিল। এরপরেই এই মামলার তদন্ত করার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল ইডি। সেই আবেদনে সাড়া দিয়েই আদালত এই মামলায় সিবিআই-ইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। আর এই মামলাতেই পুজোর আগে সক্রিয় গোয়েন্দারা। এদিকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এজেন্সি রাজনীতির অভিযোগ আগেই তুলেছিল রাজ্য শাসক দল। সম্প্রতি রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথিন ঘোষের বাড়িতেও যান গোয়েন্দারা। তবে যেখানে দোরগোড়ায় পুজো ঠিক তার আগেই রাজ্য শাসক দলের দুই হেভিওয়েট রাজনীতিবিদ মদন মিত্র এবং ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে সিবিআইয়ের এই হানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বঙ্গ রাজনীতিবিদরা।