বিবাহ বিচ্ছেদের মামলায় কড়া পর্যবেক্ষণ কলকাতা হাইকোর্টের। এই মামলায় নিম্ন আদালত এর আগে বিবাহ বিচ্ছেদের রায় জানিয়ে দিয়েছিল। নিম্ন আদালতের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে বিয়ে টিকিয়ে রাখতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন স্বামী। এই মামলা ওঠে হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি সিদ্ধার্থ রায়চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চে। এই মামলাতে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, নিষ্ঠুরতার কোনও সংজ্ঞা নেই। ব্যক্তিবিশেষের উপর এটি নির্ভর করে বলেই মনে করছে আদালত। হাইকোর্টের মতে, একজনের কাছে যেটি নিষ্ঠুরতা, সেটি অন্য কারও কাছে নিষ্ঠুরতা নাও হতে পারে। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র মারধর নয়, অপমানজনক আচরণও নিষ্ঠুরতা। এই মর্মে নিম্ন আদালতের বিবাহ বিচ্ছেদের রায়ই বহাল রাখে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।
আদালত সূত্রে খবর, হাইকোর্টে মামলার শুনানির সময় আত্মপক্ষে নিজেই সওয়াল করেন স্বামী। অন্যদিকে স্ত্রীর আইনজীবীরা আদালতে জানান, বিয়ের পর থেকেই মহিলার স্বামী তাঁর উপর বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন। যখন স্ত্রী সন্তান সম্ভবা ছিলেন, এমনকী পরবর্তীতে যখন সন্তানের অস্ত্রোপচার হয়েছিল, তখনও স্বামীর থেকে ওই মহিলা কোনও সাহায্য পাননি বলে অভিযোগ। মহিলা যখন চাকরিতে যোগ দেন, তখনও স্বামী বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলেও দাবি করা হয়। এমনকী বেতনের টাকাও স্ত্রীর ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে না রেখে জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে রাখতে একপ্রকার বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্ত্রীর আইনজীবীর। শুধু তাই নয়, একই ছাদের তলায় থেকেও স্ত্রী ও সন্তানের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতেন স্বামী, এমন অভিযোগও রয়েছে। আদালতে দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব শোনার পর হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ, এই ধরনের আচরণকে ‘নিষ্ঠুরতা’ বলেই মনে করে।
এরপরই আদালত জানায় যে তারা মনে করছে, দাম্পত্য জীবনে প্রেম-ভালবাসা থাকা তো দূরের কথা, স্ত্রীর প্রতি কোনও সম্মানই দেখাননি ওই ব্যক্তি। এমন অবস্থায় যদি ওই মহিলাকে একই ছাদের তলায় স্বামীর সঙ্গে থাকতে বলা হয়, সেক্ষেত্রে তা মহিলার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে উদ্বেগজনক হবে বলেও মনে করছে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। সেই কারণে নিম্ন আদালতের দেওয়া বিবাহ বিচ্ছেদের নির্দেশই বহাল রাখে হাইকোর্ট।