ডিজিট্যাল অ্যারেস্ট, নতুন ধরনের সাইবার প্রতারণায় ১১.১১ লক্ষ টাকা খোয়ালেন দিল্লির বাসিন্দা

‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’।নতুন ধরনের সাইবার প্রতারণা। তারই শিকার হয়ে ১১.১১ লক্ষ টাকা খোয়ালেন নয়ডার বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের এক মহিলা। নয়ডা সেক্টর ৩৬-এর সাইবার ক্রাইম থানার ইন-চার্জ রীতা যাদব জানান, গত ২২ নভেম্বর তাঁদের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ জানান ৩৪ নম্বর সেক্টরের ওই বাসিন্দা।

এখন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক এই ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ কী তা নিয়ে। একেবারে নতুন এই পথে প্রতারকরা নিজেদের পুলিশ বা অন্য কোনও ল এনফোর্সমেন্ট আধিকারিক পরিচয়ে কল করছে টার্গেটকে। ভয় দেখানো হয় হয়, তাঁদের আধার বা সিম কিংবা ডেবিট কার্ড অথবা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ক্রিমিনাল কাজকর্ম হয়েছে। আর ভিডিয়ো কলে জেরার সম্মুখীন না হলে যে কোনও সময়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। স্বাভাবিক ভাবেই এমন ফোন কলে ঘাবড়ে যাচ্ছেন মানুষ। এরপর লম্বা সময় ধরে কোনও ভিডিয়ো কলে এঁদের আটকে রাখছে প্রতারকরা। আর সেই ফাঁকে গায়েব করে দিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। একেই পুলিশি ভাষায় বলা হয় ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক নয়ডার ওই প্রৌঢ়ার ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটেছে। তাঁর অভিযোগ, গত ১৩ নভেম্বর সকালে একটি ফোন আসে। সেখানে তাঁকে বলা হয়, তাঁর নামে একটি দ্বিতীয় সিম কার্ড ব্যবহার করে প্রতারণা হয়েছে মুম্বইয়ে। প্রথমে যে ব্যক্তি ফোনটি করে, সে জানায়, কল ট্রান্সফার করা হচ্ছে এক ‘আইপিএস’-এর কাছে। সেই ‘আইপিএস’ মহিলাকে জেরা করে। তারপরে নির্দেশ মেলে একটি ভিডিয়ো কলে যোগ দেওয়ার। তখনই জানানো হয়, তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। আর্থিক তছরুপের অভিযোগে জারি হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও! এমনকী, ভিডিয়ো কলে সেই ওয়ারেন্ট দেখানো হয় প্রৌঢ়াকে। তবে প্রশ্নকর্তার বিশ্বাস, মহিলা কোনও প্রতারণার সঙ্গে জড়িত নন। সেই কারণে এই সমস্যা থেকে উদ্ধার হওয়ার উপায়ও বাতলে দেন তাঁরা। আশ্বাস দেওয়াহয়, ‘সুপ্রিম কোর্ট অডিটর’দের নির্দেশ অনুযায়ী, তাঁর যাবতীয় অ্যাকাউন্টের টাকা একটি পাওয়ার ফিনান্স কর্পোরেশনে পাঠাতে হবে। এবং এর কিছুই কাউকে জানানো যাবে না, কারণ বিষয়টি ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র সঙ্গে নাকি জড়িত!

কিন্তু টাকা পাঠাতে হবে কেন এই প্রশ্নের ক্ষেত্রেও আগে থেকেই  আটঘাঁট বেঁধে প্রতারণার কাজে নেমেছিল প্রতারকরা। এই প্রশ্নের উত্তরে জানানো হয়, তিন দিনের মধ্যে সেই টাকা প্রৌঢ়ার কাছে ফিরে আসবে। তার মধ্যে অডিটরের তদন্ত শেষ হয়ে যাবে। স্বাভাবিক ভাবেই সে টাকা আর ফেরেনি। এবং প্রতারিত হয়েছেন বুঝে পুলিশের দ্বারস্থ হন প্রৌঢ়া। এরপরই আইটি অ্যাক্টে মামলা রুজু করে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। সঙ্গে এও জানা যাচ্ছে, সম্প্রতি এমনই অন্য একটি অভিযোগও নজরে এসেছে পুলিশের। সেক্ষেত্রে হরিয়ানার ফরিদাবাদে সাইবার প্রতারকরা পুলিশ অফিসার পরিচয়ে এক মহিলাকে একই রকম ভয় দেখিয়ে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ‘ডিজিটালি অ্যারেস্ট’ করে রাখে। তাঁকেও জানানো হয়েছিল যে তাঁর ব্যক্তিগত পরিচয়পত্র ব্যবহার করে বেআইনি কার্যকলাপ ঘটানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one + five =