খুনের মামলার তদন্ত নিয়ে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের সিপিকে তীব্র ভর্ৎসনা আদালতের

পুলিশের তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে ফের ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্ট। টিটাগড় থানার এক তদন্তের মামলায় আদালতের রোষের মুখে পড়তে হল পুলিশকে। তদন্তে গাফিলতি কথা সামনে এনে বুধবার বারাকপুরের সিপি অলোক রাজোরিয়াকে তীব্র ভর্ৎসনা করতে দেখা গেল কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও মহম্মদ সাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চকে। এর পাশাপাশি আদালতের পর্যবেক্ষণ, পুলিশের তদন্তের ধারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে পুলিশের ভূমিকা কী! এই ধরনের তদন্তের সঙ্গে যুক্ত টিটাগড় থানার তদন্তকারী অফিসার ও ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারকে পুলিশ মেডেল দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের।

প্রসঙ্গত, বুধবার টিটাগড়ের একটি খুনের মামলায়  বিচারপতি সিপিকে প্রশ্ন করেন, ‘তদন্তে গাফিলতি কেন এবং আদৌ কি খুনের তদন্ত করা হয়েছিল কি না তা নিয়ে। পাশাপাশি বিচারপতি কটাক্ষ করে এও বলেন, ‘রাজ্যে এমন সিপি ও এই ধরণের তদন্তকারী অফিসার থাকলে তদন্তের অবস্থা কী হবে? যা তদন্ত করছেন প্রত্যেককে পুলিশ মেডেল দেওয়া উচিৎ। রাজ্যের গর্ব তো আপনারা।’

প্রসঙ্গত ঘটনার সূত্রপাত গত বছরের ২৩ জুন। খড়দহ থানা এলাকার টিটাগড়ের লক্ষ্মীঘাট এলাকায় বাড়ি ভাড়ার টাকা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বচসা বাধে। এই বচসায় আহত হন বাড়ির গোবিন্দ যাদব। গুরুতর আহত অবস্থায় গোবিন্দকে প্রথমে বিএন বোস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু পরিস্থিতি সঙ্গীন হওয়ায় পরে তাঁকে আর জি কর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হলেও শেষরক্ষা হয়নি। ওইদিনই মৃত্যু হয় গোবিন্দ যাদবের।

ময়নাতদন্তের রিপোর্টে খুনের মতো আঘাতের কথা উল্লেখ থাকলেও মৃত গোবিন্দ যাদবের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, খুনের ধারা যোগ করেনি পুলিশ। বাড়িওয়ালার পক্ষ থেকে টিটাগড় থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয় বাড়িওয়ালার ওই সদস্যকে মারধর করে উপর থেকে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সরাসরি খুনের ধারা ৩০২ যোগ না করে ৩০৪ ধারা প্রয়োগ করে। এরপর এই ঘটনার জল গড়ায় আদালতে। আদালত পুলিশের এই তদন্তের গতিপ্রকৃতি দেখে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারকে সশরীরে হাজিরার নির্দেশ দেন বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ। এদিকে অভিযুক্ত আগাম জামিনের আবেদন নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। বুধবার সেই মামলারই শুনানি ছিল বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে।

এদিনের শুনানিতে বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ মৃতের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে। ওই রিপোর্টে খুনের মতো আঘাতের কথা উল্লেখ থাকলেও ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারার বদলে শুধুমাত্র ৩০৪ নম্বর অর্থাৎ অনিচ্ছাকৃত খুনের ধারা যোগ করা হয়। এরপরই বিচারপতি ব্যারাকপুর কমিশনারেটের সিপি অলোক রাজোরিয়াকে প্রশ্ন করেন, ‘কেন খুনের ধারা রুজু করা হয়নি?’ কেন সেটা করা হল, তা নিয়েই বিস্ময় প্রকাশ করে আদালত।

এরপরই বিচারপতির তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘তদন্তের গাফিলতির দায় এড়াতে পারেন না সিপি।’ জানতে চান লঘু ধারা দেওয়ার কারণ কী তা নিয়েও। সঙ্গে এও বলেন, অভিযুক্তদের হেফাজতে রেখে সিবিআই জেরা হওয়া উচিত।’

এদিকে আদালত সূত্রে খবর, এদিন সিপি-র তরফে আইনজীবী সওয়াল করতে গিয়ে জানান, সরকারের আইনজীবী আদালতে জানান, তদন্তের মধ্য দিয়ে যে সমস্ত তথ্য উদ্ধার হচ্ছে তাতে খুব শীঘ্রই ৩০২ ধারা যোগ করা হবে। এদিকে আদালতের নির্দেশ, বৃহস্পতিবারেই ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারকে আদালতে রিপোর্টের মাধ্যমে সশরীরে হাজিরা দিতে হবে। জানাতে হবে, তদন্তের কোন পর্যায়ে তাদের মনে হল এই মামলায় ৩০৪ নয় ৩০২ অর্থাৎ সরাসরি খুনের দ্বারা যুক্ত করা প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − six =