সোমবার থেকে শুরু হল ভাঙড় ডিভিশনের পথ চলা। আর এই ভাঙড় ডিভিশনে কলকাতার নামকরা থানা কিংবা গোয়েন্দা দফতরের দাপুটে অফিসার থেকে বদলি হয়ে ভাঙড়ের দায়িত্ব পেয়েছেন কয়েকজন পুলিশ আধিকারিক। তারুণ্যের উপর গুরুত্ব দিয়ে কলকাতার আট জন সফল অফিসারকে ভাঙড় ডিভিশনের চারটি থানার ওসি ও অতিরিক্ত ওসি করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ভাঙড়কে কলকাতা পুলিশের অধীনে আনার কথা আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল।আটটি থানাকে নিয়ে ভাঙড়কে আলাদা একটি ডিভিশন করা হয়। ভাঙড় থানাকে ভেঙে ভাঙড় ও চন্দনেশ্বর থানা, অন্যদিকে কাশীপুর থানাকে ভেঙে পোলেরহাট ও উত্তর কাশীপুর থানা করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে মাধবপুর, বোদরা, হাতিশালা ও বিজয়গঞ্জ বাজার থানাও চালু করা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। চারটি থানার পাশাপাশি ভাঙড় ট্র্যাফিক গার্ডও সোমবার থেকে কাজ শুরু করল। সবমিলিয়ে দুশোরও বেশি পুলিশ কর্মী দায়িত্ব নেবেন ভাঙড়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার। প্রসঙ্গত, শনিবার কলকাতা পুলিশ কমিশনার এই সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা জারি করেন। যেখানে নজরে আসে ভাঙড় থানার ওসি হিসাবে লালবাজার গোয়েন্দা বিভাগ থেকে ইন্সপেক্টর সুশান্ত মণ্ডলকে পাঠানো হল। অতিরিক্ত ওসি হিসাবে যাচ্ছেন সেন্ট্রাল ডিভিশন থেকে হরিদাস বৈদ্য। উত্তর কাশীপুরে ওসি হলেন অমিতকুমার চট্টোপাধ্যয়। বর্তমানে তিনি পার্ক স্ট্রিট থানার অতিরিক্ত ওসি। উত্তর কাশীপুরে অতিরিক্ত ওসি করা হয়েছে ফিরোজ তামাংকে। ওসি চন্দনেশ্বর হচ্ছেন সুনীল দেবনাথ। গোয়েন্দা দপ্তরের জন কার্তিককে অতিরিক্ত ওসি করা হয়েছে। জোড়াবাগানের অতিরিক্ত ওসিকে পোলেরহাট থানার ওসি করা হয়েছে। অতিরিক্ত ওসি থাকছেন বন্দর ডিভিশনের মণীশ সিং। হাতিশালা, বিজয়গঞ্জ, মাধবপুর ও বোদরা –এই চারটি থানার পরিকাঠামোর কাজ এখনও শেষ হয়নি। তাই আপাতত ওই চার থানা থেকে পরিষেবা দিতে চাইছে কলকাতা পুলিশ। এই থানাগুলোর মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি সোমবার থেকে ভাঙড়ে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণও করবে কলকাতা পুলিশ। ভাঙড় ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি করা হয়েছে সাউথ ওয়েস্ট ট্র্যাফিক পুলিশ গার্ডের অতিরিক্ত ওসি মিদ্দা ইমামুদ্দিনকে। অতিরিক্ত ওসি হিসাবে শিয়ালদহ ট্র্যাফিক গার্ড থেকে যাচ্ছেন গোপাল দাস।
পূর্বতন ভাঙড় ও কাশীপুর থানার ওসিদের বারুইপুর হেড কোয়ার্টারে ট্রান্সফার করা হলেও ভাঙড়ের সিআই থাকছেন। ভাঙড়ের সার্কেল ইনস্পেক্টর প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায় এতদিন কাশীপুর, জীবনতলা থানা ও ঘুটিয়ারি শরিফ পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বে ছিলেন। এখন থেকে তিনি শুধু জীবনতলা থানা ও ঘুটিয়ারি শরিফ ফাঁড়ির দায়িত্বে থাকবেন। পাশাপাশি ভাঙড় ও কাশীপুর থানার সুপারভিশনের জন্য যে ডিএসপি (ক্রাইম) পদমর্যাদার অফিসার ছিলেন, সেই পদের বিলোপ হবে বলে সূত্রের খবর। তবে ভাঙড় ও কাশীপুর থানার পুরোনো কয়েকজন অফিসার ও কনস্টেবলকে রাখা হচ্ছে কলকাতা পুলিশকে সহায়তা করার জন্য।
সোমবারের ভাঙড় ডিবিশন শুরু হওয়ার আগে রবিবারই অনেক পুলিশকর্মী চলে আসেন এলাকা পরিদর্শনে। চারটি নতুন থানার পরিকাঠামো দেখার পাশাপাশি তাঁরা কথা বলেন পুরোনো থানার অফিসারদের সঙ্গে। অনেককে দেখা যায় এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গেও কথা বলতে। সবার মনে একটাই আশঙ্কা, তাঁরা কি পারবেন ভাঙড়ে আইনশৃঙ্খলা সামলাতে? কলকাতার যে কোনও থানার থেকে আকার আয়তনে বড় ভাঙড়ের চারটি থানার সীমানা। রাস্তায় স্ট্রিট লাইট নেই। নেই এলাকায় পর্যাপ্ত সিসিটিভিও। এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন সদ্য দায়িত্ব পাওয়া পুলিশ আধিকারিকেরাও।ভাঙড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে হেলমেট পরা নিয়ে ব্যাপক অনীহা আছে। বেশিরভাগ গাড়ির সঠিক কাগজপত্র থাকে না। রাস্তার উপরেই দাঁড়িয়ে থাকে ট্রাক-বাস। সে সব সামলে ট্র্যাফিক ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন পুলিশকর্তারা। এরই পাশাপাশি এলাকার পরিবেশ, পরিস্থিতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সাধারণ মানুষের সমস্যা-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেন।