আইএসএফ-এর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সভা থেকে নিঃশব্দে প্রতিবাদ নওশাদের

নেতাজি ইন্ডোরে কোনও রাজনৈতিক দলের সভা। অথচ সেখানে নেই কোবনও চেয়ার। ফাঁকা গ্যালারিও। এমন ছবি কখনও কেউ দেখেছেন বলে মনে পড়ে না। তবে এমনই ঘটনা ঘটতে দেকা গেল আইএসএফের প্রতিষ্ঠা দিবসে। ওয়াকিবহল মহলের দাবি, জমায়েত না করে আসলে নিঃশব্দ প্রতিবাদ করল আইএসএফ।

এদিকে বলে রাখা শ্রেয়, ২১-এর আইএসএফ-এর এই প্রতিষ্টা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ১০০০ জনের বেশি জমায়েত করা যাবে না,  এমনই নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট৷ এই প্রসঙ্গে আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি জানান, ‘আমরা কোর্ট অর্ডার মেনে চলব। ১০০০ জন কর্মী সমর্থক ঢুকবেন, আর বাকিরা ঢুকতে পারবেন না, এমনটা হলে তাঁরা মনোক্ষুণ্ণ হবেন, তাই নেতাজি ইন্ডোর ফাঁকাই রাখা হবে৷’ সঙ্গে তাঁর সংযোজন, গ্রামেগঞ্জে স্ক্রিন লাগিয়ে কর্মীদের কাছে বার্তা দেওয়া হবে। এদিকে নেতাজি ইন্ডোরে ভিতরে ম্যাট পাতা হয়েছে। সঙ্গে এও জানাতে ভোলেননি, কলকাতা পুলিশ বিশেষ ক্যামেরা ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও শুনেছেন তিনি।

এরই পাশাপাশি নওশাদ এও বলেন, ‘আমরা কোনও ভাবে কোর্ট অর্ডার অমান্য করব না। বিভিন্ন জায়গায় স্ক্রিন করেছি মাধ্যমে বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে। মিডিয়া ছাড়া আর হাতে গুনে মঞ্চে নাওশাদ সিদ্দিকি সহ ১০থেকে ১২ জন আইএসএফ কর্মীরা রয়েছে। অর্থাৎ, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কোনও জমায়েত না করে প্রতিবাদ করে প্রতিষ্ঠা দিবস অনুষ্ঠান করল আইএসএফ।

এদিন ইন্ডোরে গিয়ে দেখা যায়, মেঝের উপরে চেয়ার ছাড়া মঞ্চে ম্যাটে বসে রয়েছেন শুধু  নওশাদ সিদ্দিকি সহ হাতে গুণে জনা ১২ জন আইএসএফ নেতৃত্ব। এদিকে কলকাতা পুলিশের তরফে বিশেষ ক্যামেরা ব্যবস্থা মাধ্যমে নজরদারি করা হচ্ছে। এমনকি, নেতাজি ইনডোরে গেটে বন্ধ করে প্রত্যেকের আইডি কার্ড দেখে তবেই ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছিল। চেক করা হচ্ছিল গাড়ির নম্বরও।

তবে এদিনের এই মঞ্চ থেকেই  মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ ছুড়তেও দেখা যায় ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক তথা দলের প্রধান মুখ নওশাদ সিদ্দিকিকে।তাঁর অভিযোগ, কোনও দাবি উঠলেই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর্থিক সমস্যার কথা বলেন। নওশাদ বলেন, ৬ মাসের জন্য তাঁকে অর্থদফতরের দায়িত্ব দেওয়া হোক। দেখিয়ে দেবেন, কীভাবে তা চালাতে হয়। এরই রেশ টেনে এদিন নওশাদ এও বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী বলেন রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা তলানিতে। হাসপাতালে বেড নেই কেন, বলেন অর্থের দুরবস্থার কথা। সরকারি কর্মীদের ডিএর কথা বললে অর্থের দুরবস্থার কথা বলেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মানোন্নয়ন থেকে শিক্ষক নিয়োগ যাই বলি, অর্থের দুরবস্থার করা বলেন। আমি নেতাজি ইন্ডোর থেকে বলি, যদি আপনি রাজ্যের ভাল চান, নওশাদ সিদ্দিকীকে আগামী ৬ মাসের জন্য অর্থদফতরটা দিয়ে দিন। রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা আমি পরিবর্তন করে দেখিয়ে দেব। যদি তা না পারি রাজনীতি করাই আমি ছেড়ে দেব।’ একইসঙ্গে নওশাদের চ্যালেঞ্জ, যেদিন তাঁকে এই দায়িত্ব দেওয়া হবে, পরদিন থেকেই সরকারি কর্মীদের কেন্দ্রীয় হারে ডিএ-র ব্যবস্থা করে দেবেন তিনি। একটাও সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্প বন্ধ হবে না বলেই জানান তিনি।

তবে এতো কিছুর মাঝেও ভুলে গেলে চলবে না, এক বছর আগে আইএসএফের প্রতিষ্ঠা দিবসের দিন রণক্ষেত্র আকার নিয়েছিল ধর্মতলা চত্বর। হাতিশালায় সেদিন তুমুল সংঘর্ষ বেঁধেছিল আইএসএফ ও তৃণমূলের মধ্যে। ধর্মতলায় নাওশাদ বক্তৃতা দেওয়ার সময় আচমকা উত্তপ্ত হয়ে পরে। খণ্ডযুদ্ধ বাঁধে পুলিশের সঙ্গেও। জমায়েত হঠাতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোঁড়ে পুলিশ। পুলিশকর্মী ও আইএসএফ দু’পক্ষেরই বেশ কয়েকজন আহত হয়। সেই ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছিলেন নওশাদ। দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে অবশেষে জামিন পান। সেই আইএসএফের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে প্রথমে ভিক্টরিয়া হাউসের সামনে অনুষ্ঠান করার অনুমতি চেয়েছিল আইএসএফ৷ তবে সেই অনুমতি পায়নি। এরপর হাই কোর্ট ডিভিশন বেঞ্চের মারফত নেতাজি ইন্ডোরে সভার অনুমতি পায়। কবে সেখানেও জমায়েতের সদস্য সংখ্যা বেঁধে দেওয়া হয় হাজারে৷ সেই অনুসারে রবিবার কার্যত নিঃশব্দে প্রতিবাদ করে নেতাজি ইন্ডোরে সভা করল আইএসএফ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × one =