কলকাতা জেলার এসএফআই-এর সম্পাদক এবং সভাপতি পদে দুই বঙ্গকন্যা

কলকাতা জেলা এসএফআই- এর নতুন সম্পাদক হলেন দিধীতি রায়। সভাপতি হয়েছেন বর্ণনা মুখোপাধ্যায়। অতীতে একসঙ্গে এসএফআই- এর কোনও জেলা কমিটির সম্পাদক আর সভাপতির দায়িত্ব মেয়েদের হাতে গিয়েছে বলে কেউ মনে করতে পারছেন না। স্বাভাবিক ভাবেই এই পদক্ষেপ থেকে এটা স্পষ্ট যে , এসএফআই-এর  রাজ্য সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিনের নানা পথকে ভেঙে নতুন ছকে হাঁটছে তাঁরা। সেই পথেই নব সংযোজন কলকাতা জেলা কমিটির পদাধিকারীরা।

এসএফআইয়ের ইতিহাসে বাংলায় কখনও কোনও জেলায় একসঙ্গে দুই শীর্ষপদে মহিলা মুখ দায়িত্ব পায়নি।দেশেও কোনও জেলায় এমন নজির রয়েছে কি না অনেকেই মনে করে বলতে পারছেন না। এই ঘটনাকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিচ্ছেন সিপিএমের ছাত্রনেতারা। কিন্তু আবার এই ‘ঐতিহাসিক’ সম্মেলনকে কেন্দ্র করেই কলকাতা জেলা সিপিএমের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব সামনে চলে এসেছে। আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, এর প্রভাব ছাত্র সংগঠনের রাজ্য সম্মেলনে পড়বে কি না তা নিয়ে।

কলকাতা সিপিএমে ‘কট্টরপন্থী’দেরই পাল্লাভারী। কয়েক বছর আগে সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্মেলনে মধ্যরাত পর্যন্ত ভোটাভুটি দলের মধ্যে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল। সেই সময়ে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট চেয়েছিল অধুনা প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মানব মুখোপাধ্যায়কে জেলা সম্পাদক করতে। কিন্তু পাল্টা নাম এনে কল্লোল মজুমদারকে বিপুল ভোটে জিতিয়ে জেলা সম্পাদক করা হয়েছিল। সেই থেকে তাঁরাই জেলা কমিটি ও সম্পাদকমণ্ডলীতে সংখ্যাগরিষ্ঠ।। কিন্তু এ বারের ছাত্র সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সেই শিবিরেই ভাঙন ধরেছে বলে খবর।

এই প্রসঙ্গে বলে রাখা শ্রেয়, বছর তিনেক কলকাতা জেলা এসএফআই-এর সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন আতিফ নিসার। সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন দেবাঞ্জন দে। এবার একযোগে সংগঠনের দুই মহিলা কর্মীর কাঁধে গেল গুরু দায়িত্ব। দলীয় সংগঠনে মহিলাদের উপস্থিতি নিয়ে বারবার প্রশ্ন ওঠে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কর্তাদের ভূমিকায়। এমনকি, সম্প্রতি প্রকাশিত এক পার্টি চিঠিতেও এই ঘটনা সামনে আসে। যা নিয়ে  উদ্বেগ প্রকাশও করেন পার্টির একাংশ। চিঠিতে সমালোচনা করা হয় শাখা থেকে রাজ্য কমিটির সক্রিয়তা নিয়ে। একইসঙ্গে সমালোচনা করা হয়েছে শাখা, এরিয়া, জেলা ও রাজ্য কমিটির সক্রিয়তা নিয়েও। পাশাপাশি মাঠে ময়দানে আন্দোলনে তরুণদের উপস্থিতি চোখে পড়লেও তাঁদের দলীয় সদস্যপদ নেওয়া বা দেওয়ার ক্ষেত্রে যে যত্ন পরিচর্যার প্রয়োজন, তা নিয়ে গুরুতর দুর্বলতা ও ঘাটতি থাকছে তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এই চিঠিতে। এরপরই দুই মেয়ের ওপর ভরসা রাখায় এটা নিশ্চিত যে করে কলকাতার ছাত্র সংগঠনকে আরও গোছাতে চায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।

এই প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারনা, নবীন প্রজন্মকে এগিয়ে দিয়ে পিছনে থাকতে চাইছেন মহম্মদ সেলিম, বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্ররা। আর এই ছবি ধরা পড়ে সম্প্রতি হয়ে যাওযা ব্রিগেডেও। তবে পার্টি চিঠিতে তার বিপরীত চিত্রের কথাই উঠে এসেছে।

এদিকে মহিলাদের দলীয় সদস্য পদে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রেও গুরুতর দুর্বলতা রয়েছে বলেও মেনে নিয়েছেন সিপিআইএম নেতৃত্ব। তবে এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র শাখাগুলির উপর দায় চাপিয়ে দিলেই হবে না। দায় নিতে হবে এরিয়া, জেলা কমিটিকেও। তবে সেই মহিলাদের দলীয় সদস্য পদ দেওয়া নিয়ে সিপিআইএমের অন্দরে সমস্যা রয়েছে, তা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে চর্চাও হয়। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। মহিলাদের সদস্য পদ যে বাড়ানো যায়নি, তা স্পষ্ট ওই পার্টি চিঠিতে। তবে এ ক্ষেত্রে রাজ্য কমিটির ভূমিকাও আতস কাঁচের নিচে। সে কারণেই বলা হয়েছে মহিলাদের সদস্য পদ দেওয়ার ক্ষেত্রে  সক্রিয় হতে হবে রাজ্য কমিটিকেও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen − fourteen =