তামাকের বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাচ্ছে ভারত

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন সম্প্রতি চিকিৎসাক্ষেত্রে যাঁরা কর্মরত তাঁদের জন্য একটি নির্দেশিকা জারি করেছে। অনেকেই ধারনা করছেন এটি সম্ভবত স্বাস্থ্য মহানির্দেশালয় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক এর নির্দেশক্রমেই করা হয়েছে। এই চিঠিতে স্বাস্থ্য মহানির্দেশালয় এবং স্বাস্থ্য ওপরিবার মন্ত্রকের পূর্বানুমোদন ছাড়া ই-সিগারেট সংক্রান্ত কোনো গবেষণা কার্যক্রম শুরু বা অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য চিকিৎসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশ ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এর সুপারিশের সাথে যথেষ্ট সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করছেন চিকিৎসকদের বিরাট একটি অংশ।

প্রসঙ্গত, দেশকে আত্মনির্ভর করে তোলার পাশাপাশি রুপান্তরিত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে দৈনন্দিন জীবনে পরিবর্তন আনতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গেলে ভারতে গবেষণা উচ্চমানের, বৈজ্ঞানিক এবং উদ্ভাবনী হতে হবে। এটি শুধুমাত্র তখনই সম্ভব যখন প্রাথমিক গবেষণার উপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এই প্রসঙ্গেই উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রচেষ্টা আরও কার্যকর হতে পারে যদি তা সঠিক তথ্য দ্বারা চালিত হয়। সেক্ষেত্রে ধূমপায়ী নয় এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে ই-সিগারেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে তুলনার জায়গায় ধূমপায়ী এবং ই-সিগারেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে তুলনা, নতুন নিকোটিন বিকল্পগুলির প্রভাব বোঝার ভিত্তি হওয়া উচিত। এই জাতীয় সমস্যাগুলি, যেখানে তথ্যগুলির ব্যবহারিক এবং বাস্তবিকভাবে তুলনা করা হয় না, তা আগামীদিনে নানা বিধিনিষেধ এবং বাধার ভূমিকায় সামনে এসে দাঁড়ায়।

এখানে বলে রাখা শ্রেয়, ব্রিটেন এবং সুইডেন, নিকোটিনের বিকল্প ব্যবহার এর জন্য একটি উপযুক্ত নীতি গ্রহণ করেছে। ব্রিটেনের স্বাস্থ্য বিভাগের তরফ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, নিকোটিনের বিকল্পগুলি প্রচলিত দাহ্য তামাকের চেয়ে অন্ততঃ ৯০ শতাংশ কম ক্ষতিকারক। এটি ২.৫ মিলিয়ন ধূমপায়ীর সামনে উপযুক্ত বিকল্প যেমন এনে দিয়েছে যা তাঁদের শেষ পর্যন্ত তামাক ছাড়তে সহায়তা করে। সুইডেন শীঘ্রই বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ধূমপান এর সমস্যা মুক্ত হতে যাচ্ছে। নতুন নিকোটিন বিকল্পের সাহায্যে মাত্র ১৫ বছরে ধূমপানের প্রবণতা ১৫ শতাংশ থেকে ৫.৬ শতাংশে নেমে এসেছে। এছাড়াও, সেখানে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ৪১ শতাংশ কমেছে।

এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, সিডিসি-র সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে যে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ভেপিং এর হার বাড়লেও প্রাপ্তবয়স্ক বা কিশোরদের মধ্যে ধূমপানের হার বাড়েনি বরং উভয় গোষ্ঠীর মধ্যে এই হার হ্রাস পেয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যে ২০১৯ সালের তুলনায় টিন ভেপার ৬১ শতাংশ কমেছে। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ‘হু’ কর্তৃক প্রকাশিত নথিগুলি সম্প্রতি বিভিন্ন দেশে সমস্ত তামাকজাত পণ্য নিষিদ্ধ বা সীমাবদ্ধ এবং সে গুলির উপর কর আরোপের সুপারিশ করেছে। ধূমপান ও ভেপিং-কে একই স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এই মুহূর্তে জনস্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের দেশ ভারতবর্ষেও কাস্টমাইজড বা ব্যক্তিগতকৃত তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতির খসড়া তৈরি করা নীতিনির্ধারকদের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে। কার্যকর নীতি প্রণয়ন করতে পারে এমন গবেষণা আমাদের ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ জনস্বাস্থ্য বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে এনে দিয়েছে। অন্যান্য অনেক জনস্বাস্থ্য ইস্যুতে এত দিন ধরে যে গুলি কাজ করে এসেছে সেগুলি আমরা এক্ষেত্রেও ব্যবহার করতে পারি। এরজন্য আমাদের কেবল বিজ্ঞান, যুক্তি এবং মানবতাবাদকে আলিঙ্গন করা দরকার। সোজা কথায়, আমাদের দেশের ‘বিকশিত ভারত @২০৪৭’ এর এর পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জনে সহায়তা করার জন্য ভারতকে গবেষণার ক্ষেত্রে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড অর্থাৎ সর্বোচ্চ মান ফিরিয়ে আনতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight + fifteen =