আরাবুলের গ্রেফতারির পর রাজনৈতিক সমীকরণ বদলাচ্ছে ভাঙড়ের

শুক্রবার ১২ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয় আরাবুলকে। ভাঙড় কলকাতা পুলিশের আওতায় আসার পর এই প্রথম কোনও বড় রাজনৈতিক গ্রেফতারি। আরাবুলকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করা হয় আইএসএফ কর্মী খুনের মামলায়। পঞ্চায়েত ভোটের আবহে বিজয়গঞ্জ বাজারে আইএসএফ-তৃণমূলের সংঘর্ষে মইনুদ্দিন মোল্লা নামে এক আইএসএফ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। সেই ঘটনার জেরেই এই গ্রেফতারি বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

ভাঙড়ে শাসকশিবিরের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা হিসাবেই আরাবুল ইসলামকে সকলে চেনেন। তবে এদিন যেভাবে আরাবুলকে আদালতে তোলা হয়, তাতে তাঁকে দেখে চেনার উপায়ই নেই।  একেবারে সাদা কাপড়ে শক্ত করে বাঁধা মুখ। কারও ধারনা মুখ লুকিয়েছেন আরাবুল। এদিকে সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার বিকালে উত্তর কাশীপুর থানায় আচমকাই ডেকে পাঠানো হয়েছিল আরাবুলকে। সেখান থেকেই গ্রেফতারি। এরপর সোজা লালবাজারে আনা হয় আরাবুলকে। পঞ্চায়েত ভোটের সময় মনোনয়ন জমা থেকে শুরু করে গণনা অবধি হিংসা জিইয়ে রেখেছিল ভাঙড়। এই সময় বারবার অভিযোগে নাম জড়িয়েছিল আরাবুলের।

এদিকে শুক্রবার শুনানিপর্বে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজত চান সরকার পক্ষের আইনজীবী। অন্য অভিযুক্তদের চিহ্নিত করতে এবং এই ঘটনায় ব্যবহার হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করার জন্য আরাবুলকে হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন বলে জানান তিনি। আরাবুল কীভাবে এই ঘটনায় যুক্ত তার পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ রয়েছে কেস ডায়েরিতে, জানান সরকার পক্ষের আইনজীবী।

অন্যদিকে আরাবুলের আইনজীবীরা বলেন, ৮ মাসের পুরনো ঘটনায় হঠাৎ থানায় ডেকে গ্রেফতার করা হয়েছে আরাবুলকে। আরাবুল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি এর সঙ্গে যুক্ত নন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় এসব হচ্ছে। সঙ্গে এও জানান, আরাবুল অসুস্থ। এরই পাশাপাশি আইনজীবীর আর্জি তাঁর উচ্চ রক্তচাপ তাই জেলেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। উভয়পক্ষের সওয়াল জবাব শেষে ১২ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি ফের এই মামলার শুনানি।

এদিকে আরাবুল গ্রেফতার হতেই জল্পনার শুরু ভাঙড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের আরাবুল-কাইজার জামানার সমাপ্তি কি না তা নিয়েই। পাকাপাকিভাবে কি এবার ভাঙড়ের সবুজ মাটি শওকাত মোল্লার কানাঘুষো শুরু হয়েছে  এ আলোচনাও। কারণ, পঞ্চায়েত ভোটের পর ভাঙড় ১ তৃণমূল কংগ্রেস থেকে কার্যত ছেটে দেওয়া হয়েছে কাইজার আহমেদকে। পঞ্চায়েত ভোটে কোনও টিকিট দেওয়া হয়নি তাঁকে। এমনকি দলের কোনও পদেও তাঁকে রাখা হয়নি। ফলে ভাঙড় ২ ব্লকে আরাবুল ইসলাম গ্রেফতার হওয়ার পর শওকাত মোল্লার হাতেই থাকবে ক্ষমতা। পাকাপাকি ভাবে শওকাত মোল্লা ভাঙড়ের রাশ নিজের হাতে রাখবে বলে মত রাজনৈতিক কারবারিদের। এদিকে সাম্প্রতিক ইতিহাস বলছে আগেই অবিভক্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার তৎকালীন সভাপতি শোভন চট্টোপাধ্যায় ভাঙড় বিধানসভার মোট ১৩টি অঞ্চলকে দু’টি ভাগে ভাগ করেন। ১০টি অঞ্চল নিয়ে তৈরি হয় ভাঙড় ২ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস। দায়িত্বে আরাবুল ইসলাম। বাকি তিনটি অঞ্চল নিয়ে তৈরি হয় ভাঙড় ১ এর ‘এ’ তৃণমূল কংগ্রেস। তিনটি অঞ্চল জাগুলগাছি, প্রানগঞ্জ ও নারায়নপুর। যার দায়িত্ব ভার দেওয়া হয় কাইজার আহমেদের হাতে।

তেইশের পঞ্চায়েত ভোটের পর ভাঙড় ১ এর ‘এ’ সাংগঠনিক কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। সরানো হয় কাইজারকে। ভাঙড় ১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি হয়। ভাঙড় ১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক সভাপতি হন শাহাজান মোল্লা। তিনি আবার শওকাত মোল্লার ডান হাত হিসাবে পরিচিত। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পান বাহারুল ইসলাম, আহসান মোল্লা, সাবিরুল ইসলামরা। অপরদিকে ভাঙড় ২ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম মুখ অহিদুল ইসলাম ও নান্নু হোসেন ২০২১ বিধানসভা ভোটের পর মারা যান। একমাত্র বরিষ্ঠ নেতা হিসাবে থাকেন আরাবুল ইসলাম। এখন আরাবুল ইসলাম সরে যেতেই বেশ কয়েকটি সম্ভাবনার জন্ম হয়েছে। এখানেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারনা, ভাঙড় ২ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস ভেঙে হতে পারে তিনটি সাংগঠনিক কমিটি। যেখানে শওকাত মোল্লা ঘনিষ্ঠরাই সেই কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন। আরাবুল ইসলাম বিরোধী হিসাবে পরিচিত খাইরুল ইসলাম (পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য),  জাভেদ মিঁয়াদাদ(আরাবুল বিরোধী হিসাবে পরিচিত নান্নু হোসেনের ছেলে),  মিজানুর রহমান(পোলেরহাট ১ এর প্রাক্তন প্রধান), মহাসিন গাজিরা (ভাঙড় ২ সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি) গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেতে পারে বলে খবর। ফলে একরকম ভাঙড় তৃণমূল কংগ্রেসের রাশ থাকবে শওকাত মোল্লার হাতেই বলে অনুমান রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − nine =