মঙ্গলবার সকালে কলকাতার ৬ জায়গায় ইডির হানা

মঙ্গলবার সাত সকালে রেশন দুর্নীতি মামলায় সক্রিয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। এদিন সকাল থেকেই সল্টলেক সহ কলকাতার মোট ছয় জায়গায় তল্লাশি চালায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এদিকে সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সকাল ৭টা নাগাদ সল্টলেকের আইবি ব্লকের একটি বাড়িতে তল্লাশি চালান তদন্তকারীরা। এছাড়াও বাগুইআটি, কৈখালি, পার্ক স্ট্রিটেও হানা দেয় ইডি-র তদন্তকারী দল। আর তদন্তকারীদের সঙ্গে রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীও।

এদিকে ইডি সূত্রে খবর, রেশন দুর্নীতি মামলায় যে বিপুল টাকার লেনদেন হয়েছিল তা কোথায় বিনিয়োগ করা হয়েছে, এবার সেই সমস্ত ফ্যাক্টর মাথায় রাখা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বাংলায় যে রেশন দুর্নীতি ঘটনা সামনে এসেছে তা নিয়ে যে মামলা হয়েছে তার তদন্ত করছে ইডি। এই মামলাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। এছাড়াও রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্তে নেমে বাকিবুর রহমান এবং শংকর আঢ্যকেও গ্রেফতার করা হয়। শুধু তাই নয়, সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের খোঁজেও তল্লাশি চালানো হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ আগে শেখ শাহজাহানের খোঁজে সন্দেশখালিতে অভিযানে যান ইডি-র আধিকারিকেরা। সেখানে তাঁর কোঁজ না পেয়ে শেষমেশ তালা ভাঙতে যায় সিআরপিএফ। এরপরেই শাহজাহান অনুগামীরা ইডি-র আধিকারিকদের উপর চড়াও হয়। এই ঘটনায় আহত হন তিন ইডি আধিকারিক। এই আক্রমণের জেরে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থল ছাড়েন তাঁরা। এরপরেই শেখ শাহজাহানের খোঁজ চালানো শুরু হয়। তবে এখনও পর্যন্ত তাঁর কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি। এদিকে সন্দেশখালির এই ঘটনার পর তোলপাড়া শুরু হয় বঙ্গ রাজনীতিতে। এদিকে অন্তরালে থেকে একাধিকবার জামিনের জন্য আবেদন করলেও এখনও পর্যন্ত শেখ শাহজাহানের কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি। শংকর আঢ্য়কে রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতারের পর আদালতে ইডি জানায়, ৯০টির বেশি ফরেক্সের সঙ্গে তাঁর লেনদেনের যোগাযোগ পাওয়া গিয়েছে। ওই সংস্থাগুলি মারফত ২০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে লেনদেন হয়েছে, এমনই তথ্য আদালতে জানায় ইডি। শুধু তাই নয়, এই বিপুল পরিমাণ অংক লেনদেনে রেশন দুর্নীতির সম্পর্ক থাকতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীদের একাংশ। শুধু তাই নয়, এই গোটা ঘটনায় বারংবার উঠে এসেছে রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নামও।

এদিকে ইডি এবং সিবিআই-কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যবহার করার অভিযোগ করা হচ্ছে তৃণমূলের পক্ষ থেকে। রাজ্য শাসক দলের একাংশের কথায়, ‘শুধুমাত্র ভোট অংকের কথা মাথায় রেখে এই এজেন্সিগুলিকে ব্যবহার করা হচ্ছে।’ যদিও এজেন্সি নিরপেক্ষভাবে নিজেদের কাজ করছে, এমনটাই দাবি গেরুয়া শিবিরের।

তবে এতো কিছুর মাঝে রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় এবার সামনে এল এক নয়া নাম। গোয়েন্দাদের আতস কাচে এবার ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দাস এবং হানিস তোসিবাল। মঙ্গলের সকালেই বিশ্বজিতের সল্টলেকের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। রেশন বণ্টন দুর্নীতির তদন্তে নেমে আধিকারিকদের নজরে আসে ফরেক্স ট্রেন্ডিং-এর বিষয়টি। আর সেই সূত্র ধরেই তদন্তের নতুন দিশা দেখা যায়। মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিশ্বজিতের বাড়িতে চলে তল্লাশি। জানা গিয়েছে, বিশ্বজিৎ দাস ইম্পোর্ট ও এক্সপোর্টের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, সেখানেই এই টাকা ব্যবহার করা হয়েছে। আর সেই সন্দেহের উপর ভিত্তি করেই চালানো হয়েছে এদিনের তল্লাশি। পাশাপাশি তাঁর বাড়ির সামনে রাখা বিলাসবহুল গাড়িতেও নজর গোয়েন্দাদের। সেখানে প্লাস্টিক উদ্ধার করে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে। ইডি সূত্রে খবর, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নথি থাকতে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন।

একইসঙ্গে কৈখালিতে বাকিবুর রহমান ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী হানিস তোসিবালের ফ্লাটে চালানো হচ্ছে অভিযান। ইডি আধিকারিকরা প্রায় দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সেখানে তল্লাশি চালায়। এদিন হানিসের বিরুদ্ধে জীবনকৃষ্ণ সাহার কায়দায় ফোন ছুড়ে ফেলার অভিযোগও উঠেছে।

সূত্রে খবর, বাগুইআটির এক ব্যবসায়ী হানিস তসরিওয়ালের বিলাসবহুল বাড়িতেও এদিন ইডির ৮ সদস্যর একটি টিম পৌঁছয়। অভিযোগ, তাঁদের দেখেই সাততলা থেকে মোবাইল ফোন দু’টি ছুড়ে ফেলে দেন ব্যবসায়ী। যা গিয়ে পড়ে পাশের বাড়িতে। এর মধ্য়ে একটি মোবাইলের ব্যাক কভারে আবার ৫০০ টাকার একটি নোটও রাখা ছিল বলে খবর। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্য়েই ওই দুটি ফোন উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা। আর এই দুটি ফোনে তদন্তে মোড় ঘোরানোর জন্য একাধিক তথ্য থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিনের এই ঘটনার প্রেক্ষিতে উঠে আসছে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জীবনকৃষ্ণ সাহার স্মৃতি। তাঁর বিরুদ্ধেও সিবিআই তল্লাশি চলাকালীন ফোন পুকুরে ছুড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। তবে এই ফোন ছুড়ে ফেলার ঘটনায় জল্পনা শুরু হয়েছে, কেন এই ফোন ছুড়ে দিলেন ওই ব্যবসায়ী তা নিয়েই। প্রশ্ন উঠেছে কোনও তথ্য গোয়েন্দাদের থেকে আড়াল করার জন্যই এই পন্থা কি না সে ব্যাপারেই।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 + six =