চোপড়ার শিশুমৃত্যুর ঘটনায় বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে তৃণমূলের অভিযোগ রাজ্যপালের কাছে

চোপড়ার শিশুমৃত্যুর ঘটনায় এবার লাগল রাজনীতির রঙ। বিএসএফ-এর দিকে সোজাসুজি আঙুল তোলা হল তৃণমূলের তরফ থেকে। মঙ্গলবার দুপুরে তৃণমূলের তরফে এক সাংবাদিক বৈঠক করে কুণাল ঘোষ, ব্রাত্য বসু, শশী পাঁজাও এই চোপড়ার ইস্যুতে সরব হন। এখানেই শেষ নয়, আর এই ইস্যুতেএবার সরাসরি রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের কাছে দু-পাতার এক চিঠিও পাঠাল তৃণমূল। এই চিঠিতেই বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তোলা হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। চিঠি পাঠানোর পাশে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে চাইছে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। এমনকি, চোপড়ার ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কেন নিশ্চুপ আছেন সেই বিষয়েও জবাবদিহি চাওয়া হয়।দলীয় সূত্রে খবর, আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টায় রাজ্যপাল বৈঠকের জন্য সময় দিয়েছেন তৃণমূলকে।

প্রসঙ্গত, উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে সোমবার। মাটি চাপা পড়ে মৃত্যু হয় চার শিশুর। স্থানীয় সূত্রে খবর, সেখানে একটি ড্রেন কাটার কাজ চলছিল। সেই সময়েই আচমকা ধস নেমে মাটি চাপা পড়ে যায় চার শিশু। বিএসএফ জওয়ানরাই বাচ্চাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান, কিন্তু ততক্ষণে চার জনেরই মৃত্যু হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা এও জানিয়েছেন, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তরফেই এই ড্রেন কাটার কাজ চলছিল। এদিকে সোমবারের মর্মান্তিক ঘটনায় শোকপ্রকাশ করা হয় তৃণমূলের তরফ থেকে। এখানেই শেষ নয়, চোপড়ার ঘটনার মর্মান্তিক পরিণতিকে সামনে রেখে গোটা রাজ্য জুড়ে আন্দোলনে নামতেও চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। পাশাপাশি, এই ঘটনায় রাজ্যপাল নির্বিকার থাকার বিষয়টি নিয়েও আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজ্যপাল কেরল সফর কাটছাঁট করে সন্দেশখালি ছুটে গিয়েছেন। কিন্তু, রাজ্যপাল চোপড়ার এই ঘটনায় কোনও মন্তব্য না করায়, ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। এরপরই এই ঘটনাকে সামনে রেখেই রাজ্যপালকে পাঠানো দু’পাতার চিঠিতে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করাহয় তৃণমূলের তরফ থেকে। তৃণমূলের বক্তব্য, ‘বিএসএফ-এর ড্রেন সম্প্রসারণের কাজের সময়েই চার নিষ্পাপ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনও অনুমতি ছাড়াই বিএসএফ-এর নির্দেশে সেখানে বেআইনিভাবে মাটি খুঁড়ে ড্রেন গভীর করা হচ্ছিল।’ আর এই অভিযোগকে সামনে রেখেই চোপড়ার এই ঘটনায় বিএসএফ-এর বিরুদ্ধেই গাফিলতির অভিযোগ তোলা হয়েছে তৃণমূল শিবিরের তরফ থেকে। এমন এক প্রেক্ষিতে রাজ্যপাল বোস যাতে একবার চোপড়ায় গিয়ে এই মর্মান্তিক ঘটনার বাস্তব চিত্র সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন, সেই অনুরোধও করেছে তৃণমূল। সন্দেশখালির অভিযোগ পাওয়ার পর যে রাজ্যপাল তাঁর কেরল সফরে কাঁটছাট করে সন্দেশখালিতে গিয়েছিলেন, সে কথাও উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে। তৃণমূলের বক্তব্য, রাজ্যপাল যেন চোপড়ার ঘটনার ক্ষেত্রেও একই ধরনের সহমর্মিতা দেখান।

উল্লেখ্য, যখন ওই দুর্ঘটনা ঘটে তখন বিএসএফ-এর জওয়ানরাই বাচ্চাদের উদ্ধার করে চোপড়ার দলুয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু সেখানে চিকিৎসক বাচ্চাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। তবে বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে গাফিলতির যে অভিযোগ গ্রামবাসীদের একাংশ তুলছেন, সে বিষয়ে গতকাল উদ্ধারকারী বিএসএফের বক্তব্য ছিল, এখানে তাদের কোনও ভূমিকাই নেই। মানুষ বিপদে পড়েছে শুনে ছুটে আসে তারা। বাচ্চাদের দ্রুততার সঙ্গে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 − one =